সেগুন গাছ (Teak Tree) বৈজ্ঞানিক নাম Tectona grandis একাধিক দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃক্ষ। এর কাঠ শক্ত, দীর্ঘস্থায়ী এবং অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় বিশ্বজুড়ে সেগুন কাঠের চাহিদা সব সময় উঁচুতে থাকে। কাঠের গুণাবলীর পাশাপাশি এর পাতা, শিকড় এবং অন্যান্য অংশেরও আছে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার যা প্রাচীনকাল থেকেই নানা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই আর্টিকেলে আমরা সেগুন গাছের বিস্তারিত বিবরণ, এর উপকারিতা, ব্যবহারিক দিক এবং গাছটি রোপণ ও পরিচর্যার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও হাইব্রিড সেগুন গাছের বৈশিষ্ট্য এবং বাংলাদেশে সেগুনের প্রাপ্তি ও বাণিজ্য নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হবে।
সেগুন গাছের পরিচিতি
সেগুন গাছ হলো বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ও চাহিদাসম্পন্ন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Tectona grandis এবং এটি মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে জন্মায়। বিশেষ করে ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওসে সেগুন গাছের বৃহৎ বনাঞ্চল রয়েছে। বাংলাদেশেও সেগুন গাছের ব্যাপক চাষাবাদ হয় যেখানে বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের জমি সেগুনের জন্য উপযুক্ত।
আর পড়ুুন: অর্জুন গাছের ব্যবহার
সেগুন গাছের গড় উচ্চতা প্রায় ৩০-৪০ মিটার পর্যন্ত হয় এবং এর কান্ডের ব্যাস ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। সেগুন গাছের পাতা বড়, লম্বা এবং পাতার রং গাঢ় সবুজ হয়। পাতা ও শিকড়ের গুণাবলী ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা এ গাছের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সেগুন গাছের বাকলও বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলী বহন করে। এর কাঠ যেমন শক্ত তেমনি এর বাকল এবং অন্যান্য অংশও নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়।
সেগুন গাছের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু হলো উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া। এ কারণে বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে সেগুনের চাষ খুবই সফল হয়েছে। সেগুন গাছ সম্পূর্ণ পরিণত হতে প্রায় ২০-২৫ বছর সময় নেয় তবে এটি চাষের শুরুতেই লাভজনক হতে শুরু করে কারণ এর কাঠের চাহিদা বাজারে সবসময় উচ্চ থাকে। একবার পরিণত হলে সেগুন গাছ দীর্ঘমেয়াদে প্রচুর কাঠ প্রদান করতে সক্ষম হয় যা পরিবেশগত দিক থেকে টেকসই চাষাবাদ নিশ্চিত করে।
সেগুন গাছের উপকারিতা
সেগুন গাছের উপকারিতা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং বহুমুখী। এর কাঠের গুণাবলী ছাড়াও গাছটির বিভিন্ন অংশের ঔষধি ও পরিবেশগত উপকারিতা রয়েছে। এখানে সেগুন গাছের কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
কাঠের গুণাবলী ও ব্যবহার:
সেগুন গাছের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এর কাঠের শক্তি ও টেকসইতা। সেগুন কাঠ অত্যন্ত শক্ত, জল প্রতিরোধী এবং দীর্ঘস্থায়ী। এ কারণে এটি বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, নৌকা এবং অন্যান্য কাঠের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির পানিতে বা নোনাজলে সেগুন কাঠের কোনো ক্ষতি হয় না যা এটি নৌকা ও জাহাজ নির্মাণে উপযুক্ত করে তোলে। এছাড়া ঘরের ফার্নিচার, জানালা, দরজা এবং অন্যান্য কাঠের আসবাব তৈরিতে সেগুন কাঠের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
বাংলাদেশের কাঠ শিল্পে সেগুন কাঠের বিশাল গুরুত্ব রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে সেগুন কাঠের বাজারমূল্য অত্যন্ত উঁচুতে থাকে। যেমন এক ঘনফুট সেগুন কাঠের দাম ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে সেগুন কাঠ আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করাও একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্র যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
পরিবেশগত উপকারিতা:
সেগুন গাছ শুধু কাঠ নয় পরিবেশ রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ গাছটি প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং মাটির উর্বরতা বজায় রাখে। সেগুন গাছের বড় পাতাগুলো মাটিতে পতিত হয়ে পুষ্টি সরবরাহ করে যা অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য উপকারী। এছাড়াও সেগুন গাছ প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং পরিবেশকে শীতল রাখে।
ঔষধি গুণাবলী:
সেগুন গাছের পাতা, শিকড় এবং বাকল ঔষধি গুণাবলী বহন করে। এটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেগুন গাছের পাতার রস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গাছের শিকড় ও বাকলের নির্যাস বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।
সেগুন গাছ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রিসার্চ-বেজড তথ্য
- বৈজ্ঞানিক নাম: সেগুন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Tectona grandis।
- উৎপত্তিস্থল: সেগুন গাছের মূল উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওস।
- কাঠের গুণাবলী: সেগুন কাঠ অত্যন্ত মজবুত, পোকামাকড় প্রতিরোধী এবং নোনা পানি প্রতিরোধী যা এটিকে জাহাজ, নৌকা ও সমুদ্র সংলগ্ন কাঠামো তৈরিতে আদর্শ করে তোলে।
- বৃদ্ধির সময়কাল: সেগুন গাছ বড় হতে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বছর সময় নেয়। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ভালো মানের কাঠ সংগ্রহ করতে ৫০ থেকে ৬০ বছর সময় লাগতে পারে।
- হাইব্রিড সেগুন: হাইব্রিড সেগুন গাছ চাষের ফলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে কাঠ সংগ্রহ সম্ভব হয় যা সাধারণ প্রজাতির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- উদ্ভিজ্জ তেল: সেগুন কাঠে থাকা প্রাকৃতিক তেল এটি পানিরোধী এবং টেকসই করে তোলে যার ফলে এটি আসবাবপত্র তৈরিতে অতি জনপ্রিয়।
- উপযোগী আবহাওয়া: সেগুন গাছ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে এবং এটি সাধারণত ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- পাতা ও ফুল: সেগুন গাছের পাতা বড় প্রায় ৩০-৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। গ্রীষ্মকালে এটি ছোট সাদা ফুল ফোটায়।
- পরিবেশগত উপকারিতা: সেগুন গাছের শিকড় মাটির ক্ষয় রোধে সাহায্য করে এবং এটি ভূমি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- বাণিজ্যিক মূল্য: বাংলাদেশের বাজারে সেগুন কাঠের দাম প্রতি ঘনফুট ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকার মধ্যে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম আরও বেশি হতে পারে।
- রোপণ পদ্ধতি: বর্ষাকাল সেগুন গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় এবং চারার মধ্যে ৩-৪ মিটার দূরত্ব রাখতে হয় যাতে সঠিকভাবে গাছের বৃদ্ধি হয়।
- আধুনিক গবেষণা: গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে সেগুন গাছ দ্রুতবর্ধনশীল এবং এর চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে বিশেষ করে হাইব্রিড প্রজাতির সেগুন কাঠের চাহিদা বাড়ছে।
- উন্নত জাত: সেগুনের কিছু উন্নত জাত যেমন CP-Teak দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ মানের কাঠ সরবরাহ করে যা বনায়নে এবং বাণিজ্যিক চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাতা ও অন্যান্য অংশের ব্যবহার
সেগুন গাছের কাঠের মতো এর পাতা, শিকড় ও বাকলও বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। সেগুন গাছের পাতা বড় এবং পুরু হয় যা ঔষধি গুণাবলী বহন করে। সেগুন পাতার রস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য যেমন অ্যাকনে বা ব্রণ সারাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পাতা দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা হয় যা শরীরের নানা রোগ নিরাময়ে কার্যকরী।
সেগুন গাছের বাকলও প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গাছের শিকড় ও বাকল থেকে তৈরি নির্যাস শারীরিক নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। প্রাচীন কালের আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে সেগুন গাছের শিকড় থেকে তৈরি ওষুধের ব্যাপক ব্যবহার ছিল।
আর পড়ুুন: হিজল গাছ
সেগুন গাছের বৃদ্ধি ও পরিচর্যা
সেগুন গাছের দ্রুত বৃদ্ধি ও পর্যাপ্ত কাঠ উৎপাদনের জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টির প্রয়োজন হয়। সাধারণত সেগুন গাছ সম্পূর্ণ পরিপক্ক হতে ২০-২৫ বছর সময় নেয়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা করলে এটি ১০-১৫ বছরের মধ্যেও কাঠের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
সেগুন গাছ রোপণের জন্য উপযুক্ত জমি:
উপযুক্ত মাটি ও জমি সেগুন গাছের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া সেগুন গাছের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। জমিতে পুষ্টি উপাদানের পর্যাপ্ত সরবরাহ সেগুন গাছের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হাইব্রিড সেগুন গাছ
বর্তমানে প্রচলিত সেগুনের তুলনায় হাইব্রিড সেগুন গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কাঠের গুণমানও উন্নত হয়। হাইব্রিড সেগুন গাছ চাষে সময় ও খরচ কমে তবে কাঠের মান কোনোভাবেই কম নয়।
সেগুন গাছের ব্যবহার
সেগুন গাছের প্রধান ব্যবহার তার কাঠে এবং এটি অত্যন্ত মূল্যবান ও বহুমুখীভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে আসবাবপত্র তৈরিতে সেগুন কাঠের চাহিদা অনেক বেশি। সেগুন কাঠের প্রাকৃতিক রঙ, উচ্চমান এবং স্থায়িত্ব এটিকে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশে ফার্নিচারের জগতে সেগুন কাঠের ব্যবহার অতুলনীয়। সেগুন কাঠের তৈরি ফার্নিচার যেমন খাট, আলমারি, টেবিল, চেয়ার দীর্ঘস্থায়ী এবং শক্তিশালী হওয়ার জন্য অনেক বেশি জনপ্রিয়।
কাঠের প্রাকৃতিক তেল যা এটি দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে সেগুন কাঠের প্রধান গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ফাটে না এবং কোনো প্রকারে বিকৃত হয় না ফলে দীর্ঘ বছর ধরে এটি তার আসল আকৃতি ও গুণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়াও সেগুন কাঠ বৃষ্টির পানি, তাপ ও নোনাজলের প্রতিরোধী হওয়ায় এটি জাহাজ, নৌকা এবং সামুদ্রিক কাঠামো নির্মাণেও ব্যবহৃত হয়। সেগুন কাঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো বাইরের দরজা ও জানালা তৈরিতে কারণ এটি কঠিন আবহাওয়ার প্রভাবকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নির্মাণ কাজে সেগুন কাঠের বিশাল চাহিদা রয়েছে। এতে প্রায় প্রতি ঘনফুট সেগুন কাঠের দাম ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে যা স্থানীয় বাজারের গুণমানের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য আরও বেশি হতে পারে যা বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিতে বিশাল লাভের সুযোগ তৈরি করে।
বাংলাদেশে সেগুন গাছ কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশে সেগুন গাছের প্রধান উৎস হলো চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। এই এলাকাগুলোর মাটি এবং আবহাওয়া সেগুন গাছের জন্য খুবই উপযুক্ত। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও পরিকল্পিত চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলে সেগুন গাছের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এছাড়াও সিলেট এবং ময়মনসিংহের কিছু অংশে সেগুন গাছের চাষাবাদ লক্ষ্য করা যায়। তবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেগুন চাষ সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে এবং এখানকার বনাঞ্চল সেগুন কাঠ উৎপাদনে অবদান রাখছে।
বাণিজ্যিক বাগান ও বনাঞ্চল:
বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সেগুন গাছের বাগান তৈরি করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে সেগুন চাষে বিনিয়োগ করছে। এ ধরনের বাণিজ্যিক বাগান দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে। সেগুন গাছের কাঠের গুণমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর বিশাল চাহিদার কারণে এই চাষ একটি লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
সেগুন গাছের রোপণ পদ্ধতি
সেগুন গাছ রোপণ একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পাওয়া যায়। সেগুন চাষের জন্য প্রথমে সঠিক জমি এবং জলবায়ু নির্বাচন করতে হবে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে সেগুন গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় তাই সঠিক স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিকভাবে সেগুন গাছ রোপণের ধাপসমূহ:
- জমি প্রস্তুতি: প্রথম ধাপে মাটি গভীরভাবে চাষ করতে হবে এবং আগাছা মুক্ত করতে হবে। মাটিতে জৈব সার ও পুষ্টির সংমিশ্রণ প্রয়োজন।
- চারা রোপণ: সেগুন গাছের চারা সাধারণত বর্ষাকালে রোপণ করা হয় কারণ বর্ষার পানি চারার দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিটি গাছের মধ্যে প্রায় ৩ থেকে ৪ মিটার দূরত্ব রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো এবং স্থান পায়।
- পরিচর্যা: রোপণের পর নিয়মিত সেচ দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। শীতকালে গাছের চারার জন্য অতিরিক্ত পরিচর্যা প্রয়োজন কারণ ঠান্ডা আবহাওয়া সেগুন গাছের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।
পুষ্টি সরবরাহ:
সেগুন গাছের দ্রুত বৃদ্ধি এবং কাঠের গুণমান বজায় রাখতে পুষ্টি সরবরাহ করা জরুরি। সাধারণত জৈব সার, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের পুষ্টি উপাদান মাটিতে মিশ্রিত করা হলে গাছ দ্রুত বাড়তে শুরু করে এবং কাঠের মান উন্নত হয়।
আর পড়ুুন: স্ট্রবেরি বীজ বপন পদ্ধতি
সেগুন গাছের বাণিজ্যিক গুরুত্ব
সেগুন গাছ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সেগুন কাঠের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহকৃত সেগুন কাঠ বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সেগুন কাঠের দাম স্থানীয় বাজারের তুলনায় অনেক বেশি যার ফলে বাংলাদেশের কাঠ রপ্তানি শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
বাণিজ্যিকভাবে সেগুন গাছের চাষ অত্যন্ত লাভজনক। সঠিক পরিচর্যা এবং চাষাবাদে একটি সেগুন গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ বছর পর কাঠ উৎপাদন করা যায়। এক ঘনফুট সেগুন কাঠের দাম ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে যা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের ভিত্তিতে ওঠানামা করে। এভাবে সেগুন গাছের বাণিজ্যিক চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে।
পরিবেশগত প্রভাব
সেগুন গাছের পরিবেশগত প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং অন্যান্য উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেগুন গাছের বড় পাতাগুলো মাটিতে পতিত হয়ে পুষ্টি সরবরাহ করে যা অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য উপকারী। এছাড়াও সেগুন গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে যা পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়ক।
পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সেগুন গাছ একটি আদর্শ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে সেগুন গাছের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ এবং বনায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে সেগুন গাছের উপস্থিতি মাটির ক্ষয় রোধ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আর পড়ুুন: উন্নত মানের শসা বীজ
উপসংহার
সেগুন গাছ শুধু একটি শক্তিশালী এবং টেকসই কাঠ সরবরাহকারী গাছ নয় এটি পরিবেশগত ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেগুন গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করা যায় যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশে সেগুন গাছের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে যা দেশের কাঠ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করছে।
সেগুন গাছের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা এবং এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সেগুন চাষকে আরও উৎসাহিত করা প্রয়োজন। একদিকে পরিবেশের সুরক্ষা এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি—এই দুই দিক থেকে সেগুন গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং ভবিষ্যতে সেগুন গাছ সংরক্ষণ এবং ব্যবহারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশের বনাঞ্চল এবং কাঠ শিল্পকে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।