বাঁশ বনাম কাঠ – কোনটি বেশি শক্তিশালী? (বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা)

বাঁশ বনাম কাঠ

বাংলাদেশে নির্মাণ শিল্প ও হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে উপকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশেও প্রাচীনকাল থেকেই বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার চলতি আছে। আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করব বাঁশ বনাম কাঠের বৈশিষ্ট্য ও শক্তির তুলনা। এই তুলনা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার আলোকে করা হবে যাতে পাঠকরা সহজে বুঝতে পারেন কোন পরিস্থিতিতে কোন উপকরণ বেশি উপযোগী। বাঁশ বনাম কাঠ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ব্যবহারিক দিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা দেখব কিভাবে এদের প্রাকৃতিক উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের উন্নয়নশীল শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশে নির্মাণ, আসবাবপত্র ও অন্যান্য কারিগরি ক্ষেত্রে উপকরণের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন বাঁশ বনাম কাঠ ব্যবহারিক সুবিধা ও বৈজ্ঞানিক গুণগত মানের তুলনা।


বাঁশ ও কাঠের পরিচিতি ও ইতিহাস

বাঁশের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

বাঁশ একটি প্রাকৃতিক সবুজ উদ্ভিদ যা দ্রুত বর্ধনশীল। এর বৃদ্ধি গতিকে প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাঁশের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। বাঁশের গঠন নান্দনিক ও শক্তিশালী হওয়ায় এটি অনেক ধরণের কারিগরি কাজে ব্যবহার করা হয়।

বাঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর নমনীয়তা ও টেকসইতা। এটির কোষের বিন্যাস এত সুন্দর যে এটি প্রাকৃতিকভাবে শক্তি শোষণ করতে পারে। বাঁশের প্রাকৃতিক আচ্ছাদন এবং পাতলা ডালপালা এটিকে পরিবেশবান্ধব উপকরণ হিসেবে পরিচিত করে। প্রাচীন কাল থেকেই বাঁশ ব্যবহার করা হয়ে আসছে নানা ধরণের গৃহ নির্মাণ ও কারুশিল্পে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাঁশের টেনসাইল স্ট্রেংথ ও নমনীয়তা কাঠের তুলনায় কিছু ক্ষেত্রে সমান বা উন্নত হতে পারে।

আর পড়ুন: ইনডোর গাছ 

কাঠের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য

কাঠ একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা গাছ থেকে আহরণ করা হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ পাওয়া যায় যা নির্মাণ, আসবাবপত্র ও শিল্পসামগ্রী তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কাঠের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। কাঠের গঠন এবং সৃষ্টিশীলতা এটিকে শিল্প ও স্থাপত্যে একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত করে।

কাঠের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর স্থায়িত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কাঠ বিভিন্ন ধরণের প্রক্রিয়াকরণে সহজে রূপান্তরিত হয় এবং এর টেনসাইল স্ট্রেংথ ও কম্প্রেশন স্ট্রেংথ অনেক ক্ষেত্রে কাঠকে শক্তিশালী করে তোলে। কাঠের ভেতরের সেলুলার গঠন এবং তার আভ্যন্তরীণ বিন্যাস নির্ধারণ করে এর স্থায়িত্ব। বিভিন্ন কাঠের প্রজাতির মধ্যে কিছু প্রজাতি বিশেষভাবে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী।


বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ- বাঁশ বনাম কাঠের শক্তির তুলনা

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাঁশ ও কাঠের শক্তির তুলনা করা হলে আমরা দেখতে পাই দুই উপাদানের মেকানিক্যাল প্রপার্টিজের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

মেকানিক্যাল প্রপার্টিজ

  • টেনসাইল স্ট্রেংথ: বাঁশের টেনসাইল স্ট্রেংথ অনেক ক্ষেত্রে কাঠের সমান হতে পারে। বাঁশের ফাইবার বিন্যাস এমনভাবে সাজানো থাকে যে এটি টানলে শক্তি শোষণ করে। কাঠের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধরনের কাঠের ভেতরে থাকা সেলুলার বিন্যাস ও প্রক্রিয়াকরণের উপর নির্ভর করে টেনসাইল স্ট্রেংথের মাত্রা নির্ধারিত হয়।

  • কম্প্রেশন স্ট্রেংথ: কাঠে কম্প্রেশন স্ট্রেংথ বেশ ভালো থাকে। তবে বাঁশেও এটি ভালো মাত্রায় পাওয়া যায়। কাঠের তুলনায় বাঁশের কোষের বিন্যাস ও আর্কিটেকচার কম্প্রেশন চাপ সামলাতে কিছু ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী।

  • নমনীয়তা: বাঁশের নমনীয়তা এটিকে অনেক ধরণের দুর্যোগজনিত চাপ সহ্য করতে সক্ষম করে। কাঠের তুলনায় বাঁশের নমনীয়তা বেশি হওয়ায় এটি ভূমিকম্প বা বায়ুপ্রবলতার সময় টেকসইতা প্রদান করে।

বাঁশ বনাম কাঠ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

বাঁশের ফাইবার সিস্টেম একটি জটিল নেটওয়ার্কের মতো যা চাপের সময় শক্তি সমানভাবে বিতরণ করে। এর আভ্যন্তরীণ বিন্যাস কাঠের তুলনায় আলাদা হওয়ায় বাঁশ কখনও কখনও কাঠের চেয়ে বেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে বাঁশের অ্যালগোমেট্রিক বিন্যাস কাঠের তুলনায় কম ভাঙার প্রবণতা রাখে। গবেষকরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরিমাপ করেছেন বাঁশের টেনসাইল স্ট্রেংথ ও নমনীয়তার মাত্রা। এই গবেষণাগুলি প্রমাণ করে যে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বাঁশ কাঠের চেয়ে বেশি কার্যকরী হতে পারে।

গবেষণার ফলাফল

একাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গবেষণায় দেখা গেছে বাঁশ ও কাঠের তুলনায় বাঁশের টেনসাইল ও নমনীয়তার হার কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষামূলক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বাঁশের ফাইবার বিন্যাসে প্রাকৃতিক সুদৃঢ়তা বিদ্যমান যা কাঠের তুলনায় কম ভাঙার প্রবণতা সৃষ্টি করে।


প্রাকৃতিক উৎস ও টেকসইতা

প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে বাঁশ ও কাঠ উভয়ই অত্যন্ত মূল্যবান। তবে এদের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও টেকসইতার দিক থেকে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পুনর্নবীকরণযোগ্যতা

বাঁশ একটি দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। এর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পড়া প্রক্রিয়া খুব দ্রুত ঘটে। এক বছরের মধ্যে বাঁশ পুনঃনবীকরণযোগ্যতা অত্যন্ত উচ্চ। এই গুণাবলী এটিকে পরিবেশবান্ধব উপাদান হিসেবে পরিচিত করে।

অন্যদিকে কাঠের ক্ষেত্রে গাছ কাটা ও প্রক্রিয়াকরণ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পুনঃবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। ফলে কাঠের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবেশগতভাবে কম টেকসই হতে পারে।

পরিবেশগত প্রভাব

বাঁশ উৎপাদনের সময় কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট সৃষ্টি করে। এটি পরিবেশের জন্য সহায়ক। বাঁশের ব্যবহার বৃক্ষরোপণের তুলনায় দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। কাঠের ক্ষেত্রে গাছ কাটা পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। পুনঃবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মত দেশ যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরতা বেশি আছে বাঁশ একটি টেকসই বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত। পরিবেশবান্ধব নীতিমালা ও টেকসই উন্নয়নমূলক প্রকল্পে বাঁশের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা

  • বাঁশের ব্যবহার পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে
  • কাঠের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় হতে পারে
  • পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের ব্যবহার দেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক

বাঁশ বনাম কাঠ ব্যবহার ও প্রয়োগ ক্ষেত্র

বাংলাদেশে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক। নিচে উভয় উপাদানের ব্যবহার ক্ষেত্র সমূহ তুলে ধরা হলো।

নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার

বাংলাদেশে বাড়ি নির্মাণ ও বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার প্রচলিত।

  • বাঁশের ব্যবহার: বাঁশ ব্যবহার করা হয় ছোট কাঠামো থেকে শুরু করে বড় নির্মাণ প্রকল্প পর্যন্ত। গ্রামাঞ্চলে বাঁশের ব্যবহার বাড়তি দেখা যায়। বাঁশের নমনীয়তা ও টেকসইতা ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। কিছু আধুনিক নির্মাণ প্রকল্পেও বাঁশকে অন্তর্ভুক্ত করে পরিবেশবান্ধব নকশা তৈরি করা হয়েছে।

  • কাঠের ব্যবহার: কাঠের ব্যবহার মূলত আসবাবপত্র ও অভ্যন্তরীণ সজ্জায় দেখা যায়। নির্মাণ শিল্পে কাঠের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। কাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব বিভিন্ন স্থাপত্যের নকশায় অনন্যতা সৃষ্টি করে। গৃহ নির্মাণ থেকে শুরু করে বহুমুখী শিল্পসামগ্রী তৈরিতে কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম।

অন্যান্য শিল্প ও কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যবহার

বাঁশ ও কাঠ উভয়ই বিভিন্ন শিল্প ও কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

  • হস্তশিল্প ও আসবাবপত্র: বাঁশ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র ও হস্তশিল্প বাংলাদেশের প্রচলিত শিল্প হিসেবে পরিচিত। কাঠের আসবাবপত্রের নকশা ও স্থায়িত্ব দীর্ঘদিনের ব্যবহার নিশ্চিত করে।

  • গৃহস্থালী ব্যবহার: দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার দেখা যায়। যেমনঃ রান্নাঘরের সিঁড়ি, ঘরের আসবাবপত্র ও আভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় উভয়ের ব্যবহার রয়েছে।

  • শিল্প ও কারিগরি উদ্ভাবন: আধুনিক কারিগররা বাঁশ ও কাঠের সংমিশ্রণে নতুন নতুন নকশা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়িত করছেন। এ ধরনের উদ্ভাবনী প্রকল্পে বাঁশের নমনীয়তা ও কাঠের স্থায়িত্ব একসাথে কাজ করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

বাঁশ বনাম কাঠ ব্যবহার


আর্থিক বিশ্লেষণ ও বাজার পরিস্থিতি

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উপকরণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাঁশ ও কাঠের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নিম্নে তুলে ধরা হলো।

উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ

  • বাঁশ: বাঁশের উৎপাদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম খরচে সম্পন্ন করা যায়। বাঁশ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও পুনঃনবীকরণযোগ্য হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম থাকে। রক্ষণাবেক্ষণেও বাঁশ তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সস্তা।

  • কাঠ: কাঠের ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল হতে পারে। গাছ কাটার পর পুনঃবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। কাঠের প্রক্রিয়াকরণে খরচ বেশি পড়ে এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ যোগ হতে পারে।

বাজারে প্রাপ্যতা ও বাণিজ্যিক প্রবণতা

বাংলাদেশে বাঁশ ও কাঠ উভয়েরই বাজারে চাহিদা রয়েছে।

  • বাঁশ: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাঁশের প্রচুর উৎপাদন ও সহজলভ্যতা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাঁশের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ প্রকল্প ও হস্তশিল্পে বাঁশের ব্যবহার বাড়ানোর ফলে এর বাজার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

  • কাঠ: কাঠের বাজার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন প্রকার কাঠের চাহিদা শিল্প, আসবাবপত্র ও নির্মাণের জন্য বজায় আছে। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে কাঠের বাজারে কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে।

ভবিষ্যতের বাজার প্রবণতা

  • বাজারে বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে কারন পরিবেশবান্ধবতা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি অনুগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • কাঠের ক্ষেত্রে উৎস সীমিত থাকায় এবং পুনঃনবীকরণে সময় লাগায় ভবিষ্যতে বাঁশের ব্যবহার আরও বাড়তে পারে
  • বিনিয়োগকারীরা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উপকরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন যা বাঁশকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে

আর পড়ুন: বারান্দায় লাগানোর গাছ 


প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে নির্মাণ ও শিল্পে নতুন নতুন সমাধান এসেছে যা বাঁশ ও কাঠের ব্যবহারকে আরও কার্যকরী করে তুলছে।

উদ্ভাবনী সমাধান ও গবেষণা

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায় বাঁশ ও কাঠের মিশ্রণে নতুন নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন চলছে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে বাঁশের সাথে কাঠের সমন্বয় করলে এমন উপকরণ তৈরি করা যায় যা উভয়ের গুণাবলী বহন করে। এই ধরনের সমন্বয়ে নির্মিত উপকরণ পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ভবিষ্যতে নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে।

নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাঁশের প্রক্রিয়াকরণে উন্নতি আনা হচ্ছে। যেমনঃ বাঁশকে প্রক্রিয়াজাত করে আঠালো প্যানেল, ইন্সুলেশন বোর্ড ও কম্পোজিট উপকরণ তৈরির কাজ চলছে। এগুলো কাঠের পরিবর্তে বা তার সাথে মিলিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিকে নজর বাড়ানোর প্রয়াস চলছে। সরকারী ও বেসরকারী খাতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প শুরু হয়েছে।

  • স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি বাঁশ ও কাঠ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে
  • কিছু সরকারি উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ উপকরণ তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে
  • স্থানীয় কারিগর ও শিল্পীরা নতুন নতুন নকশা ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ শিল্পে বিপ্লব আনতে পারে

ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প ও শিল্প উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ ও কাঠের ব্যবহার নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়

  • গ্রামের ছোট ছোট প্রকল্পে বাঁশের ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক
  • শহরের নির্মাণ প্রকল্পে কাঠের ব্যবহার ঐতিহ্যগত ও প্রমাণিত
  • কিছু নির্মাণ প্রকল্পে বাঁশ ও কাঠের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে উদ্ভাবনী নকশা বাস্তবায়িত হয়েছে
  • ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন বাঁশের নমনীয়তা ও পরিবেশবান্ধব গুণাবলী তাদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধাজনক

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা প্রায় একমত যে বাঁশ ও কাঠের তুলনায় উভয়েরই নিজস্ব বিশেষ গুণ রয়েছে

  • প্রকৌশলী ও নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা বাঁশের নমনীয়তা ও টেকসইতা প্রশংসা করেছেন
  • গবেষকরা বলছেন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বাঁশ কাঠের চেয়ে বেশি কার্যকরী হতে পারে
  • পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বাঁশের দ্রুত বৃদ্ধি ও পুনর্নবীকরণযোগ্যতার দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন
  • শিল্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বাঁশ ও কাঠের সংমিশ্রণে উদ্ভাবনী সমাধান ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে

বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার ও গবেষণার ফলাফল থেকে এটাই বোঝা যায় যে

  • বাঁশ ও কাঠের ব্যবহারে নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত
  • উভয় উপকরণেই কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে
  • নির্দিষ্ট প্রয়োজনে সঠিক উপকরণ নির্বাচন করলে নির্মাণ ও শিল্পের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়

আর পড়ুন: কাঠের ফার্নিচারের যত্ন 


উপসংহার – বাঁশ বনাম কাঠ

আজকের আলোচনায় আমরা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেছি বাঁশ ও কাঠের বৈশিষ্ট্য
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থেকে বোঝা গেছে বাঁশের নমনীয়তা ও টেকসইতা কিছু ক্ষেত্রে কাঠের চেয়ে উন্নত হতে পারে
প্রাকৃতিক উৎস ও টেকসইতার দিক থেকে বাঁশ পরিবেশবান্ধব ও দ্রুত পুনর্নবীকরণযোগ্য
কাঠের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ব্যবহার ও স্থায়িত্ব রয়েছে তবে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পুনঃবৃদ্ধিতে সময় ও ব্যয় বেশি
নির্মাণ শিল্প থেকে শুরু করে আসবাবপত্র ও কারিগরি শিল্পে উভয় উপাদানের ব্যবহার প্রমাণ করে যে নির্দিষ্ট প্রয়োজনে সঠিক উপকরণ নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *