ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠ কোনটি – সেরা কাঠের নির্বাচন

ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠ

বাংলাদেশে ফার্নিচার প্রতিদিনের জীবনের অপরিহার্য অংশ। ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ফার্নিচার ঘরের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফার্নিচারের জন্য সঠিক কাঠ নির্বাচন করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাঠের গুণমান ফার্নিচারের স্থায়িত্ব, নকশা এবং চূড়ান্ত সৌন্দর্যের ওপর প্রভাব ফেলে। কাঠের বৈচিত্র্য এবং বিভিন্ন কাঠের বিভিন্ন গুণাবলী বুঝে নেওয়া তাই অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে আমরা ফার্নিচারের জন্য কোন কাঠ ভালো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে যাচ্ছি।

ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠের নির্বাচন করার আগে কাঠের স্থায়িত্ব, রঙ, শক্তি এবং পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে। এই আর্টিকেলে আমরা এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করব। আপনার ফার্নিচারের জন্য সঠিক কাঠ নির্বাচন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলী বিবেচনা করতে হবে যা এই গাইডে আলোচনা করা হবে।

কাঠের ধরণ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাঠের মধ্যে সেগুন, মেহগনি, গামারি এবং শিমুল কাঠ বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি কাঠেরই আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়।

  • সেগুন কাঠ (Teak Wood): সেগুন কাঠকে ফার্নিচারের জন্য সবচেয়ে মানসম্পন্ন কাঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শক্তিশালী, টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। সেগুন কাঠ পোকামাকড় ও ফাঙ্গাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম যা এর স্থায়িত্বের অন্যতম কারণ। এর প্রাকৃতিক তেল কাঠকে জল প্রতিরোধী করে তোলে ফলে বাইরের ফার্নিচারেও এটি ব্যবহার করা যায়। সেগুন কাঠের রঙ সাধারণত সোনালি বা বাদামি হয় যা ফার্নিচারকে একটি অভিজাত লুক দেয়।
  • মেহগনি কাঠ (Mahogany Wood): মেহগনি কাঠ তার গাঢ় লালচে রঙ এবং মসৃণ ফিনিশের জন্য জনপ্রিয়। এই কাঠও খুবই টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। মেহগনি কাঠ মূলত অভ্যন্তরীণ আসবাবের জন্য ব্যবহৃত হয় বিশেষত খাট, টেবিল এবং দরজা তৈরিতে। এর মসৃণতা ও শক্তিশালী গঠন এটিকে একটি চমৎকার কাঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেগুন কাঠের তুলনায় মেহগনি তুলনামূলক সস্তা তাই এটি মধ্যবিত্ত ফার্নিচারের জন্য জনপ্রিয়।
  • গামারি কাঠ (Gamar Wood): গামারি কাঠ বাংলাদেশের অন্যতম প্রচলিত কাঠের মধ্যে একটি। এটি হালকা ধরনের কাঠ হলেও বেশ শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী। এর স্বাভাবিক রঙ হালকা বাদামি যা বিভিন্ন ফার্নিচারের জন্য উপযুক্ত। গামারি কাঠের পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হলেও এটি ফার্নিচার তৈরির ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • শিমুল কাঠ (Simal Wood): শিমুল কাঠ হালকা এবং তুলনামূলকভাবে কম দামি কাঠ হিসেবে পরিচিত। এটি সাধারণত অস্থায়ী ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শিমুল কাঠের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুবই হালকা এবং সহজেই কাজ করা যায়। তবে এর পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব সেগুন বা মেহগনি কাঠের তুলনায় কম।
  • অন্যান্য দেশীয় কাঠ: বাংলাদেশে অন্যান্য অনেক দেশীয় কাঠও পাওয়া যায় যেমন—আকাসিয়া, বাবলা ও বেত কাঠ। এই কাঠগুলো বিশেষত স্থানীয় বাজারের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সেগুন বা মেহগনি কাঠের তুলনায় কম দামি। স্থানীয় বাজারে এসব কাঠের ব্যবহারও বেশ জনপ্রিয়।

আর পড়ুন:সেগুন কাঠের দাম ২০২৪ 

ফার্নিচারের জন্য কোন কাঠ ভালো এবং কেন

ফার্নিচারের ধরন এবং কাঠের ব্যবহার উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে সঠিক কাঠ নির্বাচন করা হয়। ঘরের আসবাবের জন্য, অফিস ফার্নিচার অথবা বাহিরের ফার্নিচারের জন্য আলাদা আলাদা কাঠ ব্যবহার করা উচিত।

ঘরের আসবাবের জন্য; ঘরের ফার্নিচারের জন্য সেগুন এবং মেহগনি কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে ভালো। এই দুই ধরনের কাঠ টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী যা ঘরের খাট, আলমারি, ডাইনিং টেবিল এবং সোফা তৈরির জন্য আদর্শ। মেহগনি কাঠের গাঢ় রঙ ঘরের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে যেখানে সেগুন কাঠের সোনালি রঙ এবং টেকসই গঠন দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

অফিস ফার্নিচারের জন্য: অফিসের ফার্নিচারগুলোর জন্য কাঠের ক্ষেত্রে সাধারণত মেহগনি এবং গামারি কাঠ ব্যবহার করা হয়। অফিসের টেবিল, চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবের জন্য মেহগনি কাঠ বেশ মানানসই কারণ এটি বেশ টেকসই ও শক্ত। এছাড়া গামারি কাঠ হালকা ও মসৃণ হওয়ায় এটি সহজেই অফিসের ডেকোরের সঙ্গে মিশে যায়।

বাহিরের ফার্নিচারের জন্য; বাহিরের পরিবেশের জন্য সেগুন কাঠ সবচেয়ে উপযোগী। এর প্রাকৃতিক তেল কাঠকে জল এবং আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করে যা বাইরের ফার্নিচারের জন্য অপরিহার্য। টেবিল, চেয়ার এবং গার্ডেন ফার্নিচারের জন্য সেগুন কাঠ দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও ভালো থাকে।

ভালো কাঠ চেনার উপায়

ভালো কাঠ চেনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ফার্নিচারের ক্ষেত্রে। নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায়ে ভালো কাঠ চেনা যায়:

  • কাঠের শক্তি এবং স্থায়িত্ব: একটি ভালো কাঠের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার শক্তি। ফার্নিচারের জন্য ব্যবহৃত কাঠ যদি যথেষ্ট শক্ত না হয় তবে তা দ্রুত ভেঙে যেতে পারে। সেগুন এবং মেহগনি কাঠের মতো শক্ত কাঠ ফার্নিচারের জন্য সর্বোত্তম। কাঠের ঘনত্বও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘন কাঠ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর স্থায়িত্বও বেশি হয়।
  • কাঠের রঙ ও গঠন: ভালো কাঠের রঙ ও গঠন সাধারণত একটানা এবং মসৃণ হয়। কাঠে কোনো ফাটল বা দাগ থাকলে তা ভালো কাঠের চিহ্ন নয়। কাঠের প্রাকৃতিক রঙ এবং এর ওপরের স্তর মসৃণ হলে সেটি ভালো কাঠের চিহ্ন বহন করে।
  • পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা: ফার্নিচারের জন্য ব্যবহৃত কাঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতা। কিছু কাঠ প্রাকৃতিকভাবেই পোকামাকড় প্রতিরোধে সক্ষম। সেগুন কাঠ পোকামাকড় ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধে বিশেষ দক্ষ যা এটিকে দীর্ঘস্থায়ী ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য করে তোলে।

ফার্নিচারের বিভিন্ন ধরনের কাঠের তুলনা

ফার্নিচারের জন্য সেগুন এবং মেহগনি কাঠ খুবই জনপ্রিয়। তাদের মধ্যে পার্থক্য এবং গুণগত তুলনা নিচে দেওয়া হলো:

  • সেগুন বনাম মেহগনি: সেগুন কাঠ অত্যন্ত টেকসই এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও দীর্ঘস্থায়ী। এটি জলরোধী এবং পোকামাকড় প্রতিরোধী। মেহগনি কাঠের রঙ গাঢ় এবং মসৃণ তবে এটি আর্দ্র আবহাওয়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবুও মেহগনি কাঠের মসৃণতা ও নকশা অনেকের কাছে আকর্ষণীয়।
  • গামারি বনাম শিমুল: গামারি কাঠ হালকা ও কম দামী হলেও এটি বেশ শক্তিশালী। শিমুল কাঠ তুলনামূলকভাবে নরম এবং স্থায়িত্ব কম। তাই অস্থায়ী ফার্নিচারের জন্য শিমুল কাঠ ব্যবহৃত হলেও দীর্ঘস্থায়ী ফার্নিচারের জন্য গামারি কাঠ উত্তম।

কোন কাঠের খাট ভালো -ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠ

খাটের জন্য সবচেয়ে ভালো কাঠ নির্বাচনের সময় এর শক্তি, স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সেগুন এবং মেহগনি কাঠ খাট তৈরিতে সবচেয়ে মানানসই।

  • ঘরের খাটের জন্য সেরা কাঠ: সেগুন কাঠের খাট সবচেয়ে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী। এর প্রাকৃতিক তেল কাঠকে ফাঙ্গাস এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। মেহগনি কাঠের খাটও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত এর মসৃণ ফিনিশিং এবং গাঢ় রঙের জন্য।
  • খাটের স্থায়িত্ব এবং নকশা: খাটের স্থায়িত্ব নির্ভর করে কাঠের মানের ওপর। সেগুন কাঠের খাট শতাধিক বছর টিকে থাকে এবং তার সৌন্দর্যও বজায় রাখে। মেহগনি কাঠের খাট কিছুটা কম স্থায়ী হলেও এর সৌন্দর্য ও নকশা আধুনিক ঘরের জন্য বেশ মানানসই।

পরিবেশবান্ধব কাঠের বিকল্প – ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠ কোনটি

বর্তমান সময়ে ফার্নিচার নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বন উজাড় রোধ এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে পরিবেশবান্ধব কাঠের বিকল্প ব্যবহার করা হচ্ছে। এইসব বিকল্প পণ্য পরিবেশকে সুরক্ষিত রেখে কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

  • টেকসই বনায়ন থেকে কাঠ: বনায়নের মাধ্যমে সংগ্রহ করা কাঠ পরিবেশের ক্ষতি না করে সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন টেকসই বনায়নের মাধ্যমে কাঠ সংগ্রহ করা হয় যেখানে বন থেকে কাঠ কাটার পর পুনরায় গাছ লাগানো হয়। এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে কাঠের ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে না। টেকসই বনায়ন থেকে উৎপন্ন সেগুন, মেহগনি এবং অন্যান্য কাঠগুলো ফার্নিচারের জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে।
  • পুনর্ব্যবহৃত কাঠের ফার্নিচার: পুরনো কাঠের পুনর্ব্যবহার বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরনো বিল্ডিং, জাহাজ বা অন্যান্য কাঠের নির্মাণ সামগ্রী থেকে সংগ্রহ করা কাঠ পুনরায় প্রক্রিয়াকরণ করে নতুন ফার্নিচার তৈরি করা হয়। এই পুনর্ব্যবহৃত কাঠের মান ভালো এবং পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এটি ফার্নিচারের ক্ষেত্রে একটি আদর্শ বিকল্প। এ ধরনের কাঠের ফার্নিচার দীর্ঘস্থায়ী এবং দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে।

আর পড়ুন:অ্যালোভেরা গাছের পরিচর্যা ও ফলন 

কাঠের ফিনিশিং এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া

কাঠের ফার্নিচারের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য ফিনিশিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিনিশিং কাঠের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে। সঠিক ফিনিশিং ফার্নিচারের জীবনীশক্তি বাড়িয়ে তোলে এবং এটিকে নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে।

  • ফিনিশিংয়ের গুরুত্ব: ফিনিশিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঠের ওপরে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি করা হয় যা কাঠকে ধুলাবালি, আর্দ্রতা এবং পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। এতে কাঠের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ফার্নিচার অনেক বছর টিকে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ফিনিশিং যেমন—পলিশিং, ল্যাকারের প্রয়োগ এবং অয়েলিং কাঠের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
  • কাঠের যত্ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ: ফার্নিচার দীর্ঘ সময় টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিতভাবে কাঠের যত্ন নিতে হবে। কাঠের ফার্নিচারকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করা, আর্দ্রতা মুক্ত রাখা এবং সময়মত পলিশ বা ফিনিশিং করা ফার্নিচারকে দীর্ঘস্থায়ী রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঠের ওপরে মোমের প্রলেপ ব্যবহার করলেও এর স্থায়িত্ব বাড়ে।

বাংলাদেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি এবং কাঠের ব্যবহার

বাংলাদেশে ফার্নিচার শিল্প একটি দ্রুত বিকাশমান খাত। ঘরোয়া বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে মূলত দেশীয় কাঠ এবং আমদানি করা কাঠ ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সেগুন, মেহগনি, গামারি এবং শিমুল কাঠ বাংলাদেশি ফার্নিচারের মান বাড়াতে সাহায্য করে।

  • বাংলাদেশের ফার্নিচার বাজারের বিবরণ: বাংলাদেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি ঘরোয়া এবং বাণিজ্যিক ফার্নিচার উভয় ক্ষেত্রেই বিশাল বাজার দখল করে আছে। সাভার, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে বৃহৎ ফার্নিচার কারখানাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেখানে দেশীয় এবং আমদানি করা কাঠ ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি গুণগত মানের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও অবস্থান তৈরী করছে।
  • স্থানীয় বনজ সম্পদের ব্যবহার: বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানীয় বনজ সম্পদ থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয় যা স্থানীয় ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল থেকে আসা কাঠগুলো ফার্নিচার নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। টেকসই বনায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাঠ সংগ্রহের দিকে ধীরে ধীরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যা পরিবেশ রক্ষা করেও কাঠের চাহিদা পূরণ করছে।

কাঠের মূল্যের সাথে ফার্নিচারের মানের সম্পর্ক

কাঠের মূল্যের সাথে ফার্নিচারের মানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একটি ফার্নিচারের মান মূলত নির্ভর করে কাঠের গুণগত মান এবং কাঠের ফিনিশিংয়ের ওপর।

  • কাঠের মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ: কাঠের মান যত ভালো দামও তত বেশি হয়। সেগুন কাঠ মেহগনি কাঠের মতো উচ্চ মানের কাঠের ফার্নিচার অন্যান্য কাঠের তুলনায় অনেক বেশি দামি হয়। উচ্চমানের কাঠ যেমন টেকসই হয় তেমনই দীর্ঘস্থায়ী হয় যা একটি বড় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অন্যদিকে গামারি বা শিমুল কাঠের মতো তুলনামূলক সস্তা কাঠের ফার্নিচার অল্পদিনেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • ফার্নিচার কেনার সময় কীভাবে কাঠ নির্বাচন করবেন: ফার্নিচার কেনার সময় কাঠের মান বিচার করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত কাঠের শক্তি, স্থায়িত্ব এবং ফিনিশিং সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর কিনতে হবে। অনেক সময় কাঠের ভেতরের দিকটি নরম বা ক্ষতিগ্রস্ত থাকতে পারে, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাই ফার্নিচার কেনার সময় দোকানের সার্টিফিকেট দেখে নেওয়া ভালো।

কাঠের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য উপকরণ

কাঠের পাশাপাশি বর্তমানে ফার্নিচার তৈরিতে অন্যান্য বিকল্প উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে যা কাঠের চেয়ে সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়। এসব উপকরণ যেমন—MDF (Medium Density Fiberboard), প্লাইউড এবং ল্যামিনেট।

  • MDF, প্লাইউড এবং ল্যামিনেট: MDF একটি প্রসেসড উপাদান যা কাঠের তুকরো বা বর্জ্যকে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি করা হয়। এটি কাঠের চেয়ে সস্তা এবং প্রায়শই ঘরের ফার্নিচারে ব্যবহৃত হয়। প্লাইউড হলো পাতলা কাঠের স্তরের সাথে আঠা দিয়ে চেপে তৈরি করা হয়। ল্যামিনেট কাঠের একটি প্রলেপ যা সহজে ঘরের আসবাবের ওপর বসানো যায়। এই উপকরণগুলো ফার্নিচার তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কারণ এগুলো কম ব্যয়বহুল এবং ব্যবহার সহজ।
  • ই উপকরণগুলোর সুবিধা এবং অসুবিধা: MDF, প্লাইউড এবং ল্যামিনেটের সুবিধা হলো এগুলো সস্তা এবং হালকা তাই এগুলো সহজে বহনযোগ্য। তবে কাঠের মতো এগুলো দীর্ঘস্থায়ী নয় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাঠের চেয়ে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি। তবুও যারা সস্তায় ফার্নিচার কিনতে চান তাদের জন্য এই উপকরণগুলো একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

আর পড়ুন:ক্রিকেট ব্যাট কোন কাঠ দিয়ে তৈরি

উপসংহার – ফার্নিচারের জন্য ভালো কাঠ

কাঠের ফার্নিচার তার সৌন্দর্য এবং স্থায়িত্বের জন্য চিরকালই জনপ্রিয়। সঠিক কাঠ নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাঠের গুণগত মানই ফার্নিচারের স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য নির্ধারণ করে। সেগুন এবং মেহগনি কাঠ ফার্নিচারের জন্য সবচেয়ে মানসম্পন্ন কাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে যারা কম খরচে ফার্নিচার কিনতে চান তাদের জন্য গামারি বা শিমুল কাঠ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

ফার্নিচার কেনার সময় কাঠের মান পরীক্ষা করা এবং দীর্ঘস্থায়ী ফার্নিচার কেনার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। যারা পরিবেশ সচেতন তারা টেকসই বনায়ন থেকে সংগৃহীত বা পুনর্ব্যবহৃত কাঠ ব্যবহার করতে পারেন। সঠিক কাঠ নির্বাচন আপনার ফার্নিচারকে দীর্ঘদিন ধরে আকর্ষণীয় এবং কার্যকরী রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *