কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা নাম, বৈশিষ্ট্য, দাম এবং ব্যবহারের নিয়ম

কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা

কাঠের কাজের ক্ষেত্রে আঠা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকরণ। বাড়ি তৈরির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে কাঠের ছোটখাটো মেরামত পর্যন্ত সঠিক আঠা ব্যবহার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সঠিক আঠা ছাড়া কাঠের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে জোড়া লাগানো কঠিন হয়ে পড়ে। কাঠের জোড়গুলো শক্তিশালী ও স্থায়ী করতে আঠার ব্যবহার অপরিহার্য। বিশেষত যখন বড় কাঠের প্যানেল বা আসবাবপত্র তৈরি হয় তখন কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের কাঠের শিল্প এবং সাধারণ বাসাবাড়ির কাঠের কাজের ক্ষেত্রে সঠিক আঠা নির্বাচন করার গুরুত্ব অনেক বেশি। সঠিকভাবে আঠা ব্যবহারের মাধ্যমে কাঠের জোড় শক্ত হয় যা দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। কিন্তু বাজারে বিভিন্ন ধরনের আঠা পাওয়া যায়, তাই সঠিক পণ্যটি বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ কাঠ সংরক্ষণের মূলনীতি 

 কাঠ জোড়া লাগানোর আঠার বিভিন্ন প্রকার

কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত আঠার ধরন একাধিক। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের আঠা ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি সাধারণ ধরনের আঠা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

পিভিএ আঠা (PVA Glue):

  • পিভিএ আঠা যা “সাদা আঠা” বা “কাঠের আঠা” নামে পরিচিত। কাঠের কাজের জন্য সবচেয়ে সাধারণ ও জনপ্রিয় আঠা। এই আঠা বেশিরভাগ ইনডোর প্রজেক্টের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণ কাঠের আসবাবপত্র তৈরিতে এটি প্রচলিত। পিভিএ আঠা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং একবার শুকিয়ে গেলে একটি শক্তিশালী জোড় তৈরি করে।
  • দাম : বাংলাদেশে পিভিএ আঠার দাম সাধারণত ১০০-৫০০ টাকা আকার ও ব্র্যান্ডের উপর নির্ভর করে।

এপোক্সি আঠা (Epoxy Glue):

  • এপোক্সি আঠা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বহুমুখী। এটি কাঠ, মেটাল, প্লাস্টিক এমনকি কাচের কাজেও ব্যবহৃত হয়। দুটি উপাদান মিশিয়ে এই আঠা প্রস্তুত করতে হয় এবং এটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কাঠের কাজের জন্য আদর্শ। সাধারণত এক্সটেরিয়র কাঠের কাজ বা যেখানে পানির সংস্পর্শে কাঠ আসে সেখানে এপোক্সি আঠা ব্যবহৃত হয়।
  • দাম : এপোক্সি আঠার মূল্য প্রতি ১০০ মিলি ৩০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ব্র্যান্ড এবং মানের ওপর নির্ভর করে।

পলিউরেথেন আঠা (Polyurethane Glue):

  • পলিউরেথেন আঠা এক ধরনের শক্তিশালী আঠা যা ইনডোর এবং আউটডোর উভয় কাঠের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি পানির সংস্পর্শে আসলেও শক্তিশালী থাকে এবং এটি বহিরাগত কাঠের প্রজেক্ট যেমন দরজা বা জানালার জন্য আদর্শ। এর বড় সুবিধা হলো এটি আর্দ্র পরিবেশেও ভালোভাবে কাজ করে।
  • দাম : বাংলাদেশে পলিউরেথেন আঠার দাম সাধারণত ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

সুপার গ্লু (Cyanoacrylate Glue):

  • সুপার গ্লু দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং খুব ছোট ও সূক্ষ্ম কাঠের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত মেরামতের কাজে এই আঠা বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি কাঠের ছোট ছোট টুকরা জোড়া লাগানোর জন্য আদর্শ তবে বড় কাঠের প্রজেক্টের জন্য এটি যথাযথ নয়।
  • দাম : সুপার গ্লু সাধারণত ৫০-২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় যা ছোট প্যাকেজে বিক্রি হয়।

কন্টাক্ট সিমেন্ট (Contact Cement):

  • কন্টাক্ট সিমেন্ট এক ধরনের বিশেষ আঠা যা প্রধানত কাঠের পৃষ্ঠে লেমিনেট বা ফ্ল্যাট কাঠের স্তর চেপে বসানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ইনস্ট্যান্ট বন্ড তৈরি করে এবং বড় কাঠের প্লেট বা বোর্ড লাগানোর জন্য খুব কার্যকর।
  • দাম :কন্টাক্ট সিমেন্টের দাম সাধারণত ২০০-৬০০ টাকা পরিমাণ ও ব্র্যান্ড অনুযায়ী ভিন্ন হয়।

কাঠ জোড়া লাগানোর আঠার নাম ও ব্র্যান্ড

বাংলাদেশে কাঠের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আঠার ব্র্যান্ড পাওয়া যায় যার প্রতিটিই নির্দিষ্ট কাজের জন্য উপযোগী। নিচে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের তালিকা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

Fevicol :

  • Fevicol হল বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড। এটি পিভিএ ভিত্তিক আঠা এবং সাধারণ কাঠের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। Fevicol প্যাকেট আকারে পাওয়া যায় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী এবং শক্তিশালী বন্ডিং সরবরাহ করে।
  • দাম: ১০০-৫০০ টাকা, পরিমাণ অনুযায়ী।

 Gorilla Glue:

  • Gorilla Glue হলো একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী পলিউরেথেন আঠা। এটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কাঠের প্রজেক্ট এবং আউটডোর কাঠের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। পানি এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে এই আঠার।
  • দাম: ৫০০-১০০০ টাকা।

Loctite:

  • Loctite মূলত সুপার গ্লু এবং এপোক্সি আঠা উৎপাদন করে। এই ব্র্যান্ডটি মেরামতের কাজ এবং ছোটখাটো কাঠের প্রজেক্টের জন্য আদর্শ। দ্রুত বন্ডিং এর জন্য Loctite সুপার গ্লু বেশ প্রসিদ্ধ।
  • দাম: ১৫০-৫০০ টাকা।

Elmer’s:

  • Elmer’s একটি জনপ্রিয় পিভিএ ভিত্তিক আঠা যা ইন্টেরিয়র কাঠের কাজ এবং ছোটখাটো প্রজেক্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি নিরাপদ এবং পরিবেশ বান্ধব।
  • দাম: ২০০-৬০০ টাকা।

 Sika:

  • Sika মূলত কনস্ট্রাকশন এবং কাঠের কাজের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আঠা সরবরাহ করে। এটির এপোক্সি এবং পলিউরেথেন আঠা বাংলাদেশে পাওয়া যায় এবং কাঠের শক্তিশালী বন্ডিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • দাম: ৫০০-১২০০ টাকা।

কাঠ জোড়া লাগানোর নিয়মাবলী

সঠিকভাবে কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত যাতে কাঠের সংযুক্তি স্থায়ী এবং মজবুত হয়। এখানে কাঠের জোড় লাগানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলি দেওয়া হলো:

  •  কাঠের পৃষ্ঠ প্রস্তুতি: কাঠের দুই টুকরো জোড়া লাগানোর আগে সেগুলোর পৃষ্ঠ পরিষ্কার এবং মসৃণ করতে হবে। ধুলা, ময়লা বা পুরোনো আঠা পরিষ্কার না করলে বন্ডিং দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
  •  সঠিক পরিমাণ আঠা প্রয়োগ: আঠা সঠিক পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে। অত্যধিক আঠা ব্যবহার করলে কাঠের পৃষ্ঠে অতিরিক্ত আঠা শুকানোর সময় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আবার কম আঠা ব্যবহার করলে কাঠের সংযোগ যথেষ্ট শক্তিশালী হবে না।
  •  দুই টুকরো কাঠকে চাপ দিয়ে ধরে রাখা: আঠা লাগানোর পর দুই টুকরো কাঠকে একত্রে চাপ দিয়ে ধরে রাখা জরুরি। বিশেষ করে এপোক্সি বা পলিউরেথেন আঠা ব্যবহারের সময় এটি প্রয়োজন। ক্ল্যাম্পের মাধ্যমে কাঠের টুকরোগুলো ঠিকঠাকভাবে ধরে রাখতে হয়।
  •  নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শুকাতে দেওয়া: আঠা প্রয়োগের পর এটি ভালোভাবে শুকাতে দেওয়া উচিত। প্রতিটি আঠার শুকানোর সময় ভিন্ন হতে পারে তাই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা প্রয়োজন। সাধারণত পিভিএ আঠা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শুকিয়ে যায়।

আঠার উপকরণ এবং রাসায়নিক গঠন

কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন আঠার উপকরণ এবং রাসায়নিক গঠন ভিন্ন। আঠার কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে এর রাসায়নিক গঠনের উপর। নিচে কিছু জনপ্রিয় আঠার উপকরণ এবং তাদের কার্যকারিতা দেওয়া হলো:

 পিভিএ (Polyvinyl Acetate)

  • পিভিএ হলো সাদা আঠার প্রধান উপাদান যা কাঠের কাজের জন্য নিরাপদ এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।

এপোক্সি (Epoxy)

  • এপোক্সি আঠা দুইটি প্রধান উপাদান রেজিন এবং হার্ডনার নিয়ে তৈরি হয়। যখন এই দুটি উপাদান মেশানো হয় তখন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী এবং স্থায়ী আঠা তৈরি হয়। এটি অত্যন্ত টেকসই এবং বহুমুখী যা বড় কাঠের প্রজেক্ট, মেটাল এবং অন্যান্য উপকরণের সংযোগের জন্য উপযোগী। এপোক্সি আঠার একটি বড় সুবিধা হলো এটি পানিরোধী তাই আউটডোর কাঠের কাজেও এটি ব্যবহার করা যায়।
  • উপাদান: রেজিন, হার্ডনার
  • বৈশিষ্ট্য: অত্যন্ত শক্তিশালী, পানিরোধী, বহুমুখী
  • ব্যবহার: আউটডোর কাঠের প্রজেক্ট, মেটাল, প্লাস্টিক এবং কাঁচের কাজ
  • দাম: ৩০০-৭০০ টাকা

পলিউরেথেন (Polyurethane)

  • পলিউরেথেন আঠা একটি শক্তিশালী আঠা যা আর্দ্রতা বা জলযুক্ত পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম। এটি একটি মাল্টি-সারফেস আঠা যা কাঠ ছাড়াও মেটাল, প্লাস্টিক এবং কংক্রিটের মতো অন্যান্য উপকরণে ব্যবহার করা যায়। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি আর্দ্র পরিবেশেও শক্তিশালী বন্ড তৈরি করতে সক্ষম এবং শুকানোর পর প্রসারিত হয়ে ফাঁকা জায়গাগুলো পূরণ করতে পারে। পলিউরেথেন আঠা প্রায়শই ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র কাঠের প্রজেক্টের জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • উপাদান: পলিউরেথেন
  • বৈশিষ্ট্য: জল এবং আর্দ্রতা সহনশীল, প্রসারিত হয়ে ফাঁকা পূরণ করতে সক্ষম
  • ব্যবহার: ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র কাঠের প্রজেক্ট, আর্দ্র পরিবেশ
  • দাম: ৫০০-১০০০ টাকা

সায়ানোঅ্যাক্রিলেট (Cyanoacrylate)

  • সায়ানোঅ্যাক্রিলেট যা সাধারণত সুপার গ্লু নামে পরিচিত। খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ছোট ও সূক্ষ্ম কাঠের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত ছোটখাটো মেরামত কাজ যেমন ভেঙে যাওয়া কাঠের টুকরা জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি খুব ছোট পরিমাণে ব্যবহার করলেও শক্তিশালী বন্ড তৈরি করে। তবে বড় কাঠের প্রজেক্টের জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
  • উপাদান: সায়ানোঅ্যাক্রিলেট
  • বৈশিষ্ট্য: দ্রুত বন্ডিং, ছোট প্রজেক্টের জন্য উপযুক্ত
  • ব্যবহার: ছোট মেরামত, সূক্ষ্ম কাঠের কাজ
  • দাম: ৫০-২০০ টাকা

কন্টাক্ট সিমেন্ট (Contact Cement)

  • কন্টাক্ট সিমেন্ট একটি বিশেষ ধরনের আঠা যা দুটি পৃষ্ঠকে একসঙ্গে জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং শক্তিশালী বন্ড তৈরি করে। সাধারণত লেমিনেটিং বা বড় কাঠের প্যানেল লাগানোর জন্য কন্টাক্ট সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এটি কাঠের পৃষ্ঠে প্রয়োগ করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় এবং তারপর পৃষ্ঠগুলোকে একত্রে চেপে বসিয়ে দিতে হয়।
  • উপাদান: সিন্থেটিক রেজিন
  • বৈশিষ্ট্য: দ্রুত বন্ডিং, ইনস্ট্যান্ট আঠা
  • ব্যবহার: লেমিনেট, বড় কাঠের প্যানেল
  • দাম: ২০০-৬০০ টাকা

 কোথায় কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা পাওয়া যায়

বাংলাদেশে কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা সহজেই বিভিন্ন দোকানে এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়। অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট এবং স্থানীয় হার্ডওয়্যার দোকানে এই ধরনের আঠা পাওয়া যায়। নিচে কিছু জনপ্রিয় স্থানের তালিকা দেওয়া হলো:

  •  স্থানীয় হার্ডওয়্যার দোকান: বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই স্থানীয় হার্ডওয়্যার দোকানে কাঠের কাজের জন্য আঠা পাওয়া যায়। বিশেষত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী শহরের বড় হার্ডওয়্যার বাজারে বিভিন্ন ধরনের আঠা সহজেই পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আঠা পাওয়া যায় যা কাঠের কাজের জন্য উপযুক্ত।
  • অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: বাংলাদেশে বেশ কিছু ই-কমার্স সাইটে কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা পাওয়া যায়। Daraz, AjkerDeal এবং Evaly-র মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আঠা কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোও অনলাইনে সহজে পাওয়া যায় যা স্থানীয় দোকানে সব সময় পাওয়া নাও যেতে পারে।
  •  ব্র্যান্ডেড স্টোর: কিছু বড় ব্র্যান্ডের নিজস্ব দোকানও রয়েছে যেখানে তাদের নিজস্ব পণ্যের একটি বিশাল সংগ্রহ থাকে। যেমন Fevicol, Gorilla Glue এবং Loctite-এর নিজস্ব অথরাইজড ডিলারদের কাছ থেকে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য আঠা সংগ্রহ করা যায়।
  • দাম: দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে আঠার মূল্য পরিবর্তিত হয়। অনলাইন শপিংয়ে সাধারণত কিছু ছাড় পাওয়া যায় যা খুচরা দোকানে নাও পাওয়া যেতে পারে।

 কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা ব্যবহারের নিয়ম

সঠিকভাবে কাঠ জোড়া লাগানোর আঠা ব্যবহার করলে কাঠের টুকরাগুলো শক্তভাবে একত্রে সংযুক্ত করা সম্ভব। তবে প্রতিটি আঠা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে না পারলে কাঠের জোড়া ঠিকমত কাজ নাও করতে পারে। এখানে কাঠের কাজের জন্য আঠা ব্যবহারের কিছু সাধারণ নিয়ম এবং পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

  • পৃষ্ঠ পরিষ্কার করা: প্রথম ধাপে যে পৃষ্ঠায় আঠা প্রয়োগ করা হবে তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার এবং শুষ্ক হওয়া জরুরি। কাঠের পৃষ্ঠে ধুলো, ময়লা অথবা তেল থাকলে আঠা সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না এবং কাঠের টুকরা শক্তভাবে সংযুক্ত হবে না।
  •  যথাযথ পরিমাণে আঠা প্রয়োগ: কাঠের পৃষ্ঠে পরিমিত পরিমাণে আঠা প্রয়োগ করা উচিত। কম আঠা দিলে কাঠের টুকরাগুলো সঠিকভাবে সংযুক্ত হবে না আবার বেশি আঠা দিলে এটি অতিরিক্ত ফাঁক পূরণ করতে পারে যা কাঠের সংযোগ দুর্বল করে।
  • চাপ দিয়ে ধরে রাখা: আঠা প্রয়োগের পর কাঠের টুকরাগুলোকে একত্রে চেপে ধরে রাখা প্রয়োজন যাতে আঠা ঠিকমত শুকিয়ে শক্ত সংযোগ তৈরি করতে পারে। এই কাজের জন্য ক্ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্ল্যাম্পের মাধ্যমে কাঠের টুকরাগুলো একত্রে চেপে ধরে রাখতে হবে যতক্ষণ না আঠা সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়।
  •  শুকানোর সময়: প্রতিটি আঠার নির্দিষ্ট একটি শুকানোর সময় থাকে। কিছু আঠা দ্রুত শুকিয়ে যায় যেমন সায়ানোঅ্যাক্রিলেট আঠা মাত্র কয়েক সেকেন্ডে শুকিয়ে যায় আবার কিছু আঠা যেমন এপোক্সি আঠা, শুকাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় নেয়। প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী আঠা সম্পূর্ণ শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
  •  তাপমাত্রার প্রভাব: কাঠ জোড়া লাগানোর সময় আশেপাশের তাপমাত্রা আঠার কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। খুব বেশি ঠান্ডা বা খুব বেশি গরম পরিবেশে আঠা সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাই সঠিক তাপমাত্রায় আঠা ব্যবহার করতে হবে।

 বিভিন্ন আঠার তুলনামূলক আলোচনা

বাজারে কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আঠা পাওয়া যায়। তাদের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার অনুসারে এই আঠাগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখানে কয়েকটি সাধারণ আঠার তুলনামূলক আলোচনা দেওয়া হলো:

  •  পিভিএ বনাম এপোক্সি: পিভিএ আঠা তুলনামূলকভাবে সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং স্বল্পমূল্যের যা ছোটখাটো কাঠের কাজের জন্য আদর্শ। অন্যদিকে এপোক্সি আঠা শক্তিশালী এবং বহুমুখী যা বড় কাঠের প্রজেক্ট বা মেটাল, কাঁচের মতো অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে কাঠের সংযোগের জন্য উপযোগী। পিভিএ আঠা দ্রুত শুকিয়ে যায় কিন্তু এপোক্সি আঠা শুকাতে বেশি সময় নেয় এবং এর দামও তুলনামূলক বেশি।
  •  পলিউরেথেন বনাম সায়ানোঅ্যাক্রিলেট: পলিউরেথেন আঠা আর্দ্র পরিবেশে কার্যকর এবং ফাঁক পূরণ করতে সক্ষম যা আউটডোর প্রজেক্টের জন্য উপযোগী। অন্যদিকে সায়ানোঅ্যাক্রিলেট আঠা ছোট ও সূক্ষ্ম কাজের জন্য ভালো তবে বড় কাঠের কাজের জন্য উপযুক্ত নয়। এটি খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় যা জরুরি মেরামত কাজে সহায়ক। পলিউরেথেন আঠার তুলনায় সায়ানোঅ্যাক্রিলেট আঠার দাম কম এবং এটি সহজলভ্য।
  • কন্টাক্ট সিমেন্ট বনাম পিভিএ: কন্টাক্ট সিমেন্ট দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং এটি লেমিনেটের মতো বড় কাঠের প্রজেক্টে ব্যবহার করা হয়। পিভিএ আঠার তুলনায় এটি খুব শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করে। তবে পিভিএ আঠা বেশি ব্যবহারযোগ্য এবং তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।

 কাঠের আঠা ব্যবহারে সতর্কতা

কাঠের আঠা ব্যবহারের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নীচে কাঠের আঠা ব্যবহারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা দেওয়া হলো:

  •  স্বাস্থ্য ঝুঁকি: কিছু আঠা বিশেষ করে এপোক্সি এবং পলিউরেথেন আঠা ব্যবহারের সময় রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ঘটে যা ত্বক এবং শ্বাসযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই ধরনের আঠা ব্যবহারের সময় হাতমোজা এবং মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
  •  নিরাপত্তা নির্দেশনা: প্রতিটি আঠার প্যাকেজে নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এই নির্দেশনাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ে এবং সঠিকভাবে অনুসরণ করা উচিত। বিশেষ করে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে এবং কাজের শেষে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
  •  আঠা সংরক্ষণ: আঠা ব্যবহারের পর বাকিটা সংরক্ষণের জন্য ঢাকনা শক্ত করে বন্ধ করতে হবে এবং ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রাখতে হবে। আঠার প্যাকেজে উল্লেখিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ব্যবহার করা উচিত কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ আঠা কার্যকর নাও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ সুন্দরী গাছ – বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও পরিবেশগত গুরুত্ব

 উপসংহার

কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের আঠা ব্যবহার করা হয় এবং সঠিক আঠা নির্বাচন এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করাই কাঠের কাজের সফলতার প্রধান চাবিকাঠি। প্রজেক্টের ধরন এবং পরিবেশ অনুযায়ী আঠা বেছে নেওয়া উচিত এবং আঠার ব্যবহারে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। এই আর্টিকেলে বিভিন্ন প্রকারের কাঠের আঠা, তাদের বৈশিষ্ট্য, দাম এবং সঠিক ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটি কাঠের কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী আঠা নির্বাচন এবং প্রজেক্ট সফলভাবে সম্পন্ন করতে সহায়ক হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *