লটকন গাছ (Baccaurea motleyana) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আদিবাসী ফলদায়ী গাছ। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বন্য অবস্থায় বা চাষাবাদ করে এটির পরিচর্যা করা হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর লটকন ফল মৌসুমে স্থানীয় ফল বাজারে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। গাছের উচ্চতা সাধারণত ৮ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হয় এবং পাতার ওপর ছোট ছোট লালচে ডগা জড়িয়ে থাকে যা ফলের আগমনকে ইঙ্গিত করে। ফল সরাসরি গাছ থেকে থেমে পড়ে অথবা লাঠি দিয়ে ঝাড়া হয়।
লটকন ফলের স্বাদ মিষ্টি খানিকটা টক ও অম্লতার মিশ্রণে তৈরি যা গ্রীষ্ম মৌসুমে তাজা রূপে খেতে দারুণ লাগে। একটি কেজি লটকন ফল বাংলাদেশে সাধারণত ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয় যা বিঘ্নিত না হয়ে সারা মৌসুম ধরে প্রায়ই পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্যক্তি বিলে বা ফলবাজারে পাইকারি ক্রেতারা প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে লটকন কিনে থাকেন। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে দাম একটু বাড়তি থাকতে পারে।
আর পড়ুন: ডালিম গাছ
লটকন গাছের পাতা ও ডালপালা থেকে সংগ্রহ করা রাবার জাতীয় প্রাথমিক ল্যাটেক্স কখনও কখনও কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কাঁচা ফল থেকে কেমিক্যাল ফ্রি আচার তৈরিতে স্থানীয়রা দক্ষ। পরিবেশ ভারসাম্যে লটকন গাছ ভূমি ক্ষয় রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় দেশের বিভিন্ন বনায়ন প্রকল্পে লটকন গাছও সমন্বিত করা হয়।
বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা থেকে উত্তর দিকে ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে লটকন গাছ দেখতে পাওয়া যায়। বাগমারা ব্রিড বা জামালপুর, সিলেট বিভাগের পর্বত্য এলাকায় বন্যজীবন সংরক্ষণের ভাটা অঞ্চলে চারা রোপণ করে কৃষকরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লটকন চাষ আবাদ করছেন। ফলন শুরু করতে রোপণের পর চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে।
লটকন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ও শ্রেণীবিন্যাস
লটকন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea motleyana। এটি Euphorbiaceae (দুধদানা পরিবার) গোত্রভুক্ত। গোত্রের সন্নিবেশে প্রায় ৭০০ প্রজাতি আছে এবং লটকন তার মধ্যের অন্যতম ফলদায়ী উদ্ভিদ। Baccaurea নামটি লাতিন শব্দ Bacca (ফল) ও Urea (সংস্করণ) থেকে সৃষ্টি যার অর্থ ফল-সংক্রান্ত। motleyana প্রজাতিগত বিশেষণটি ইংরেজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী J. Motley-এর নামানুসারে স্বীকৃত।
Euphorbiaceae পরিবারে সাধারণত অ্যালক্যালয়েড ধরণের রাসায়নিক উপাদান থাকে যেগুলি নির্দিষ্ট প্রজাতিতে রেশিও তৈরি করে। লটকনে Tannin উপস্থিতি কম তাই স্বাদে কড়কাটা অনুভূতি খুবই স্বল্প। পরিবারের অন্য গাছ-প্রজাতির তুলনায় এতে প্রোটিন এবং ভিটামিন খনিজের উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি।
ট্যাক্সোনমিক্যালি লটকন Urticaceae/Phyllanthaceae-এর সাথে ক্রম পরিবর্তনীয় সম্পর্কিত হলেও আধুনিক জেনেটিক বিশ্লেষণে Euphorbiaceae পরিবারেই শ্রেণীভুক্ত রাখা হয়েছে। গাছের ক্রোমোজোম সংখ্যা ২n=18 যা গবেষণার জন্য ভালো মডেল উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
লটকন গাছের উচ্চতা ৮–১২ মিটার, ব্যাসপ্রস্থ ডগা প্রায় ৩০–৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকার বিভিন্ন ধরণের pH পরিসরে চারা বেঁচে থাকে তবে সামান্য লবনাক্ত মাটিতে কম ফলন দেখা যায়। মৌসুমী বর্ষা শেষে ফলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
ইতিহাস ও বিস্তৃতি
লটকন গাছের মূল উদ্ভব মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ান জঙ্গলে। স্থানীয় সম্প্রদায় প্রাচীনকাল থেকেই এ ফলের উৎপাদন ও ব্যবহার জানত। থাইল্যান্ডে ‘লংকন’ নামেও পরিচিত লটকন প্রথম ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকলে পরে স্বাদ ও পুষ্টির কারণে খাদ্যতালিকায় তার মান বাড়ে। বিংশ শতাব্দীতে বৃক্ষমেডিক্যাল গবেষণায় এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়।
বৈশ্বিক বাণিজ্য শুরু হয় ১৯৬০ দশকে যখন থাইল্যান্ড দানাদার ফল হিসেবে জাপান ও ইউরোপে রফতানি করতে শুরু করে। পরবর্তীতে গবেষণাধর্মী প্রকল্পে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসেও চারা রপ্তানি হয়। বাংলাদেশে অতীত কয়েক দশকে বনায়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হলে চাষাবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আধুনিক সময়ে বাণিজ্যিক বাগানে হাইব্রিড প্রজাতি উদ্ভাবন করে ফল আকার ও স্বাদ উন্নতীকরণ করা হচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে নতুন হাইব্রিডে প্রতি গাছে ফলন ২০ থেকে ৩০ কেজিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশে গবেষণা সংস্থা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহ সহযোগী সংস্থা বিভিন্ন চারা প্রজনন কর্মশালা চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু অংশে পরীক্ষামূলকভাবে লটকন চাষ শুরু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গাছের টলারেন্স পদ্ধতি যাচাই করা হচ্ছে যাতে শুষ্ক ও অতিবৃষ্টিস্থানে ইমপ্যাক্ট বিবেচনা করা যায়।
মরফোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য
শিকড় ও গাছতলা
লটকন গাছ গভীর শিকড় দেখায় যা মাটি থেকে চার থেকে পাঁচ মিটার নিচে পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। প্রধান শিকড় ছাড়া বহুবিধ প্রান্তিক শিকড় বর্ধিত হয় মাটির সমান্তরাল অংশে। গাছতলা (টাঙ্ক) বা ট্রাঙ্ক চার থেকে পাঁচ ফুট ব্যাসে ফালা হতে দেখা যায়। গাছতলার বাইরের অংশ মসৃণ এবং হালকা বাদামি রঙের ছাল থাকে যা ছোট ফাটল নিয়ে বয়সের সাথে গাঢ় হয়।
পাতা ও ফুল
পাতা সাধারণত চওড়া এবং লম্বাটে আকারের। দৈর্ঘ্যে ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত এবং প্রস্থে ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পাতার কিনারা হলুদাভ বর্ণের সহজ ব্রিজিং থাকা । ফুল ক্ষুদ্র এবং একস্বদি ভেতরে অফ-ব্লাশ বা হালকা হলদে রঙের। প্রচুর পরিমাণে সংকলিত ছোট ছোট সূচীগুচ্ছে তিনি একত্রে ফুটে যা পরবর্তীতে ফলের রূপ নেয়। ফুলফুটি মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে প্রধানত ঘটে।
ফল ও বীজ
ফল আকারে গোলমরিচের চেয়ে খানিকটা বড়। বাইরের ছাল লালচে ধুসর মসৃণ। ভিতরে মাংসল অংশ হালকা সাদা এবং স্বাদে মিষ্টি টক । প্রতিটি ফলের মধ্যে সাধারণত ৩ থেকে ৫টি বীজ থাকে। বীজের কাঁটা ছাড়া বহনযোগ্য। ফলন মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে মৌসুমী তীব্রতায় চলে। প্রতিটি গাছ বছরে প্রায় ১৫০ থেকে ২৫০ কেজি ফল দান করে।
বাংলাদেশে লটকন গাছের বিস্তার
বাংলাদেশে লটকন গাছের বিস্তার প্রধানত উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব অনুপ্রান্তে। রাজশাহীর নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোরের কিছু গ্রামের বাগানে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নার্সারি খোলার পর থেকে চারা সরবরাহ বেড়ে গেছে । সিলেট বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চল ও কাফিনেট অঞ্চলে স্বাভাবিক বনায়নের অংশ হিসেবেও পাওয়া যায়।
স্থানীয় কৃষকরা বাগান পরিচালনায় দিনরাত পরিশ্রম করে ফলন বাড়াতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বজায় রাখেন। মধ্য বাংলাদেশের তিস্তা ভ্যালি ও যমুনা ভ্যালি ঢলে সামান্য জলাবদ্ধতার পরেও গাছ বেঁচে থাকে। মাটির pH ৫.৫ থেকে ৭.০ পর্যায়ে উন্নত ফলন নিশ্চিত হয়। ছায়া রশ্মি সমন্বিত এলাকা গ্রীষ্মের অতিরিক্ত তাপ নিবারণে সহায়ক।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বনায়ন প্রকল্পেও লটকন গাছ সংযোজন করা হয়েছে। বন বিভাগের উদ্যোগে সরকারি অরণ্যভূমিতে চারা রোপণ করে স্থানীয় সম্প্রদায়কে সচেতন করা হয়। উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্ধিত ব্যাংকের সহযোগিতায় উপকূলীয় এলাকায় লবণসহিষ্ণু নতুন জাতের পরীক্ষামূলক চারা সরবরাহ করছে।
মৌসুমে দেশের বিভিন্ন ফলবাজারে লটকন মেলার আয়োজন হয় । ঢাকার যতোয়ারিবাজার, খুলনার বালিয়া বাজার, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হাট–সব জায়গায় স্থানীয় চাষিদের পাইকারি বিক্রেতারা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে পাড়ে বিক্রি করেন। গ্রাহক গ্রহণযোগ্যতা ও চাহিদা বাড়ায় চারা উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
চলমান গবেষণায় লক্ষ্য করা হচ্ছে লটকন গাছের বাঁশি জাত দিয়ে ফলন বাড়ানো সম্ভব কি না। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব সার ব্যবস্থাপনায় আর্গানিক চাষ পদ্ধতি পরীক্ষিত হচ্ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ফলন নিশ্চিত হবে।
লটকন গাছের চারা প্রতিপালন ও চাষাবাদ ব্যবস্থা
লটকন গাছের সফল চাষাবাদের ভিত্তি মজবুত চারাপ্রতিপালনে নিদিষ্ট। প্রথমে ভালো মানের বীজ বা গুণগতমানের চারা নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
-
মাটি: দোঁআঁশযুক্ত দোআঁশ-মাটিতে চারা ভালো জন্মায়
-
পিএইচ: ৫.৫–৭.০ মাত্রার মধ্যে রাখলে পুষ্টি শোষণ বাড়ে
-
জলবায়ু: গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিলে শুষ্ক মৌসুমেও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে
-
প্রজনন পদ্ধতি: বীজ পুঁতে ৩০% অর্গানিক সার মেশানো উত্তম ফল দেয়
-
ছায়া রোদ: প্রথম ছয় মাস হালকা ছায়া দিলে অতিরিক্ত রোদে পাতার কলম সহনীয় হয়
নমুনা রোপণের পরে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার তরল সার প্রয়োগ ও চারা ঝাঁকুনি কমানো জরুরি। প্রথম বছরে সম্পূর্ণ পরিচর্যার ফলে দ্বিতীয় বছর onwards ফলন বেশি হয়।
আর পড়ুন: ওক গাছ
লটকন গাছের ব্যবহার ও উপকারিতা
লটকন গাছের ফল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাদ্য ও চিকিৎসায় গুরুত্ব বহন করে।
-
খাদ্যগত গুণ
-
ভিটামিন সি ও আয়রন থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
-
ফাইব্র fibre উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
-
-
ঔষধি প্রয়োগ
-
পাকা ফলের রস পাকস্থলীর অম্লতা নিরসনে কাজ দেয়
-
পাতার রসমিশ্রণ ক্ষত আর জ্বালা কমায়
-
-
কৃষি ও শিল্প
-
গাছের ল্যাটেক্স সংকোচনকারী হিসেবে ব্যবহৃত
-
কাঁচা ফল আচার ও জ্যাম তৈরিতে ব্যবহার হয়
-
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় তাজা লটকন রস সকালে খেলে হজম শক্ত হয় ও সারা দিন সতেজ লাগে।
পরিবেশগত গুরুত্ব
লটকন গাছ পরিবেশ সংরক্ষণে অনেক সুবিধা দেয়। মূল শিকড় অতিরিক্ত মাটি আটকে রাখে ফলে ভূমি ক্ষয় রোধ হয়। পাশাপাশি গাছ তলদেশে ছায়ায় মাটি শীতল রাখে যা মাইক্রোবায়োলজিক প্রাণীর জন্য সহায়ক। গড়ে তোলা বনাঞ্চলে লটকন বনায়ন করলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা যায়।
অতিরিক্ত বর্ষায় জলাবন্দি এলাকায় গাছের শিকড় পানি শোষণ করে প্লাবন রোধে সাহায্য করে। তরল কার্বন সঞ্চিত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মাপে ভূমিকার পাশাপাশি অক্সিজেন উৎপাদন বাড়িয়ে পরিবেশকে সতেজ রাখে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও বাণিজ্যিক ব্যবহার
লটকন চাষ কম সময়ে ভালো আয়গুলো উৎপাদন দেয়। দেশে বাগান বাণিজ্যে প্রতি হেক্টরে ৪-৫ মিটার সেচ ব্যবস্থায় বছরে ২০ থেকে ৩০ টন ফল সংগ্রহ করা যায়।
-
স্থানীয় বাজার: প্রতি কেজি ২০০–৩০০ টাকা বিক্রি হয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করে
-
রপ্তানি সম্ভাবনা: ভারত ও থাইল্যান্ডে ছোট প্যাকেটে ডিম্যান্ড বাড়ছে
-
প্রচলিত প্রক্রিয়াজাত পণ্য: জ্যাম আচার ও সিরাপ প্রক্রিয়া করেই দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ
চাষাবাদে সাবলীল হওয়াতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নারী-পুরুষ উভয়ই কৃষি কাজে অংশ নিয়ে দারিদ্র্য দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রোগ, কীট ও চ্যালেঞ্জ
লটকন গাছের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কিছু প্রধান রোগ ও কীটের আক্রমণ।
-
ব্ল্যাক স্পট রোগ
-
লক্ষণ: পাতে কালচে দাগ ও ডালপালা ঝরা
-
প্রতিকার: তিক্তনাশক স্প্রে প্রতি মাসে একবার
-
-
ফল অসড়তা
-
সংকেত: পাকা ফল ছিঁড়ে নাকানো
-
প্রতিরোধ: ফসলবাস্তু যত্নে জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত
-
-
লটকন তেলছাঁচ পোকার আক্রমণ
-
লক্ষণ: কুচি ডগায় ছিদ্র ও ছত্রাক জন্ম
-
সমাধান: পিস্ট সেন্ট্রিক নিবিড় স্প্রে নিয়ন্ত্রণ
-
ব্যবস্থাপনার অভাবে ফলন হ্রাস পেতে পারে তাই নিয়মিত মনিটরিং ও সময়োপযোগী প্রতিকার গ্রহন জরুরি।
সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা
লটকন গাছ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সম্প্রদায়, বনদপ্তর ও কৃষি অধিদপ্তরের সমন্বয় অপরিহার্য। সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমে বন্যপ্রজাতি ও চাষাবাদ দু’দিকে নজর দিতে হবে।
-
প্রাকৃতিক বনায়ন
-
স্থানীয় বনভূমিতে চারা রোপণ করে আদিবাসী উদ্ভিদবৈচিত্র্য রক্ষা করা যায়
-
বনদপ্তরের সহায়তায় প্রতিটি এলাকায় ন্যায্য সংখ্যক সার্টিফায়েড চারা বিতরণ
-
-
অর্গানিক চাষাবাদ
-
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক হ্রাস করে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করলে মাটি সুস্থ থাকে
-
কম্পোস্ট ও ফসলাবশিষ্টি পুনর্ব্যবহার জীববৈচিত্র্য বাড়ায়
-
-
জলবায়ু সুরক্ষা
-
মাটিতে জৈব কার্বন সঞ্চিত হয় ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়ক
-
ছায়াযুক্ত অবস্থা গাছের পানিশোষণ সুগম করে
-
-
সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ
-
স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়মিত মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণে অংশগ্রহণ
-
স্থানীয় শিশুদের পরিবেশশিক্ষা দিয়ে ভ্রাম্যমাণ চারা বিতরণ কর্মসূচি
-
টেকসই ব্যবস্থাপনায় লটকন গাছ শুধু ফলন উৎস নয় বরং জলবায়ু ও মাটি সংরক্ষণেও অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা রাখে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
-
প্রশ্ন ১: লটকন গাছ লাগাতে কোন সময় উত্তম?
বৃষ্টির শুরুর আগ মুহূর্তে অথবা বর্ষার প্রথম দিকে চারা রোপণ করলে মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে ফলে দ্রুত শিকড় মজবুত হয়। -
প্রশ্ন ২: লটকন গাছের চারা কত সময়ে ফলন দেয়?
সাধারণ বীজ থেকে চারা রোপণের পর চার থেকে পাঁচ বছর পর পূর্ণ ফলন আসে। গৃহীত হাইব্রিড জাতের ক্ষেত্রে ফলন শুরু হতে পারে তিন বছরেও। -
প্রশ্ন ৩: জমিতে লবণাক্ততা থাকলে কী করা জরুরি?
লবণ সহিষ্ণু জাত বেছে নিন এবং গর্তে ভরার মাটি যতটা সম্ভব কম লবণাক্ত রাখুন। প্রয়োজনে বিমান সার ব্যবহার করতে পারেন। -
প্রশ্ন ৪: কীটনাশক ছাড়া কীভাবে রোগবালাই রোধ করা যায়?
জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রেখে ন্যাচারাল স্প্রে যেমন নিম তেল নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশানো ছিঁটে দিন। সপ্তাহে একবার স্প্রে করলে রোগবালাই কমে।
প্রশ্ন ৫: বাজারজাতকরণে সফলতা পেতে কী করতে হবে?
- ফল সঠিকভাবে ধুয়ে পরিষ্কার প্যাকেটে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ
- স্থানীয় ফল মেলায় অংশ নিয়ে সরাসরি বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ
- সিরাপ আচার জ্যাম ও ড্রাই ফ্রুট আকারে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য তৈরি
আর পড়ুন: কালো কেশরী গাছ
উপসংহার – লটকন গাছ
লটকন গাছ বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটির ধরন অনুযায়ী সহজেই খাপ খেয়ে নিতে পারে। বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস থেকে শুরু করে কৃষি-পদ্ধতি ও পরিবেশগত ভূমিকা ইতিবাচক। সঠিক চারা নির্বাচন পরিচর্যা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করলে স্থানীয় পর্যায়ে আয় ও খাদ্য নিরাপত্তাও বাড়ে।
আপনি যদি লটকন চাষে নতুন হন তাহলে জেলা কৃষি অফিস অথবা বিশ্বসেরা কৃষিবিদদের পরামর্শ নিন। আর যদি ইতোমধ্যে চাষ করছেন তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা ও ফলন শেয়ার করুন। মন্তব্য করে জানান কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন এবং কী কৌশল উপকারে এসেছে।