লজ্জাবতী গাছ – পরিচয়, ঔষধি গুণাগুণ ও ব্যবহারের পূর্ণ গাইড

লজ্জাবতী গাছ

লজ্জাবতী গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Mimosa pudica) একটি বহুল পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ, যা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই জন্মে। এটি “ছুঁইলেই লজ্জা পায়” — এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই সবচেয়ে পরিচিত। পাতায় হাত লাগলে বা সামান্য নড়াচড়া অনুভব করলেই এর পাতা গুটিয়ে যায়, যেটি উদ্ভিদের স্পর্শসংবেদনশীলতা (thigmonastic movement) এর এক দুর্লভ উদাহরণ। এটি Fabaceae পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ, স্থানীয়ভাবে অনেকে একে “লজ্জাবতী লতা”, “ছুঁইমুই গাছ” বা “লাজুক গাছ” নামেও চেনেন।

এই উদ্ভিদটি সাধারণত ছোট আকৃতির হয়ে থাকে, গড়ে ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পাতাগুলো যৌগিক ও পালকের মতো, প্রান্তে ছোট ছোট লম্বাটে পত্রিকা থাকে। এর ফুল গোলাপি-বেগুনি রঙের, গোলাকার আকৃতির এবং তুলার মতো দেখতে হয়। বীজের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে এবং বছরের পর বছর নিজে থেকেই জন্মাতে থাকে। লজ্জাবতী গাছ সাধারণত শুকনো জমি, পথঘাটের পাশ, বাঁশঝাড় বা পরিত্যক্ত স্থানে জন্মে। এটি সূর্যালোকপ্রিয় উদ্ভিদ হলেও আংশিক ছায়াতেও টিকে থাকতে পারে।

আর পড়ুন:জয়তুন গাছ 

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই উদ্ভিদটি প্রাকৃতিক ভাবে অগোছালো জায়গায় জন্মালেও এর ভেষজ ও ঔষধিগুণ অসাধারণ। তাই বর্তমানে অনেকে নিজের বাসার ছোট বাগানে বা টবেও এটি রোপণ করে থাকেন। এর শিকড়, পাতা ও ফুল—তিনটি অংশই ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অনেকে এটিকে বনসাই গাছ হিসেবেও রোপণ করেন কারণ পাতা গুটানোর দৃশ্য শিশু ও বড়দের কাছেই চমৎকার এক প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা তৈরি করে।


লজ্জাবতী গাছের ঔষধি গুণাগুণ

লজ্জাবতী গাছ কেবলমাত্র একটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন উদ্ভিদ নয়, বরং এটি একটি বহু গুণসম্পন্ন ভেষজ গাছ। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের মধ্যে এটি বহু বছর ধরে ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

  • প্রদাহনাশক ও ব্যথানাশক: লজ্জাবতীর মূল ও পাতা থেকে তৈরি করা পেস্ট ফোড়া, ব্যথাজনিত ফোলা ও অস্থিসন্ধির ব্যথায় ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ হাঁটু ব্যথা বা কোমর ব্যথার ক্ষেত্রেও এর পাতার সেঁক নেন।
  • ত্বকের সমস্যা: লজ্জাবতী পাতার রস ব্রণ, এলার্জি, একজিমা এবং র‍্যাশ দূর করতে কার্যকর। লজ্জাবতী গাছের গুঁড়ো শুকিয়ে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে তা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
  • অর্শ রোগে ব্যবহার: হেমোরয়েড বা অর্শ সমস্যায় এই গাছের মূল অত্যন্ত উপকারী। পেস্ট তৈরি করে বা রস পান করে উপকার পাওয়া যায়। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও এর উল্লেখ রয়েছে।
  • মেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্য: সাদা স্রাব, অনিয়মিত মাসিক বা অতিরিক্ত রক্তপাত সমস্যায় লজ্জাবতীর পাতা সিদ্ধ করে খেলে অনেক উপকার হয় বলে লোকজ চিকিৎসায় বলা হয়।
  • রক্ত বিশুদ্ধকরণ: নিয়মিত এর পাতার রস গ্রহণ করলে রক্তে টক্সিন কমে, র‍্যাশ বা স্কিন এলার্জি প্রতিরোধ হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান হিসেবেও পরিচিত।
  • ঘুমের সমস্যা ও মানসিক চাপ: লজ্জাবতীর চা বা পাতার নির্যাস মানসিক প্রশান্তি দেয়, দুশ্চিন্তা কমায় এবং ঘুম ভালো হয় বলে প্রমাণ আছে। এতে প্রাকৃতিক সেডেটিভ উপাদান রয়েছে।

এইসব গুণাগুণ ছাড়াও এটি লিভার, কিডনি ও পাইলস সমস্যায়ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক ভেষজ কোম্পানি লজ্জাবতী মূল, পাতা ও নির্যাস দিয়ে তৈরি ওষুধ বাজারজাত করছে।


লজ্জাবতী গাছ খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহার বিধি

লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার যতই উপকারী হোক, এর ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে সেটি ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য উৎসের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

প্রথমেই জানা দরকার এই গাছের পাতা ও মূল প্রধানত ঔষধি হিসেবে খাওয়া হয়। তবে ফুলও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। নিচে এর ব্যবহারের কিছু প্রচলিত ও কার্যকর নিয়ম তুলে ধরা হলো:

  • পাতার পেস্ট/রস খাওয়া: ৫-৭টি কচি পাতা সংগ্রহ করে ভালোভাবে ধুয়ে ছেঁচে রস বের করে খালি পেটে খাওয়া যায়। এটি পাইলস ও ইউটেরাইন ইনফেকশনে উপকারী।
  • মূলের গুঁড়ো: শুকিয়ে গুঁড়া করে প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ মধুর সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্ত বিশুদ্ধিকরণ ও হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর।
  • চা বা ডিকোশন: পাতা ও মূলের ছোট টুকরো জলে ফুটিয়ে চা তৈরি করা যায়। দিনে একবার এই চা পান করলে অনিদ্রা, মানসিক চাপ ও মেনস্ট্রুয়াল সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
  • কতটুকু খাবেন: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ১-২ বার, ২-৩ গ্রাম পরিমাণ নিরাপদ; শিশুদের ক্ষেত্রে সরাসরি না দেওয়াই উত্তম। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে খাওয়া নিষিদ্ধ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • বাজারে মূল্য ও পণ্য রূপ: বর্তমানে হিমালয়া, ডাবর, পতঞ্জলি প্রভৃতি কোম্পানি লজ্জাবতী বেইজড ক্যাপসুল বা পাউডার বিক্রি করছে। বাংলাদেশের বাজারে শুকনো গুঁড়া (৫০ গ্রাম) এর দাম ৮০-১২০ টাকা, আর মূলসহ গাছের এক গোছা দাম ৩০-৫০ টাকা।

সবচেয়ে ভালো ফল পেতে স্থানীয় ভেষজ বিক্রেতা বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাওয়া উচিত।


পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়

“পুরুষ লজ্জাবতী গাছ” কথাটি শুনলে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে বেশিরভাগ গাছ উভলিঙ্গ হয়, অর্থাৎ একটি গাছেই পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তবে লোকজ বিশ্বাসে লজ্জাবতী গাছে “পুরুষ” ও “মহিলা” রূপ আলাদা বলে মনে করা হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে তেমনভাবে প্রমাণিত না হলেও চেনার কিছু ঘরোয়া টিপস আছে।

পুরুষ গাছের গঠন: লোকবিশ্বাস অনুযায়ী পুরুষ লজ্জাবতী গাছ একটু খাটো হয়, পাতাগুলি ছোট এবং সহজে গুটিয়ে যায় না। এছাড়া এর গায়ে তুলনামূলকভাবে বেশি কাঁটা থাকে।

মহিলা গাছ: নারী লজ্জাবতী গাছের পাতাগুলি দীর্ঘ, নরম এবং সংবেদনশীলতা বেশি। হাত লাগলে খুব দ্রুত পাতা গুটিয়ে যায়। ফুলও তুলনামূলক বড় এবং উজ্জ্বল রঙের হয়।

চেনার পার্থক্য:

  • পুরুষ গাছে ফুল কম হয়, পাতা শক্ত এবং গাঢ় সবুজ

  • নারী গাছে ফুল বেশি হয়, পাতায় নরমতা বেশি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া করে

লোককথা ও ব্যবহার: অনেকে বিশ্বাস করেন, পুরুষ গাছের রস বা মূল গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আবার কেউ বলেন, পুরুষ লজ্জাবতী যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর।

বাস্তবতা ও গবেষণা: এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই “পুরুষ বনাম নারী” পার্থক্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। এটি প্রধানত লোকজ সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের অংশ।

তবে অভিজ্ঞ ভেষজ ব্যবহারকারীরা কিছু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গাছ আলাদা করে থাকেন, যেটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল।

লজ্জাবতী গাছের চাষ ও সংরক্ষণ- সহজ পদ্ধতি

লজ্জাবতী গাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠলেও, সঠিক নিয়মে এর চাষ করলে ঔষধি গুণের পরিমাণ ও গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যারা বাসায় ছোট গাছ লাগিয়ে ভেষজ বাগান করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ বিকল্প।

লজ্জাবতী গাছ লাগানোর নিয়ম

লজ্জাবতী গাছ লাগানো খুব সহজ। এটি বীজ অথবা কাটিং (ডাল) থেকে জন্মায়। মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ভালো জল নিষ্কাশনযুক্ত দোঁআশ মাটি বেছে নিতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার না দিয়ে জৈব সার (গোবর, কম্পোস্ট) ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

গাছটি হালকা ছায়াযুক্ত ও আলো-বাতাস চলাচলের উপযোগী স্থানে লাগানো উচিত। ২-৩ ফুট দূরত্বে চারা বসাতে হয় যাতে গাছগুলি নিজেদের মতো বাড়তে পারে। পাত্রে বা টবে লাগানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। এমনকি কেউ চাইলে এটি বনসাই হিসেবেও রূপ দিতে পারেন।

কীটনাশক ছাড়া প্রাকৃতিক পরিচর্যা

লজ্জাবতী সাধারণত খুব শক্ত গাছ, তবে মাঝেমধ্যে পোকামাকড়ে আক্রান্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাসায়নিক কীটনাশক এড়িয়ে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করাই ভালো। যেমন—নিমতেল স্প্রে, রসুন-পেঁয়াজের রস, তামাকের নির্যাস ইত্যাদি ব্যবহার করে সহজেই কীটনাশন করা যায়। এ ছাড়াও সপ্তাহে একবার মাটি আলগা করে দিলে শিকড়ের বিকাশ ভালো হয়।

লজ্জাবতী গাছের চাষ

লজ্জাবতী গাছ সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম

প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে পাতাগুলো ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন। একটি বায়ুনিরোধক কাচের বয়ামে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। মূল শুকিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে জিপ ব্যাগে সংরক্ষণ করাও নিরাপদ। এইভাবে সারা বছর ব্যবহার করা যায়। বাজারে শুকনো পাতাও প্যাকেটজাত রূপে পাওয়া যায়, যার দাম ৮০–১২০ টাকা (৫০ গ্রাম)।

আর পড়ুন:তুলা গাছ


লজ্জাবতী গাছ সংক্রান্ত কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা

ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে লজ্জাবতী গাছ যেমন উপকারী, তেমনি এটি নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও কুসংস্কারও প্রচলিত রয়েছে। বিশেষ করে নারী-পুরুষ গাছের বিভাজন, গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ, বা শুধু “লজ্জার প্রতীক” ভাবা—এসব বিভ্রান্তি জনসচেতনতায় আঘাত হানে।

শুধুই লজ্জার প্রতীক নয় — এটি এক প্রমাণিত ঔষধ

অনেকেই মনে করেন লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার শুধুমাত্র লোকজ কুসংস্কারভিত্তিক। কিন্তু বাস্তবে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান। ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, লজ্জাবতীতে এলকালয়েড, ট্যানিন, গ্লাইকোসাইড, স্যাপোনিন ইত্যাদি উপাদান রয়েছে, যেগুলো প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই একে কেবল “নাম শুনলেই গুটিয়ে যায়” এমন একটি গাছ না ভেবে, তার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

নারী-পুরুষ গাছের বিভ্রান্তি কতটা সত্য?

উদ্ভিদবিদ্যায় লজ্জাবতী গাছ উভলিঙ্গ। অর্থাৎ একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। কিন্তু লোকজ বিশ্বাস অনুযায়ী এই গাছ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত—পুরুষ ও মহিলা। বাস্তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। যদিও বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু বাহ্যিক পার্থক্যের ভিত্তিতে চেনা যায়, তবে সেটি পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে, জেনেটিক নয়।

তবে এই বিশ্বাসের কারণে অনেকে শুধুমাত্র ‘পুরুষ’ গাছ লাগাতে চান বা ‘নারী’ গাছকে বেশি উপকারী মনে করেন। এ ধরনের বিভ্রান্তি বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের মাধ্যমে দূর করা উচিত।


ঘরোয়া চিকিৎসায় লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার- লোকজ ও আধুনিক পন্থা

ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে লজ্জাবতী

লজ্জাবতীর রস বা চা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এটি শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে বলে অনেকে দাবি করে থাকেন। কিছু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক দিনে একবার পাতার নির্যাস খালি পেটে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সহায়ক।

মহিলাদের জন্য বিশেষ উপকারিতা

মেয়েদের সাদা স্রাব, ইউরিনারি ইনফেকশন, মাসিক অনিয়মের ক্ষেত্রে লজ্জাবতীর পাতা সিদ্ধ করে খাওয়া বা বসে ধোয়ার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি ইউটেরাইন পেশিকে সবল করে এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধে কাজ করে।

শিশুদের জন্য ব্যবহার উপযোগিতা ও সাবধানতা

শিশুদের ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা বা ঠান্ডা-কাশিতে লজ্জাবতীর পাতার সেদ্ধ পানি খাওয়ানো যেতে পারে, তবে খুব কম পরিমাণে। তবে একে শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ শরীরের সহনশীলতা ভিন্ন হয়ে থাকে।


লজ্জাবতী গাছ নিয়ে গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক তথ্য

প্রামাণ্য গবেষণা ও জার্নাল ভিত্তিক তথ্য

ভারতের Journal of Ethnopharmacology এবং বাংলাদেশের Dhaka University Journal of Pharmaceutical Sciences সহ বহু জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, লজ্জাবতীর পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে বলে পরীক্ষামূলক প্রমাণ আছে।

ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় লজ্জাবতী গাছের স্থান

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে লজ্জাবতী গাছকে “মুদিনী” নামে অভিহিত করা হয়। এটি পিত্ত ও বাত দোষ দূর করে, রক্ত বিশুদ্ধ করে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য নির্দিষ্টভাবে ব্যবহৃত হয়। ইউনানি চিকিৎসায় এটি রক্তস্থম্ভক ও স্নায়ু শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয়। ভারতের কেরালায় লজ্জাবতী চূর্ণ এখন বাজারজাত ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

আর পড়ুন:জাম গাছের ডালের উপকারিতা 


উপসংহার

লজ্জাবতী গাছ আমাদের চারপাশে থাকা এক বিস্ময়কর ও অমূল্য ভেষজ সম্পদ। এটি শুধু লাজুক গাছ নয়, বরং বহুগুণে সমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক ঔষধ। গাছটি চাষ করা যেমন সহজ, তেমনি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি রক্ত, ত্বক, হরমোন ও স্নায়ুর নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার বা ভুলভাবে গ্রহণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ঘরোয়া চিকিৎসার পূর্বে অবশ্যই প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

আপনার ঘরে সহজেই চাষ করতে পারেন লজ্জাবতী গাছ। এটি শুধু আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও উপকারী। ভেষজ উদ্ভিদের প্রতি আগ্রহী হলে এই গাইডটি শেয়ার করুন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও ভেষজ গাছ সম্পর্কিত তথ্য পেতে চোখ রাখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *