বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়ন অপরিহার্য। কৃষি উন্নয়নের মূল ভিত্তি হলো উচ্চমানের বীজের ব্যবহার। উন্নতমানের বীজ না থাকলে ফসলের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে বীজ কোম্পানিগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিষ্ঠান উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদন, বিতরণ এবং কৃষকদের মাঝে বীজের উপযুক্ত ব্যবহার সম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে কাজ করে। উন্নত বীজের মাধ্যমে চাষের খরচ কমানো এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ উন্নত ধানের বীজের ব্যবহার কৃষকদের প্রতি একরে ২০-৩০% পর্যন্ত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে। বীজ কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র বীজ সরবরাহ করেই থেমে থাকে না বরং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বীজের উন্নয়নে কাজ করছে যা দেশের কৃষি উন্নয়নের মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। এই আর্টিকেলে আমরা বীজ কোম্পানির তালিকা সর্ম্পকে বিস্তারিত জানব
বাংলাদেশে বিখ্যাত বীজ কোম্পানির তালিকা
বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বীজ কোম্পানি কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের উচ্চমানের বীজ উৎপাদন ও বিতরণের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বীজ কোম্পানির তালিকা হল:
আর পড়ুন: ভুট্টা বীজ বপন পদ্ধতি
- ACI Seed: ACI একটি বিখ্যাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যা উচ্চফলনশীল বীজের জন্য পরিচিত। ধান, গম এবং ভুট্টার পাশাপাশি সবজি বীজের উৎপাদনেও তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
- Lal Teer Seed: লাল তীর বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান বীজ কোম্পানি। তারা বিশেষ করে সবজি এবং ফলের বীজ উৎপাদনে পারদর্শী।
- Supreme Seed: সুপ্রিম সিড কোম্পানি কৃষকদের মধ্যে সুলভমূল্যে উন্নত বীজ সরবরাহের জন্য পরিচিত।
- BRAC Seed: ব্র্যাক সিড দেশের অন্যতম বড় বীজ সরবরাহকারী। ধান, গম এবং ভুট্টার মতো শস্যের বীজ উৎপাদনে তারা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এই কোম্পানিগুলো স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করে। এছাড়াও বীজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে সরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ACI Seed তাদের উন্নতমানের বীজের জন্য প্রতি কেজি বীজের দাম ৩০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করে যা কৃষকদের কাছে সহজলভ্য।
সরকারি বীজ কোম্পানিগুলোর ভূমিকা
বাংলাদেশে সরকারি বীজ কোম্পানিগুলোর প্রধান ভূমিকা হলো কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ করা এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC) দেশের প্রধান সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তারা ধান, গম, ভুট্টা এবং শাকসবজির বীজ উৎপাদন এবং বিতরণ করে। BADC-র লক্ষ্য হলো কৃষকদের সুলভ মূল্যে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা।
সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা বীজের দাম সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম হয়। উদাহরণস্বরূপ BADC-র সরবরাহকৃত উন্নত ধানের বীজের দাম প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে থাকে। পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলো কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং ফিল্ড ডেমো পরিচালনা করে যা তাদের বীজ ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি শেখায়।
এছাড়া কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (BARI) গবেষণালব্ধ বীজও কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এটি ধান এবং গমের মতো শস্যের উন্নত জাত তৈরিতে কাজ করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।
বেসরকারি বীজ কোম্পানির তালিকা ও তাদের কার্যক্রম
বাংলাদেশের বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলো কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদন করে। উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বীজ কোম্পানির তালিকা মধ্যে রয়েছে:
- ACI Seed: ACI কোম্পানি তাদের উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে। তারা ধান, গম এবং সবজির জন্য মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করে। তাদের বীজের দাম প্রতিকেজি ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে থাকে।
- Lal Teer Seed: লাল তীর বিশেষভাবে সবজি এবং ফলের বীজের জন্য পরিচিত। তাদের টমেটো এবং মরিচের বীজের দাম ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে।
- Supreme Seed: এই কোম্পানি ধান এবং ভুট্টার বীজের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। তাদের সরবরাহকৃত বীজের গুণগতমান আন্তর্জাতিক মানের।
- Metal Agro Limited: মেটাল এগ্রো ধান, গম এবং ভুট্টার বীজ সরবরাহের জন্য পরিচিত। তাদের গবেষণা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নতুন প্রযুক্তি, উন্নত জাত এবং সার্টিফাইড বীজ সরবরাহ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সেমিনার এবং প্রশিক্ষণও আয়োজন করে। উদাহরণস্বরূপ Lal Teer Seed কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেখিয়েছে কীভাবে সঠিকভাবে বীজ রোপণ করতে হয় এবং কীভাবে সর্বাধিক ফলন নিশ্চিত করা যায়।
উন্নত বীজের উপকারিতা
উন্নত বীজ কৃষিক্ষেত্রে এক বিপ্লব এনেছে। এটি ফসলের উৎপাদনশীলতা গুণগতমান এবং পরিবেশগত টেকসইতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। উন্নত বীজ ব্যবহারের ফলে কৃষকরা কম সময়ে বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হন। উদাহরণস্বরূপ উন্নত ধানের বীজ উচ্চ ফলনশীল এবং রোগপ্রতিরোধী জাত হওয়ায় এটি সাধারণ বীজের তুলনায় ২০-৩০% বেশি ফলন দেয়।
উন্নত বীজের প্রধান সুবিধা হলো এটি রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধে কার্যকর। সাধারণত বীজজাত রোগ এবং কীটনাশকের প্রভাব কৃষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা। উন্নত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই মোকাবিলা করা যায়। যেমন ACI Seed কোম্পানির উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ব্রাউন প্ল্যান্ট হপার এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর।
এছাড়া উন্নত বীজের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো এটি কম সেচ এবং সার প্রয়োগে ভালো ফলন দেয়। যেমন লাল তীর সিডের সরবরাহকৃত টমেটোর বীজ কম পানি ব্যবহার করেও ভালো ফলন নিশ্চিত করে। এভাবে উন্নত বীজ কৃষকের খরচ কমিয়ে আয় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বীজ বপনের সঠিক পদ্ধতি
ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সঠিক বীজ বপনের পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পদ্ধতিতে বীজ বপন না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। প্রথমত কৃষকদের বীজ বপনের আগে জমি প্রস্তুত করা উচিত। জমি চাষ, মাটির উর্বরতা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে জমিকে উপযুক্ত করতে হয়।
বীজ বপনের পদ্ধতি নির্ভর করে ফসলের ধরণ এবং মাটির প্রকৃতির ওপর। উদাহরণস্বরূপ ধানের ক্ষেত্রে চারা পদ্ধতিতে বীজ বপন করা হয়। প্রথমে বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয় এবং তারপর জমিতে চারা রোপণ করা হয়। অন্যদিকে ভুট্টা এবং গমের ক্ষেত্রে সরাসরি বীজ বপন করা হয়।
বীজ বপনের সময় বীজের দূরত্ব এবং গভীরতা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ ভুট্টার বীজ সাধারণত মাটির ২-৩ ইঞ্চি গভীরে এবং ৬-৮ ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করা হয়। সঠিক দূরত্ব বজায় না রাখলে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত জায়গা পায় না যা ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বীজের মান যাচাই পদ্ধতি
উন্নত ফসলের জন্য ভালো মানের বীজ বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাজারে নিম্নমানের বীজও পাওয়া যায় যা কৃষকদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য বীজ কেনার আগে মান যাচাই করা আবশ্যক।
প্রথমত বীজের উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেশন এবং মান নিয়ন্ত্রণের নথি দেখা উচিত। সরকারি সংস্থা BADC-র মাধ্যমে সরবরাহ করা বীজগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক মানের হয়ে থাকে। বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের প্যাকেটের গায়ে উল্লিখিত মেয়াদ, উত্পাদনের তারিখ এবং মানের নিশ্চয়তা পরীক্ষা করা উচিত।
বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা পরীক্ষাও বীজের মান যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সাধারণত ১০-১৫টি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেখা হয় সেগুলো কতদিনের মধ্যে অঙ্কুরোদগম করে। যদি ৮০-৯০% বীজ অঙ্কুরোদগম করে তবে তা উন্নত মানের বলে ধরে নেওয়া হয়।
বাজারে ভেজাল বীজ চেনার সহজ উপায় হলো বীজের আকার ও গুণমান দেখে নেওয়া। উন্নত মানের বীজ সাধারণত একধরনের এবং মসৃণ হয়। উদাহরণস্বরূপ ACI বা Lal Teer Seed-এর প্যাকেটজাত বীজ দেখতে পরিষ্কার ও সমান আকৃতির হয়।
বীজের দাম এবং প্রাপ্যতা
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে বীজের দাম এবং প্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নতমানের বীজ সাধারণত কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হয়। তবে এটি কৃষকের জন্য দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হয় কারণ এই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের মান ও পরিমাণ উভয়ই বেশি হয়।
বীজের দাম নির্ভর করে ফসলের ধরণ, জাত এবং কোম্পানির ওপর। উদাহরণস্বরূপ ACI Seed-এর সরবরাহকৃত উচ্চফলনশীল ধানের বীজের দাম প্রতি কেজি ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে লাল তীর কোম্পানির সরবরাহকৃত টমেটোর বীজের দাম প্রতি প্যাকেট ২০০-৪০০ টাকা।
বীজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। সরকারি সংস্থা BADC বিভিন্ন অঞ্চলে বীজ বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছে যা কৃষকদের উন্নতমানের বীজ সহজলভ্য করতে সাহায্য করে। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি অনলাইনেও বীজ সরবরাহ করছে। উদাহরণস্বরূপ Lal Teer Seed এবং Metal Agro Limited-এর পণ্য অনলাইনে সহজেই পাওয়া যায়।
কৃষকদের জন্য একটি ভালো খবর হলো বিভিন্ন কোম্পানি নিয়মিতভাবে বিশেষ ছাড়ের অফার দিয়ে থাকে। যেমন, ACI Seed বিশেষ মৌসুমে ১০-১৫% পর্যন্ত ছাড় দেয়। ফলে, কৃষকরা উন্নতমানের বীজ সহজলভ্য মূল্যে কিনতে সক্ষম হন।
সরবরাহকারী উন্নতমানের বীজ কোম্পানির তালিকা
বাংলাদেশে কৃষকদের জন্য উন্নতমানের বীজ সরবরাহকারী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সরকারি পর্যায়ে BADC (Bangladesh Agricultural Development Corporation) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নত বীজ সরবরাহ করে থাকে। তাদের সরবরাহকৃত বীজ উচ্চ মানসম্পন্ন এবং সুলভ মূল্যের। বিশেষত ধান, গম, ভুট্টা, আলু, শাকসবজি ইত্যাদির বীজ BADC থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
বেসরকারি পর্যায়ে ACI Seed এবং Lal Teer Seed বীজের গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়। ACI Seed-এর ধান এবং ভুট্টার বীজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চ ফলন নিশ্চিত করছে। অপরদিকে Lal Teer Seed সবজি বীজের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তাদের সরবরাহকৃত টমেটো, মরিচ এবং শসার বীজ অত্যন্ত জনপ্রিয়।
Metal Agro Limited এবং Syngenta Bangladesh-ও উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করে থাকে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল এবং রোগপ্রতিরোধী বীজ উৎপাদন করে। এর পাশাপাশি BRAC Seed দেশের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য উন্নতমানের এবং সহজলভ্য মূল্যে বীজ সরবরাহ করে।
বীজ চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ
উন্নত ফলনের জন্য সঠিক পরিবেশে বীজ চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফসলের জাত অনুযায়ী মাটি, আবহাওয়া এবং সেচের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়ে থাকে।
ধানের ক্ষেত্রে জলাভূমি বা সেচনির্ভর এলাকাগুলো সবচেয়ে উপযুক্ত। ধানের জন্য গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকাল আদর্শ। অন্যদিকে, গম এবং ভুট্টার জন্য অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটি এবং শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন।
শাকসবজির ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেচসুবিধা থাকা এলাকাগুলো শাকসবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ লাল তীরের সরবরাহকৃত মরিচ এবং বেগুনের বীজ উর্বর মাটিতে ভালো ফলন দেয়।
পরিবেশ উপযোগী বীজ চাষ নিশ্চিত করতে জমি প্রস্তুতির পাশাপাশি সঠিক সময়ে বীজ বপন করতে হবে। সময়মতো সার প্রয়োগ এবং সেচের ব্যবস্থা থাকলে ফসলের ফলন এবং গুণগত মান উন্নত হয়।
বীজ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
বীজের গুণমান বজায় রাখতে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রথমত বীজকে সবসময় শুষ্ক এবং ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। আর্দ্র পরিবেশে বীজে ছত্রাক এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। এজন্য প্লাস্টিক বা ধাতব পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করা ভালো।
বীজ সংরক্ষণের সময় প্যাকেটের গায়ে উল্লেখিত মেয়াদ এবং ব্যবহারের তারিখ খেয়াল রাখা উচিত। মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, Lal Teer বা ACI Seed-এর সরবরাহকৃত প্যাকেটজাত বীজে মেয়াদের সঠিক তথ্য উল্লেখ থাকে।
এছাড়া বীজের মান রক্ষার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষত ধান এবং গমের বীজ সংরক্ষণের সময় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করলে এটি দীর্ঘ সময় ভালো থাকে।
উন্নত বীজ ব্যবহারে কৃষকের আর্থিক লাভ
উন্নতমানের বীজ ব্যবহারে কৃষকরা সরাসরি আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। উচ্চ ফলনশীল বীজ সাধারণত গড় ফলনের তুলনায় ২০-৪০% বেশি উৎপাদন দেয়। ফলে কৃষকরা কম খরচে বেশি আয় করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ ACI Seed-এর সরবরাহকৃত ধানের বীজ প্রতি বিঘায় ১৫-২০ মণ বেশি ফলন দেয়। এটি একদিকে কৃষকের আয় বাড়ায় অন্যদিকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া উন্নত বীজ রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধে কার্যকর হওয়ায় কীটনাশক এবং চিকিৎসার খরচ কমে যায়। কৃষকরা এভাবে অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন।
সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা উন্নত বীজ কেনার জন্য ভর্তুকি এবং সহজ ঋণ প্রদান করে। ফলে কৃষকরা কম বিনিয়োগে উন্নত বীজ কিনে লাভবান হতে পারেন।
বীজ সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
বাংলাদেশে বীজ ব্যবহারে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে নিম্নমানের বীজের সহজলভ্যতা এবং বীজের উচ্চমূল্য কৃষকদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
অনেক সময় কৃষকেরা ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত হন। এটি ফসলের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। এই সমস্যার সমাধানে সরকারি সংস্থা BADC এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
বীজের উচ্চমূল্যের সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন সংস্থা ভর্তুকি এবং সহজ ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ কৃষকরা উন্নত বীজ কিনতে বিশেষ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন।
এছাড়া কৃষকদের বীজ সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালার মাধ্যমে কৃষকদের উন্নত বীজ চেনার পদ্ধতি শেখানো হলে ভেজাল বীজের ব্যবহার কমে যাবে।
আর পড়ুন: ব্র্যাক আলু বীজ
উপসংহার
উন্নত বীজ ব্যবহার বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে উন্নত বীজ বপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করলে কৃষকেরা ফসল উৎপাদনে চমৎকার ফলাফল পান। উন্নত বীজ ব্যবহারের ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
তবে বীজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৃষকদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। সঠিক প্রশিক্ষণ, সরকারি সহযোগিতা এবং মানসম্পন্ন বীজের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা গেলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।
তাই কৃষি উন্নয়নে উন্নতমানের বীজের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করে না, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখে।