বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো? | এর পরিবেশবান্ধব উপকারিতা

বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো

আজকের ব্যস্ত শহুরে জীবনে পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে নজর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর ধারণাটি কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়, পরিবেশ বান্ধবতা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক শান্তি অর্জনের ক্ষেত্রেও এক অসাধারণ উপায়। আধুনিক যুগে যখন আমরা প্রকৃতির স্পর্শ হারিয়ে ফেলছি, তখন ছাদে ছোট একটি বাগান আমাদের জীবনে সবুজতা ফিরিয়ে আনে। বাড়ির ছাদে গাছ লাগালে বাড়ির তাপমাত্রা কমে, বাতাস পরিষ্কার হয় এবং আমাদের মানসিক প্রশান্তিও বৃদ্ধি পায়। ছাদে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা শহরের কোলাহল থেকে একটু হলেও প্রকৃতির নিকটবর্তী হতে পারি। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য যেখানে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র, সেখানে ছাদের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা, উপযুক্ত গাছ নির্বাচন ও নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব কেন ও কীভাবে বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো যেতে পারে এবং এর মাধ্যমে কি কি সুবিধা অর্জিত হয়। আজকের প্রবন্ধে আমরা বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো, ছাদের উপযোগী গাছ নির্বাচন, মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা, ছাদ বাগানের ডিজাইন, রোপণের ধাপ, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বাস্তব উদাহরণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করব।

বাংলাদেশের জলবায়ু ও ছাদের উপযোগী গাছ

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায় আর বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ ধরনের জলবায়ুর মধ্যে ছাদে গাছ লাগানোর জন্য এমন গাছ নির্বাচন করা জরুরি যা অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার সাথে খাপ খায়। ছাদের পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রে মাটির গুণগত মান থেকে ভিন্ন হয়। এখানে সূর্যালোকের প্রখরতা ও বাতাসের চলাচল অত্যধিক থাকায় এমন গাছ বেছে নিতে হয় যা হালকা ও যত্নের চাহিদা কম।

আর পড়ুন: ফুল গাছের পরিচর্যা 

বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে চলা কিছু জনপ্রিয় গাছের মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা, পুঁই, রোজমেরি ও ছোট পাতা বিশিষ্ট অন্যান্য উদ্ভিদ। এসব গাছ কম যত্নে টিকে থাকে এবং ছাদের ভার বহনে অসুবিধা সৃষ্টি করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও কৃষি গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এই গাছগুলোকে ছাদের জন্য আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশে গাছ লাগানোর সময় গাছের শিকড়, পাতা ও বৃদ্ধি হারের পাশাপাশি আকার এবং রক্ষণাবেক্ষণের সহজতা ও গুরুত্ব রয়েছে। ছাদের পরিবেশে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও উদ্যানবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করাই উত্তম।

ছাদে গাছ লাগানোর উপকারিতা

বাড়ির ছাদে গাছ লাগানোর ফলে পরিবেশগত ও সামাজিক দিক থেকে বহু উপকারিতা অর্জিত হয়। প্রথমত, গাছের পাতায় উপস্থিত প্রাকৃতিক ছায়া বাড়ির অভ্যন্তরে অতিরিক্ত তাপ কমিয়ে এনে একটি ঠাণ্ডা পরিবেশ তৈরি করে। এতে বসবাসকারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি লাভ হয়।

গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশে বায়ু পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করি। গাছ বাতাস থেকে ধূলিকণা, বিষাক্ত গ্যাস ও দূষণের পরিমাণ হ্রাস করে। এছাড়া গাছের পাতা থেকে নির্গত অক্সিজেন আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। ছাদের এই সবুজ ছড়া শুধুমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক নয় বরং আমাদের জীবনের মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  • গাছের ছায়ায় বাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে
  • বাতাসের শুদ্ধি নিশ্চিত হয়
  • মানসিক প্রশান্তি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
  • পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যকর বাসস্থানের রূপান্তর ঘটে

ছাদে গাছ লাগানোর ফলে বাড়ির বাইরের অংশও সুন্দর হয়ে ওঠে এবং এটি বাড়ির সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, ভবিষ্যতে বাড়ি বিক্রির সময় এই সবুজ প্রকল্প বাড়ির মূল্যায়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো – প্রধান চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি

ছাদে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা পূর্ব পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে মোকাবিলা করা যায়। প্রথমত, ছাদের কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি ছাদের ভার বহনের ক্ষমতা কম থাকে তবে গাছের শিকড় বাড়তে গিয়ে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সঠিক না থাকলে বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে ছাদের গাছের ক্ষতি করতে পারে। ছাদের ঢাল ও নালা ঠিকভাবে কাজ না করলে অতিরিক্ত পানি জমে যায় যা গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। এছাড়া, ছাদের মাটি প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতির সময় সঠিক মিশ্রণের অভাবে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।

  • ছাদের ভার বহনের ক্ষমতা যাচাই করা জরুরি
  • পানি নিষ্কাশনের সিস্টেম সঠিকভাবে তৈরি করতে হবে
  • মাটি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে জৈব সার ও কম্পোস্টের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

এই সকল প্রস্তুতি সঠিকভাবে নিলে ভবিষ্যতে কোনো বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয় না। ছাদে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা শুরু করার পূর্বে একজন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও উদ্যানবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত যাতে সঠিক উপকরণ ও পদ্ধতি মেনে কাজ করা যায়।

সঠিক গাছ নির্বাচনের মানদণ্ড

গাছ নির্বাচন করার সময় কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড বিবেচনা করতে হয়। প্রথমত, গাছের আকার ও শিকড়ের বিস্তৃতি নির্ণায়ক। এমন গাছ বেছে নিতে হবে যার শিকড় ছাদের ভার বহনে সমস্যা সৃষ্টি করে না। এছাড়া, গাছের রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হওয়া ও ঋতু অনুযায়ী বৃদ্ধি পরিবর্তনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের স্থানীয় আবহাওয়া ও মাটির ধরন অনুযায়ী গাছের ধরন নির্বাচন করা উচিত। ছোট পাতা বিশিষ্ট গাছ ও কিছু ঔষধি গাছ যেমন অ্যালোভেরা ও পুঁই ছাদের জন্য খুবই উপযুক্ত। স্থানীয় বাজারে সহজলভ্য গাছগুলোকেই প্রাধান্য দিলে রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়।

  • গাছের আকার ও শিকড়ের বিস্তৃতি বিবেচনা করা প্রয়োজন
  • রক্ষণাবেক্ষণের সহজতা ও পুষ্টির চাহিদা পর্যবেক্ষণ করা উচিত
  • ঋতুবর্তী পরিবর্তন ও বৃদ্ধি হার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে

সঠিক গাছ নির্বাচনের জন্য স্থানীয় কৃষি গবেষণা ও উদ্যানবিদদের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ভবিষ্যতে ছাদ বাগান সুস্থভাবে বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ সময় টেকসই থাকে।

বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো – মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা

ছাদে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা অন্যতম প্রধান বিষয়। সাধারণত ছাদের মাটি বাগানের মাটির তুলনায় হালকা ও পুষ্টিহীন হয়। তাই এখানে জৈব সার, কম্পোস্ট ও প্রাকৃতিক সার মেশানোর মাধ্যমে মাটির গুণগত মান উন্নত করতে হয়।

সঠিক পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গাছের শিকড় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পেতে পারে। ছাদের ঢাল ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সঠিকভাবে করা না থাকলে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ার কারণে গাছের ক্ষতি হতে পারে। তাই, ছাদের পানি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নালা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

  • হালকা ও বায়ু চলাচলের উপযোগী মাটি ব্যবহার করা দরকার
  • জৈব সার ও কম্পোস্ট মিশিয়ে মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি করা উচিত
  • পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে

প্রতিদিন বা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পানি চেক করা ও প্রয়োজনে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সঠিক মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছাদে গাছ দ্রুত ও সুস্থভাবে বৃদ্ধি পায়।

ছাদ বাগানের ডিজাইন ও পরিকল্পনা

ছাদ বাগানের সফল রূপান্তরের জন্য সঠিক ডিজাইন ও পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন স্থানে কোন গাছ লাগানো হবে। ছাদের আকার, দিক, সূর্যালোকের পরিমাণ ও বায়ুর চলাচলের দিক বিবেচনা করে বিন্যাস নির্ধারণ করতে হবে।

সুন্দর একটি ছাদ বাগানের জন্য বিভিন্ন উচ্চতার ও রঙের গাছের সমন্বয় জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, নিচের স্তরে ছোট পাতা বিশিষ্ট গাছ ও ফুলের গাছ লাগানো যায় আর উপরের স্তরে লতাপাতা গাছ ও ঝুলন্ত গাছ বেছে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে একটি রঙিন ও সুসজ্জিত পরিবেশ তৈরি হয়।

  • স্থানের উপযোগিতা অনুযায়ী গাছের বিন্যাস নির্ধারণ করা দরকার
  • বিভিন্ন উচ্চতা ও রঙের গাছের সমন্বয়ে লেআউট তৈরি করা যায়
  • অলঙ্করণ উপকরণ ব্যবহার করে ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে

পরিকল্পনা তৈরির সময় বিভিন্ন উদ্যানবিদ ও ডিজাইনারদের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে করে ছাদ বাগানের নান্দনিকতা ও কার্যকারিতা দুটোই বজায় থাকে। ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি বাড়ির সামগ্রিক পরিবেশ উন্নত করে।

আর পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা গাছ কোনটি 

গাছ লাগানোর ধাপ-বাই-ধাপ পদ্ধতি

ছাদে গাছ লাগানোর কাজটি ধাপে ধাপে করলে তা সহজ ও কার্যকরী হয়। প্রথম ধাপে ছাদের পরিমাপ নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে কোন স্থানে গাছ লাগানো হবে। এরপর মাটি প্রস্তুতির মাধ্যমে সঠিক উচ্চতায় নিয়ে আসতে হবে। মাটিতে জৈব সার ও প্রাকৃতিক সার মিশিয়ে নিলে গাছের পুষ্টি নিশ্চিত হয়।

পরবর্তীতে নির্বাচিত গাছগুলোকে সঠিক দূরত্বে রোপণ করতে হবে যাতে পরস্পরের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়। রোপণের পর নিয়মিত পানি প্রদান, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরি।

  • প্রথম ধাপে ছাদের পরিমাপ ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে
  • দ্বিতীয় ধাপে মাটি ও সার মিশ্রণ করে বাগানের মাটি প্রস্তুত করা দরকার
  • তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত গাছগুলোকে সঠিক দূরত্বে রোপণ করতে হবে
  • চতুর্থ ধাপে নিয়মিত পানি প্রদান ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা উচিত

প্রতিটি ধাপের যথাযথ পালন করলে ছাদে গাছ দ্রুত ও সুস্থভাবে বৃদ্ধি পায়। ধাপে ধাপে কাজ করার ফলে কোনো ধরণের ভুল থেকে এড়ানো যায় এবং পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়।

বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো

পরিচর্যা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ

ছাদ বাগানের সফলতা নির্ভর করে নিয়মিত পরিচর্যা ও যত্নের উপর। গাছ রোপণের পর প্রতিদিন বা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে তাদের অবস্থান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানি দেওয়া, প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ এবং ছাঁটাছেঁটার মাধ্যমে গাছের আকৃতি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি কোনো গাছ রোগে আক্রান্ত হয় বা পোকামাকড়ের সমস্যা দেখা দেয় তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার উদ্যানবিদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ছাদ বাগানের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বজায় থাকে।

  • গাছের পাতা ও শিকড় পরীক্ষা করা জরুরি
  • ধূলা ও অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার রাখতে হবে
  • পর্যাপ্ত পানি ও সার প্রয়োগ করতে হবে
  • ছাঁটাছেঁটার মাধ্যমে গাছের আকৃতি ঠিক রাখা উচিত

নিয়মিত পরিচর্যা ছাদে গাছের সুস্থ বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে। প্রতিটি মৌসুমে গাছের অবস্থা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এতে করে ছাদ বাগান ক্রমাগত সুন্দর ও কার্যকরী থাকে।

বাস্তব উদাহরণ ও কেস স্টাডি – বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ছাদে গাছ লাগানোর অসংখ্য সফল উদাহরণ পাওয়া যায়। ঢাকার কিছু আধুনিক আবাসিক প্রকল্পে ছাদকে সবুজ বাগানে পরিণত করা হয়েছে। এক পরিবারের মালিক তার ছাদে অ্যালোভেরা, পুঁই ও অন্যান্য ছোট গাছ লাগিয়ে পুরো ছাদকে একটি শান্ত ও সবুজ haven এ রূপান্তরিত করেছেন।

কিছু কেস স্টাডি থেকে জানা গেছে যে ছাদে গাছ লাগানোর ফলে বাড়ির অভ্যন্তরের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যায়। এছাড়া, নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ছাদ বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়। উদ্যানবিদরা বলেন যে সঠিক পদ্ধতি ও পরিকল্পনা মেনে চললে ছাদ বাগান দীর্ঘদিন পর্যন্ত টিকে থাকে এবং বাড়ির মূল্যও বৃদ্ধি পায়।

  • ঢাকার আধুনিক আবাসিক প্রকল্পগুলিতে সফল ছাদ বাগানের উদাহরণ
  • কিছু পরিবারের ছাদে অ্যালোভেরা ও পুঁই রোপণের ফলাফল চমৎকার
  • কেস স্টাডি থেকে জানা যায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গাছের গুরুত্ব

এই উদাহরণগুলো আমাদের দেখায় যে সঠিক পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ছাদে গাছ লাগানো শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না বরং পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক সুবিধাও প্রদান করে।

পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক প্রভাব

ছাদে গাছ লাগানোর ফলে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উভয় দিকেই অসংখ্য সুবিধা পাওয়া যায়। পরিবেশের দিক থেকে গাছ বাতাস থেকে ধূলিকণা, বিষাক্ত গ্যাস দূর করে আর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গাছের কারণে বাড়ির আশেপাশে এক প্রাকৃতিক ছায়া তৈরি হয় যা জীবনের মান উন্নত করে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে বাড়ির মূল্য বৃদ্ধিতে ছাদে সবুজ পরিবেশ একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে বাড়ি বিক্রয়ের সময় এই সবুজ প্রকল্প বাড়ির মূল্যায়নে সহায়ক হিসাবে গণ্য হয়। ছাদে গাছ লাগানোর ফলে বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কারণ বাড়ি ঠাণ্ডা থাকার ফলে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার কমে যায়।

  • পরিবেশ রক্ষা ও বায়ু শুদ্ধিতে গাছের ভূমিকা
  • বাড়ির সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পায়
  • বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • মানসিক প্রশান্তি ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়

এই সব সুবিধার পাশাপাশি ছাদে গাছ লাগানোর মাধ্যমে একটি সবুজ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা যায় যা ভবিষ্যতে আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অমূল্য। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে বিবেচিত হয়।

আর পড়ুন: বনজ গাছের তালিকা 

উপসংহার – বাড়ির ছাদে কোন গাছ লাগানো ভালো

বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো কেবল একটি নান্দনিক উদ্যোগ নয় বরং এটি পরিবেশ সংরক্ষণ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক প্রশান্তির এক কার্যকরী উপায়। সঠিক গাছ নির্বাচন, মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পিত রোপণ ও নিয়মিত পরিচর্যা মিলিয়ে একটি সফল ছাদ বাগান তৈরি করা সম্ভব।

ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে ছাদ বাগানকে আরও কার্যকরী করে তোলা যাবে। বাড়ির মালিকদের উচিত নিজেদের ছাদের জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করা। এই উদ্যোগ শুধু পরিবেশ সংরক্ষণে নয় বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

আপনারা যদি ছাদে গাছ লাগানোর এই উদ্যোগে অংশ নিতে চান বা কোনো পরামর্শ দিতে চান তবে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার মতামত আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রকল্প উন্নয়নে সহায়ক হবে।

শেষমেষ, ছাদে গাছ লাগানো আমাদের জীবনে নতুন প্রেরণা এনে দেয়। এটি কেবল আমাদের পরিবেশকে সবুজ করে না বরং বাড়ির অভ্যন্তরেও এক বিশেষ নান্দনিকতা ও শান্তি প্রদান করে। আমরা সবাই মিলে এই উদ্যোগকে সমর্থন করি এবং একটি সবুজ, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *