পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ চাষের সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ

বাংলাদেশে উচ্চমূল্যের বিদেশি ফলের চাষ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষত, এমন ফল যেগুলোর স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও বাজারমূল্য বেশিতা কৃষকদের নতুন আশা দেখাচ্ছে। এই ধারায় পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ বর্তমানে আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় আপেলের একটি জাত হচ্ছে এই পিঙ্ক লেডি। এটি মূলত অস্ট্রেলিয়ায় উদ্ভাবিত হলেও বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এটি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এই আপেল জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর অনন্য গোলাপি রঙ ও মিষ্টি-টক স্বাদ। পিঙ্ক লেডি আপেল সাধারণত উচ্চমানের জাত হিসেবে বিবেচিত হয়। যারা আধুনিক চাষাবাদে আগ্রহী এবং বিদেশি ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ হতে পারে।

এই লেখায় আমরা পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। কীভাবে এই গাছ লাগানো যায়, কোন মাটিতে ভালো হয়, চারা কোথায় পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের মাটিতে এর সম্ভাবনা কেমন—সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলুন জেনে নিই এই গাছ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বাস্তবভিত্তিক তথ্য।


পিঙ্ক লেডি আপেল গাছের পরিচিতি

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Malus domestica। এই জাতটি মূলত “Cripps Pink” নামের একটি হাইব্রিড প্রজাতি থেকে উৎপন্ন। এটি তৈরি হয় ‘গোল্ডেন ডেলিসিয়াস’ ও ‘লেডি উইলিয়ামস’ আপেলের সংকরায়নের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার জন ক্রিপ্স নামক একজন গবেষক এটি উদ্ভাবন করেন।

আর পড়ুন:চাম্বল গাছ 

এই গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য:

  • গাছটি মাঝারি আকৃতির এবং এর ডালপালা ছড়ানো ধরনের

  • পাতাগুলো সবুজ ও ঘন

  • ফল সাধারণত হালকা থেকে গাঢ় গোলাপি রঙের হয়

  • প্রতিটি আপেলের ওজন প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে

এই আপেল গাছ দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। ফুল ফোটার সময় গাছে সাদা-হালকা গোলাপি ফুল দেখা যায়। গ্রীষ্মকালীন সময় গাছটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন গাছে ফল আসতে শুরু করে।

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ দেখতে কেমন—এই প্রশ্নে বলা যায়, গাছটি সবুজ পাতায় ঘেরা, সোজা কাণ্ডযুক্ত এবং পরিপক্ব অবস্থায় এতে অসংখ্য গোলাপি রঙের ফল ঝুলে থাকে যা সৌন্দর্য এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।


পিঙ্ক লেডি আপেল গাছের চারা ও প্রজনন পদ্ধতি

চারা সংগ্রহ করা পিঙ্ক লেডি আপেল চাষের প্রথম ধাপ। এই গাছ সাধারণত বীজ থেকে নয়, বরং গ্রাফটিং বা কলম পদ্ধতির মাধ্যমে রোপণ করা হয়ে থাকে। এতে ফল ধরার সময় কম লাগে এবং গুণগত মান বজায় থাকে।

চারা সংগ্রহের উৎস:

  • সরকারি নার্সারি (যদি কোনো প্রজেক্ট থাকে)

  • বেসরকারি উন্নত নার্সারি বা ফলজ চারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান

  • অনলাইন নার্সারির মাধ্যমে হোম ডেলিভারি অপশন

প্রজননের সাধারণ পদ্ধতি:

  • কলম বা গ্রাফটিং: উপযুক্ত মূল গাছে পিঙ্ক লেডি আপেলের কান্ড জোড়া লাগিয়ে চারা তৈরি করা হয়

  • মাইক্রোপ্রোপাগেশন: টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উন্নত মানের চারা তৈরি করা যায়, যা গবেষণামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়

  • গুটি কলম: এই পদ্ধতি দেশে সীমিত আকারে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে

চারা কেনার সময় অবশ্যই দেখতে হবে সেটি সুস্থ, পোকামাকড়মুক্ত এবং ঝরঝরে পাতাযুক্ত কিনা। কমপক্ষে ২-৩ ফুট লম্বা চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত।


পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ কোন মাটিতে হয়

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ চাষের জন্য মাটির গুণাগুণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত ফলনের জন্য সুনির্দিষ্ট মাটি নির্বাচন প্রয়োজন।

আদর্শ মাটি:

  • দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী

  • মাটির পিএইচ মান থাকতে হবে ৬.০ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে

  • মাটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা থাকতে হবে ভালো

মাটি প্রস্তুতির ধাপ:

  • প্রথমে মাটি গভীরভাবে চাষ করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে

  • প্রতিটি গর্তে প্রাকৃতিক সার যেমন গোবর বা ভার্মিকম্পোস্ট মেশাতে হবে

  • প্রয়োজনে সামান্য চুন প্রয়োগ করে পিএইচ মান ঠিক রাখতে হবে

যে অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয় সেখানে উঁচু জায়গায় চাষ করাই ভালো। নিচু জায়গায় পানি জমলে গাছের শিকড় পঁচে যেতে পারে।


আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব

পিঙ্ক লেডি আপেল একটি মৃদু শীতপ্রধান জলবায়ুর ফসল। তবে কিছু বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ুতে এটি সফলভাবে চাষ করা যাচ্ছে।

প্রয়োজনীয় আবহাওয়া:

  • বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: ১৫°C থেকে ২৫°C

  • শীতকালে হালকা ঠান্ডা দরকার (Chilling hours প্রাপ্তি জরুরি)

  • বৃষ্টিপাত হতে হবে পরিমিত, বিশেষ করে ফল আসার সময় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ক্ষতিকর

বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম, মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা বা রাঙ্গামাটি অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে এই গাছ চাষের চেষ্টা করা যেতে পারে। এছাড়া ছাদবাগানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ছোট পরিসরে চাষ সম্ভব।


পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ লাগানোর নিয়ম

সঠিক নিয়মে গাছ লাগানো হলে ফলন ভালো হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

লাগানোর সময়:

  • অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়

জায়গা নির্বাচন:

  • সূর্যালোকপূর্ণ ও খোলা জায়গা বেছে নিতে হবে

  • মাটি যেন জলাবদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে

রোপণ পদ্ধতি:

  • গর্ত খনন: প্রতিটি গর্ত ২ ফুট চওড়া ও ২ ফুট গভীর হতে হবে
  • সার মেশানো: গর্তের মাটির সাথে ৫-৭ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়ো ও কিছু ছাই মিশিয়ে নিতে হবে
  • চারা স্থাপন: চারাটি গর্তের মাঝে বসিয়ে চারপাশের মাটি দিয়ে ভালোভাবে চেপে দিতে হবে
  • সেচ ও ছায়া: শুরুতে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে এবং গাছটি বড় না হওয়া পর্যন্ত ছায়া দিয়ে রাখতে হবে

দুই গাছের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৮ থেকে ১০ ফুট রাখলে গাছগুলো পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে পারে।


পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ

সঠিক পরিচর্যা ছাড়া পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব নয়। গাছ রোপণের পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যা জরুরি।

পানি দেওয়া:

  • গ্রীষ্মকালে প্রতি ৩–৪ দিনে একবার করে পানি দিতে হবে

  • বর্ষাকালে পানি জমে থাকলে তা দ্রুত নিষ্কাশন করতে হবে

সার প্রয়োগ:

  • প্রতি ৩ মাস পরপর জৈব সার যেমন কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট বা হাড়ের গুঁড়ো দেওয়া উচিত

  • ১ বছর বয়সের গাছে প্রতি গর্তে ৫০-৬০ গ্রাম NPK সার প্রয়োগ করা যেতে পারে

আগাছা নিয়ন্ত্রণ:

  • প্রতি ১৫-২০ দিন পরপর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে

  • আগাছা জমে থাকলে গাছের পুষ্টি গ্রহণ কমে যায়

গাছ ছাঁটাই:

  • শুকনো, রোগাক্রান্ত ও দুর্বল ডাল কেটে ফেলতে হবে

  • ফলের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য বছরে একবার গাছ ছাঁটাই করা উচিত

মালচিং পদ্ধতি:

  • গাছের গোড়ায় শুকনো পাতা বা খড় দিয়ে মালচ দিয়ে দিলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং আগাছা কম হয়

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছে রোগ ও পোকামাকড়ের সমস্যা

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ অন্যান্য ফলজ গাছের মতোই কিছু সাধারণ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। এই রোগগুলো সময়মতো শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ রোগগুলোর মধ্যে আছে ফায়ার ব্লাইট, পাউডারি মিলডিউ ও অ্যাপল স্ক্যাব। ফায়ার ব্লাইট একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা ফুল ও নতুন পাতায় সংক্রমণ ঘটায়। এতে গাছের ডালপালা শুকিয়ে যেতে পারে। পাউডারি মিলডিউ ছত্রাকজনিত রোগ, এতে পাতায় সাদা আস্তরণ পড়ে এবং পাতার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে অ্যাপল স্ক্যাব পাতায় ও ফলে কালো দাগ সৃষ্টি করে, ফলে ফলের গুণমান নষ্ট হয়।

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছে রোগ

পোকামাকড়ের মধ্যে অ্যাফিড, আপেল ম্যাগট ও কোডলিং মথ উল্লেখযোগ্য। অ্যাফিড পাতার নিচে বসে রস চুষে খায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। কোডলিং মথের লার্ভা ফলের ভিতরে ঢুকে গিয়ে তা নষ্ট করে দেয়। এসব সমস্যা মোকাবিলায় জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ ও টেকসই পদ্ধতি। প্রয়োজন অনুযায়ী নিমতেল স্প্রে, ট্র্যাপ বসানো বা বায়োকন্ট্রোল পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে কোন সমস্যায় কী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে তা একজন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে করা উত্তম।

আর পড়ুন: জোজোবা গাছ 


ফল ধারণ ও সংগ্রহ পদ্ধতি

সঠিক পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশে পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। প্রথম বছর খুব বেশি ফল হয় না, তবে পরবর্তী বছরগুলোতে ফলন বাড়ে। সাধারণত গ্রীষ্মের শেষ থেকে শরৎকাল পর্যন্ত গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় আপেলের রঙ হালকা থেকে গাঢ় গোলাপি হয়ে ওঠে এবং চামড়ার উপর হালকা চকচকে ভাব দেখা যায়।

ফল সংগ্রহের জন্য সকালবেলা বা বিকেলে ঠান্ডা পরিবেশে কাজ করা ভালো। ফল খুব টানাটানি করে না তুলে একটু ঘোরিয়ে তুলে নিতে হয় যাতে গাছের ডাল না ভাঙে এবং পরের বছরের ফুল আসতে অসুবিধা না হয়। সংগ্রহ করার পর ফলগুলোকে ছায়াযুক্ত ও ঠান্ডা স্থানে রাখতে হয়। ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হলে পিঙ্ক লেডি আপেল ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে এবং স্বাদ ও পুষ্টি বজায় থাকে। ফল সংগ্রহের সময় আপেলের গায়ে আঘাত না লাগে তা নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ সামান্য চাপ লাগলেও সংরক্ষণের সময় পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।


পিঙ্ক লেডি আপেলের উৎপাদন ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ একটি উচ্চফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০–৪০ কেজি পর্যন্ত আপেল পাওয়া যায়। পরিচর্যার মান ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে এই ফলন কমবেশি হতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে যেসব স্থানে এই আপেল চাষ হচ্ছে, সেখানে গড়ে ২৫–৩০ কেজি ফলন পাওয়া যাচ্ছে যা একটি আশাব্যঞ্জক সূচক।

এই আপেলের বাজারমূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। আমদানি করা পিঙ্ক লেডি আপেল প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। দেশে উৎপাদিত হলে পরিবহন খরচ কমবে এবং লাভের পরিমাণ বাড়বে। একজন কৃষক যদি প্রতি গাছে গড়ে ৩০ কেজি আপেল উৎপাদন করতে পারেন এবং প্রতিকেজি ২৫০ টাকা ধরে বিক্রি করতে পারেন, তবে একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ৭৫০০ টাকা আয় সম্ভব। এই হিসেবে প্রতি বিঘায় ৪০–৫০টি গাছ থাকলে মোট আয় অনেক বেশি হতে পারে।

পিঙ্ক লেডি আপেলের মতো বিদেশি ও প্রিমিয়াম জাতের ফল চাষে বাংলাদেশে বড় বাজার তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণি ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেক্টরের জন্য। এটি শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধিতে নয়, দেশের ফল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে।


পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশে পিঙ্ক লেডি আপেল গাছের চারা সরবরাহ এখনও সীমিত পর্যায়ে থাকলেও ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বর্তমানে কিছু নির্ভরযোগ্য নার্সারি এই গাছের কলমজাত চারা সরবরাহ করছে। এছাড়া অনলাইন নার্সারি যেমন কৃষিবাজার, সবুজবাগান বা ফলবাগান ডট কম থেকে অর্ডার দিয়ে ঘরে বসেই চারা সংগ্রহ করা যায়। তবে চারা কেনার সময় অবশ্যই তা পরীক্ষা করে নিতে হবে যেন রোগমুক্ত ও জীবিত অবস্থায় থাকে।

সরকারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরীক্ষামূলকভাবে কিছু চারা সরবরাহ করছে বিশেষ প্রকল্পের আওতায়। আগ্রহী কৃষকরা স্থানীয় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পারেন। চারা সংগ্রহের আগে অবশ্যই যাচাই করতে হবে যে সেটি আসল পিঙ্ক লেডি আপেলের চারা কি না। ভেজাল বা ভুল জাতের চারা কিনলে পরবর্তীতে ফলন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।


বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার

পিঙ্ক লেডি আপেল চাষে বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্ব অনেক। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু আবহাওয়ার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত চাষপদ্ধতিতে এই গাছকে উপযোগী করে তোলা সম্ভব। বিশেষ করে গ্রীনহাউস প্রযুক্তি বা কন্টেইনার ভিত্তিক ছাদবাগানের মাধ্যমে এই গাছ বাংলাদেশে সফলভাবে চাষ করা সম্ভব হতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি ফলের জাত নিয়ে গবেষণা করছে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রোগমুক্ত ও উচ্চফলনশীল চারা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এর ফলে ভবিষ্যতে কৃষকরা সহজে উন্নতমানের চারা পেতে পারেন এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষ সম্প্রসারণ করা যাবে।

ড্রিপ ইরিগেশন, স্বয়ংক্রিয় সেচ পদ্ধতি ও মালচিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পিঙ্ক লেডি আপেল গাছকে আরও উৎপাদনশীল করে তোলা যায়। এসব প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পানির ব্যবহার কমানো যায় এবং গাছের রুটজোনে আর্দ্রতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। গবেষণা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ই এই আপেল চাষকে দেশে জনপ্রিয় ও লাভজনক করে তুলতে পারে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটিতে পিঙ্ক লেডি আপেল চাষ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সামগ্রিকভাবে সম্ভাবনাময়। পাহাড়ি অঞ্চল বা হালকা ঠান্ডাযুক্ত এলাকা যেমন খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সিলেটের জৈন্তাপুর ও বান্দরবান অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে এর চাষ সম্ভব। এছাড়া শহুরে ছাদবাগানে কন্টেইনারে নিয়ন্ত্রিত পরিচর্যার মাধ্যমে ছোট পরিসরে ফল পাওয়া যাচ্ছে।

তবে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যথাযথ আবহাওয়া না পাওয়া, গাছের চারা সহজে না পাওয়ার সমস্যা, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং বাজারে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব। পাশাপাশি পিঙ্ক লেডি আপেল চাষে প্রাথমিক বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক দ্বিধায় থাকেন।

তবুও এটি এমন একটি উচ্চমূল্যের ফসল যা একবার সফলভাবে চাষ শুরু হলে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি সহযোগিতা করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়, তবে এই গাছ বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

আর পড়ুন: তমাল গাছ 


উপসংহার – পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ

পিঙ্ক লেডি আপেল গাছ শুধু একটি বিদেশি ফলের নাম নয়, এটি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার নাম হয়ে উঠতে পারে। এর চাষে যেমন উচ্চ মুনাফার সুযোগ আছে, তেমনি প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি চর্চার একটি পথও তৈরি হয়। সঠিক মাটি, জলবায়ু, পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে এই আপেল গাছ চাষ দেশের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। বিশেষ করে যারা ছাদবাগান, অর্গানিক চাষ বা রপ্তানিযোগ্য ফল উৎপাদনে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

আপনি যদি পিঙ্ক লেডি আপেল চাষে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে আজই স্থানীয় কৃষি অফিস অথবা একটি নির্ভরযোগ্য নার্সারির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনি নিজেই হতে পারেন এই দেশের একটি নতুন কৃষি বিপ্লবের অংশ। আরও জানতে এই ধরনের বিষয়বস্তু শেয়ার করুন, কমেন্ট করুন এবং অন্যদের জানাতে সহায়তা করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *