চন্দন কাঠের দাম – বাংলাদেশে সাদা ও লাল চন্দনের আপডেট তথ্য

চন্দন কাঠের দাম

চন্দন কাঠ যার ইংরেজি নাম Sandalwood। এটি পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান কাঠ। এই কাঠ শুধু যে দামী তাই নয় এর ঔষধি গুণাবলী, সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য এবং নানান ব্যবহার চন্দন কাঠকে ব্যতিক্রমী করে তুলেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চন্দন কাঠের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। বিশেষত সাদা এবং লাল চন্দনের চাহিদা সর্বাধিক। কিন্তু এর দামের বিষয়টি স্থান ও মানের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের বাজারে চন্দন কাঠ কোথায় পাওয়া যায় এবং চন্দন কাঠের দাম কত হতে পারে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এই পোস্টে তুলে ধরা হয়েছে।

চন্দন কাঠের প্রকারভেদ

চন্দন কাঠ সাধারণত দুইটি প্রধান প্রকারে বিভক্ত: সাদা চন্দন এবং লাল চন্দন।

আর পড়ুন: কাঠগোলাপ গাছের দাম 

সাদা চন্দন (White Sandalwood)

সাদা চন্দন কাঠের বৈশিষ্ট্য হলো এর মিষ্টি সুগন্ধ এবং নরম কাঠের টেক্সচার। এটি মূলত প্রসাধনী এবং সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সাদা চন্দনের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশে সাদা চন্দনের আমদানি মূলত ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে হয়। সাদা চন্দনের দাম সাধারণত কেজি প্রতি ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে যা মান ও উৎসের ওপর নির্ভরশীল।

লাল চন্দন (Red Sandalwood)

লাল চন্দন কাঠের রঙ উজ্জ্বল লাল এবং এটি কাঠের আসবাব ও আভিজাত্যের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর উৎপাদন বেশি। লাল চন্দনের দাম সাধারণত কেজি প্রতি ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

চন্দন কাঠ চেনার উপায়

চন্দন কাঠ কেনার সময় আসল কাঠ চেনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নকল চন্দন কাঠ বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়।

  • গন্ধ ও টেক্সচারের মাধ্যমে পার্থক্য: সাদা চন্দনের একটি প্রাকৃতিক সুগন্ধ রয়েছে যা দীর্ঘস্থায়ী। গন্ধটি খুব মিষ্টি এবং সতেজ। টেক্সচারে এটি নরম এবং মসৃণ।
  • রঙ ও ঘনত্ব: লাল চন্দন কাঠের রঙ উজ্জ্বল এবং কাঠটি অপেক্ষাকৃত ভারী। সাদা চন্দন হালকা রঙের হয় এবং তুলনামূলকভাবে হালকা।
  • আসল চন্দন কাঠের চিহ্নিতকরণ: আসল চন্দন কাঠের কাঠামো খুবই সুসংবদ্ধ এবং পোকামাকড়ের ক্ষতি কম হয়। এটি সহজেই নষ্ট হয় না। বাংলাদেশে আসল চন্দন কাঠ কিনতে হলে নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা থেকে কেনা উচিত।

চন্দন কাঠের উপকারিতা

চন্দন কাঠের উপকারিতা তার বিভিন্ন ব্যবহারে প্রকাশ পায়।

  • প্রসাধনী ও সুগন্ধি শিল্পে ব্যবহার: সাদা চন্দন কাঠ থেকে প্রাপ্ত তেল বিশ্বজুড়ে প্রসাধনী ও সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মিষ্টি ও আরামদায়ক গন্ধ ত্বকের যত্নে কার্যকর।
  • ঔষধি গুণাবলি: চন্দন কাঠ ত্বকের প্রদাহ নিরাময়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো এবং মানসিক প্রশান্তি আনতে সহায়ক। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়।
  • হোম ডেকোরেশন ও কারুশিল্প: লাল চন্দনের কাঠ ঘরের আসবাবপত্র এবং শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না, বরং এর স্থায়িত্ব এবং মানের জন্যও বিখ্যাত।

বাংলাদেশের বাজারে চন্দন কাঠের দাম

চন্দন কাঠের দাম মান এবং উৎসের ওপর নির্ভর করে।

  • সাদা চন্দন এর দাম কত: বাংলাদেশে সাদা চন্দন সাধারণত কেজি প্রতি ৫,০০০-২০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। মূলত এর আমদানি খরচ এবং গুণগত মান এর দামের তারতম্য সৃষ্টি করে।
  • লাল চন্দন এর দাম কত: লাল চন্দন কাঠের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশে কেজি প্রতি লাল চন্দন পাওয়া যায় ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকায়।
  • স্থানভেদে দামের পরিবর্তন: ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বাজারগুলোতে দামের পার্থক্য দেখা যায়। অনলাইন মার্কেটে দাম কিছুটা কম হলেও গুণমান নিয়ে সন্দেহ থাকে।

আর পড়ুন: মেহগনি কাঠের দরজার দাম ও ডিজাইন 

চন্দন কাঠ কোথায় পাওয়া যায়

চন্দন কাঠ পাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস খুঁজে পাওয়া জরুরি।

  • স্থানীয় উৎস এবং আমদানি: বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে চন্দন কাঠের চাষ না হলেও, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এর আমদানি হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বড় কাঠের বাজারগুলোতে চন্দন কাঠ পাওয়া যায়।
  • বনজসম্পদ ও সংরক্ষণ: বৈশ্বিকভাবে চন্দন কাঠ বনজসম্পদ হিসেবে সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশেও চন্দন কাঠ আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।
  • নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার তালিকা: বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (যেমন: Daraz, Evaly) এবং বড় বাজারগুলোতে চন্দন কাঠ বিক্রি হয়। তবে আসল কাঠ নিশ্চিত করতে বিক্রেতার রেটিং ও রিভিউ দেখে কেনা উচিত।

চন্দন কাঠের দাম

চন্দন কাঠের ব্যবহার এবং এর ঔজ্জ্বল্য

চন্দন কাঠ তার বহুমুখী ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। এর অন্যতম প্রধান ব্যবহার হচ্ছে প্রসাধনী এবং সুগন্ধি তৈরিতে। সাদা চন্দন কাঠের তেল যা সাধারণত স্যান্ডালউড অয়েল নামে পরিচিত, উচ্চমানের সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই তেলের সুবাস দীর্ঘস্থায়ী এবং ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় সাদা চন্দন তেল ব্যবহৃত হয় ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে। ত্বকের প্রদাহ কমানো, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং ব্রণ বা র‍্যাশ দূর করার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর। এছাড়া এর সুগন্ধ মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

লাল চন্দন কাঠের ব্যবহার তার কাঠামোগত শক্তি এবং দৃষ্টিনন্দন লালেরঙের জন্য প্রসিদ্ধ। এটি বিশেষত আসবাবপত্র, হস্তশিল্প এবং মূর্তি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। লাল চন্দন কাঠ দিয়ে তৈরি ফার্নিচার এবং শিল্পকর্ম শুধু ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে না এটি টেকসই হওয়ার কারণে বহু বছর ধরে একই রকম থাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে লাল চন্দন কাঠ দিয়ে তৈরি মন্দিরের দরজা, মূর্তি এবং নানা ধর্মীয় উপকরণ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এই কাঠ দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র এবং শিল্পকর্মের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চন্দন কাঠের আন্তর্জাতিক বাজার এবং এর প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারে চন্দন কাঠের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চন্দন কাঠ রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে রয়েছে। ভারত সাদা চন্দনের জন্য বিখ্যাত যেখানে লাল চন্দনের প্রধান উৎপাদনকারী অঞ্চল হলো অন্ধ্রপ্রদেশ। অস্ট্রেলিয়ার চন্দন কাঠ যা “ইন্ডিয়ান স্যান্ডালউড” নামে পরিচিত গুণগত মানে শীর্ষে।

বাংলাদেশের বাজারে এই আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রভাব স্পষ্ট। সাদা এবং লাল চন্দন কাঠের আমদানির ওপর নির্ভর করে দেশের বাজার। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চন্দন কাঠের দামের ওঠানামা সরাসরি বাংলাদেশের দামে প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে চন্দন কাঠের দাম বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশেও এর দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশে সাধারণত সাদা চন্দন কেজি প্রতি ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকায় এবং লাল চন্দন ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকায় বিক্রি হয়।

আর পড়ুন: সেগুন গাছের দাম 

চন্দন কাঠ কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

চন্দন কাঠ কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। প্রথমত আসল চন্দন কাঠ নিশ্চিত করা। বাজারে প্রচুর নকল চন্দন কাঠ পাওয়া যায় যা দেখতে প্রায় একই রকম হলেও এর গুণগত মান অনেক কম। আসল চন্দন কাঠ চেনার জন্য এর সুগন্ধ এবং টেক্সচারের দিকে নজর দিতে হবে। সাদা চন্দন কাঠের মিষ্টি সুগন্ধ এবং মসৃণ টেক্সচার থাকলেও নকল কাঠের গন্ধ কম বা কৃত্রিম হয়।

দ্বিতীয়ত নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশে চন্দন কাঠের নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা পাওয়া সহজ নয়। অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং স্থানীয় বাজারে আসল কাঠের জন্য রিভিউ এবং রেটিং দেখে কেনা উচিত। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা কাঠ কেনার ক্ষেত্রে সঠিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা উচিত।

চন্দন কাঠের চাষাবাদ এবং বনজসম্পদের সুরক্ষা

বিশ্বব্যাপী চন্দন কাঠের চাষাবাদ এখন পরিবেশ রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে চন্দন কাঠের গাছ ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। বিশেষত সাদা চন্দন গাছের বাণিজ্যিক চাষাবাদ অনেক দেশে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভারতের কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চন্দন কাঠের চাষাবাদ করা হয়।

বাংলাদেশে চন্দন কাঠের গাছের চাষাবাদ এখনো তেমন প্রচলিত নয়। তবে এটি দেশের বনজসম্পদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সরকারের উদ্যোগে চন্দন কাঠের গাছের চাষাবাদ শুরু হলে দেশের বাজারে এর সরবরাহ বাড়বে এবং দামও কিছুটা কমবে। এছাড়া চন্দন কাঠের গাছ চাষের মাধ্যমে বনজসম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।

আর পড়ুন: পৃথিবীতে কত প্রকার গাছ আছে 

উপসংহার

চন্দন কাঠ একটি দামী এবং বহুমুখী সম্পদ যা শুধুমাত্র প্রসাধনী বা হস্তশিল্প তৈরিতেই নয় পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঠিক দামের তথ্য, আসল চন্দন কাঠ চেনার কৌশল এবং ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে সচেতনতা এই চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে।

চন্দন কাঠ নিয়ে গবেষণা এবং চাষাবাদের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। চন্দন কাঠের ব্যবহার এবং এর গুরুত্ব বুঝে আমাদের সবাইকে এর সঠিক ব্যবহারে ভূমিকা রাখতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *