গেওয়া গাছ – সুন্দরবনের পরিবেশবান্ধব রক্ষাকবচ

গেওয়া গাছ

গেওয়া গাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে সুন্দরবন অঞ্চলে জন্মানো এক প্রকার গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ গাছ। এটি মূলত একধরনের ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ, যার কাঠ, পাতা, এমনকি নির্গত তরল সবকিছুই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লোকজনের কাছে এটি পরিচিত “গেওয়া” নামে। অনেকেই একে “গেওয়া বনগাছ” বা “গেওয়া কাঠ” হিসেবেও চেনে। এটি মূলত লবণাক্ত পরিবেশ সহনশীল এক ধরণের গাছ, যা জোয়ার-ভাটার এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

গেওয়া গাছ প্রধানত সুন্দরবনের নদীতীরবর্তী এলাকা, বাইন-মাইন গাছের পাশে এবং অগভীর কাদামাটিতে পাওয়া যায়। এছাড়া কক্সবাজার, বরগুনা, পটুয়াখালী, খুলনা, ভোলা ইত্যাদি অঞ্চলেও ছোট পরিসরে এই গাছ দেখা যায়। এর কাঠ ঘন, মজবুত এবং সহজে পচে না যাওয়ার কারণে অনেক সময় নৌকা বা ঘরের খুঁটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গেওয়া গাছের বিশেষত্ব হলো এর শরীর থেকে নির্গত একধরনের সাদা রঙের তরল, যেটি মানুষের চোখ বা ত্বকে লাগলে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। একারণে স্থানীয়ভাবে একে “বিষাক্ত গাছ” বলেও অভিহিত করা হয়, যদিও নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহারে এটি ঔষধি গাছ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।

আর পড়ুন:লজ্জাবতী গাছ

গাছটির আবহমানকাল থেকেই স্থানীয় জনগণের জীবন ও জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মৌয়াল, বনজীবী ও পরিবেশবাদীদের কাছে গেওয়া গাছ এক অভিন্ন নাম। জলবায়ু পরিবর্তন এবং উপকূলীয় ভূমিক্ষয় রোধে এই গাছটির উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


গেওয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ও শ্রেণিবিন্যাস

গেওয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Excoecaria agallocha। এটি ইউফোরবিয়াসি (Euphorbiaceae) গোত্রভুক্ত এক ধরনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতি, যা সারা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। গাছটি Excoecaria গণের অন্তর্ভুক্ত এবং এর উদ্ভিদবৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস নিম্নরূপ:

  • রাজ্য (Kingdom): Plantae

  • বিভাগ (Phylum): Angiosperms

  • শ্রেণি (Class): Eudicots

  • গোত্র (Family): Euphorbiaceae

  • গণ (Genus): Excoecaria

  • প্রজাতি (Species): Excoecaria agallocha

এই গাছটি ইংরেজিতে ‘Blind-your-eye mangrove’ নামেও পরিচিত, কারণ এর দুধের মতো সাদা রস চোখে লাগলে অন্ধত্বের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে এই ভয়ংকর রসেই আবার লুকিয়ে আছে বহু ঔষধি গুণ।

গেওয়া গাছ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পাওয়া যায়। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশে এর বিস্তার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সুন্দরবন এই গাছটির সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আবাসস্থল।

বৈজ্ঞানিকভাবে গেওয়া গাছ প্রমাণ করে যে ম্যানগ্রোভ গাছেরা কিভাবে কঠিন পরিবেশে অভিযোজিত হয়। এর শ্বাসমূল বা pneumatophores গাছটিকে জলাবদ্ধ মাটিতেও টিকে থাকতে সহায়তা করে। এছাড়া গাছটির পাতায় থাকা একধরনের সাল্ট ক্রিস্টাল বা লবণের কণা এটিকে উচ্চ লবণাক্ততা সহ্য করতে সহায়তা করে, যা উপকূলীয় গাছ হিসেবে এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।


সুন্দরবনের গেওয়া গাছ – পরিবেশগত গুরুত্ব

গেওয়া গাছ শুধু একটি উদ্ভিদ নয়, এটি উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং এর জৈববৈচিত্র্যে গেওয়া গাছের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল এবং নদীতীরবর্তী এলাকায় গেওয়া গাছ ভূমিক্ষয় রোধে এক অনন্য প্রাকৃতিক বাঁধ হিসেবে কাজ করে।

এই গাছটির শিকড়ের বিস্তার ও গঠন এমনভাবে তৈরি যে এটি নদী বা সমুদ্রের ঢেউ ও জোয়ারের প্রবাহকে ভেঙে দেয়, ফলে মাটি ক্ষয় হয় না এবং নদীতীর রক্ষা পায়। এই দিক থেকে গেওয়া গাছ এক ধরনের প্রাকৃতিক বাঁধের কাজ করে যা একবার স্থাপন করা হলে বছর বছর ধরে উপকূল রক্ষা করে।

সুন্দরবনের মৌয়ালরা মৌ সংগ্রহের সময় গেওয়া গাছ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে পছন্দ করেন কারণ এ গাছের ফুলে মৌমাছির আনাগোনা অনেক বেশি। যদিও এর ফুল খুব ছোট এবং অতটা নজরকাড়া নয়, তবে এই ফুল থেকেই উচ্চমানের সুন্দরবনী মধু উৎপন্ন হয় যা আন্তর্জাতিকভাবে রপ্তানিযোগ্য এবং অনেক চাহিদাসম্পন্ন।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গেওয়া গাছের অবদান অনস্বীকার্য। এটি বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায় এবং লবণাক্ত পানিতে থাকা অবস্থায়ও প্রাণীজ জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, সুন্দরবনের হরিণ, বানর ও বিভিন্ন পাখি গেওয়া গাছের আশেপাশে বেশি দেখা যায় কারণ এখানকার পোকামাকড় ও গাছের ছায়া তাদের জন্য উপযোগী আবাস।

সুন্দরবনের বনজ সম্পদ হিসেবে এই গাছকে সংরক্ষণ করা না হলে তা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গেওয়া গাছ কেবল গাছই নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা – বন ও জনপদের সুরক্ষাকবচ।

সুন্দরবনের গেওয়া গাছ


গেওয়া গাছের গঠনগত বৈশিষ্ট্য

গেওয়া গাছ একটি মধ্যম আকারের বৃক্ষ, সাধারণত ৬ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি দেখতে ছড়ানো ডাল-পালা যুক্ত ও ঘন পত্রযুক্ত। এর গঠন অত্যন্ত উপযোগী করে গড়ে উঠেছে উপকূলীয় দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে টিকে থাকার জন্য।

এই গাছের পাতাগুলো সরল প্রকৃতির ও প্রায় ৪–৮ সেমি লম্বা এবং ২–৪ সেমি চওড়া। পাতার কিনারা সূক্ষ্মভাবে খাঁজকাটা এবং ওপরে চকচকে সবুজ। বর্ষাকালে গাছ থেকে বিশেষ ধরনের ছোট ছোট হলুদাভ ফুল ফোটে যা একত্রে থোকা আকারে শাখার ডগায় অবস্থান করে।

ফলের আকৃতি সাধারণত গোলাকার, ভেতরে ২–৩টি বিচি থাকে। গ্রীষ্ম শেষে ফল পরিপক্ক হয় এবং পড়ে যায়। এই গাছের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর দুধের মতো সাদা রস, যেটি আঘাত পেলে বের হয়ে আসে এবং মানবদেহে সংস্পর্শে এলে চামড়ায় চুলকানি ও চোখে লাগলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তবে এই রসই অনেক সময় ঔষধি গুণে ভরা থাকে, যেমন: চর্মরোগের নিরাময়, ফোড়া শুকানো ইত্যাদি। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এ গাছের রস সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর শ্বাসমূল বা pneumatophores, যা গাছটিকে অক্সিজেন গ্রহণে সহায়তা করে। এ শ্বাসমূলগুলো মাটির বাইরে উঁচু হয়ে থাকে, যা বন্যার সময় গাছের শিকড়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটি গেওয়া গাছকে এক অসাধারণ অভিযোজিত ম্যানগ্রোভ প্রজাতিতে পরিণত করেছে।

গেওয়া গাছের কাঠের ব্যবহার

গেওয়া গাছের কাঠ ঘন, মাঝারি শক্তিশালী এবং লবণাক্ত পরিবেশে জন্মানো হওয়ায় বেশ টেকসই। এর কাঠ সাধারণত বাদামি বর্ণের এবং সহজে পচে না। এই কাঠ কিছুটা ভারী, কিন্তু শুষ্ক পরিবেশে সহজে ফাটে না, যা একে প্রাকৃতিক কাঠামো নির্মাণে উপযোগী করে তোলে।

গ্রামাঞ্চলে এই কাঠ দিয়ে ঘরের খুঁটি, বারান্দার ফ্রেম, বেড়া এবং মাচা তৈরি করা হয়। এছাড়া গৃহস্থালি কাঠ হিসেবে রান্নার জ্বালানি হিসেবেও গেওয়ার কাঠ অনেক এলাকায় ব্যবহৃত হয়। বাজারে এই কাঠের দাম অন্যান্য কাঠের তুলনায় কিছুটা কম হলেও এলাকাভেদে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত প্রতি ঘনফুট গেওয়া কাঠের দাম প্রায় ২০০–৩০০ টাকা হতে পারে।

তবে গেওয়া কাঠে কিছু পরিমাণে বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, তাই খাদ্য প্রস্তুত বা সংরক্ষণের পাত্র হিসেবে এটি ব্যবহার উপযোগী নয়। কাঠের ব্যবহারের সময় হাত ধুয়ে নেওয়া এবং চোখে লাগা থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।


গেওয়া গাছের চিকিৎসাগত ও ভেষজ ব্যবহার

গেওয়া গাছ বহুকাল ধরে স্থানীয় হাকিম বা কবিরাজদের কাছে ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে গাছের ছাল এবং দুধের মতো রসে রয়েছে নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান যেগুলো চর্মরোগ, পেটব্যথা, বাতব্যথা ও ফোড়ার মতো সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়।

চর্মরোগে আক্রান্ত জায়গায় গেওয়া গাছের রস সরাসরি না লাগিয়ে তা একাধিক বার পানি দিয়ে ধুয়ে পাতলা করে ব্যবহার করার প্রচলন আছে। এছাড়া এর ছাল সিদ্ধ করে গরম পানিতে ডুবিয়ে বাতজ ব্যথার স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

তবে এই গাছের উপাদান চোখে বা কাঁচা ত্বকে লাগলে তা জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি এমনকি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গেওয়ার রস বা ছাল কোনো অবস্থাতেই সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়।

চিকিৎসার পাশাপাশি আয়ুর্বেদ ও ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতিতে গেওয়া গাছের নির্যাস কখনো কখনো ব্যবহার করা হয়, তবে এসব ক্ষেত্রেও মাত্রা ও প্রস্তুত প্রণালির ব্যাপারে কঠোর নিয়ম মানা হয়।

আর পড়ুন:জয়তুন গাছ 


স্থানীয় জনগণের জীবিকায় গেওয়া গাছের ভূমিকা

সুন্দরবন ঘেঁষা অঞ্চলের মানুষদের জীবিকা ও জীবনধারায় গেওয়া গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌয়াল, বাওয়াল ও স্থানীয় বনজীবীরা গেওয়া গাছের ছায়া ও কাঠ ব্যবহার করে বেঁচে থাকার জন্য নানাভাবে নির্ভরশীল।

গরমের দিনে নদীতীরে গেওয়া গাছের ছায়া মৎস্যজীবীদের বিশ্রামের জায়গা হিসেবে কাজ করে। মৌয়ালরা গেওয়া গাছের ফুলকে মৌমাছির প্রিয় উৎস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, যার ফলে সুন্দরবনের মধু উৎপাদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

গৃহনির্মাণ, মাটির ঘর পোক্ত করা কিংবা ছোট পণ্য তৈরিতে গেওয়া কাঠের ব্যবহার এখনো অনেক এলাকায় প্রচলিত। এমনকি কেউ কেউ গাছের বাকল বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করে থাকেন। ফলে গেওয়া গাছ শুধু পরিবেশগত নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও স্থানীয় জনগণের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।


গেওয়া গাছ চাষের উপযুক্ত পরিবেশ ও সংরক্ষণ

গেওয়া গাছ সাধারণত বীজের মাধ্যমে জন্মে, যদিও কদাচিৎ চারা লাগিয়েও এটি চাষ করা যায়। এটি স্বাভাবিকভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের নরম ও লবণাক্ত কাদামাটিতে ভালো জন্মে। বাংলাদেশে বিশেষ করে সুন্দরবন, কক্সবাজার, বরগুনা, ভোলানোয়াখালী অঞ্চলে গেওয়া গাছ প্রাকৃতিকভাবে বিস্তৃত।

গেওয়া গাছ চাষে বিশেষ ধরনের যত্নের প্রয়োজন নেই, তবে পরিবেশ ও পানির মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলেই এটি স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জুন-জুলাই মাস গেওয়া গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে মাটির গঠন, জলাবদ্ধতা এবং জোয়ার-ভাটার উপযোগিতা অনুযায়ী অঞ্চল নির্ধারণ জরুরি।

বাংলাদেশ সরকার ও বন বিভাগ ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় গেওয়া গাছকে একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এই গাছ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। আইন অনুযায়ী, সুন্দরবন থেকে অনুমতি ছাড়া গেওয়া গাছ কাটলে শাস্তির বিধান রয়েছে। বন রক্ষায় স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে স্কুল-কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পরিবেশ সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পরিচালনা করে।


গেওয়া গাছ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা ও সতর্কতা

গেওয়া গাছকে অনেকে শুধু “বিষাক্ত গাছ” বলে অবজ্ঞা করেন। কারণ এর রস চোখে লাগলে অন্ধত্বের আশঙ্কা থাকে—এটি সত্য হলেও পুরো গাছই ক্ষতিকর নয়। বরং নিয়ন্ত্রিত ও সচেতন ব্যবহারে গেওয়া গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে।

একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো—গেওয়া গাছ লাগালে পরিবেশে পোকামাকড় বা সাপের প্রকোপ বাড়ে। এই ধারণা ভিত্তিহীন এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। বরং এই গাছ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

তবে গেওয়া গাছ কাটার পর, রস ব্যবহারের সময় এবং কাঠ সংগ্রহের সময় অবশ্যই হাত ও চোখে সংস্পর্শ এড়ানো উচিত। বাচ্চাদের কাছ থেকে গাছটি দূরে রাখা এবং গৃহস্থালি পরিবেশে গাছটি লাগানোর সময় পর্যাপ্ত দূরত্ব ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

আর পড়ুন:তুলা গাছ


উপসংহার

গেওয়া গাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রাণ। জলবায়ু পরিবর্তনের সময়োপযোগী মোকাবিলায়, মাটির ক্ষয় রোধে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকায় এর অবদান অপরিসীম। অথচ আজও অনেকে এর উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন নন।

এই গাছের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। শুধু কাঠ বা ঔষধি গাছ হিসেবে নয়, বরং পরিবেশ রক্ষায় এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখতে হবে গেওয়াকে। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ একসঙ্গে সচেতন হলে এই গাছ সংরক্ষণ সম্ভব।

আপনি যদি সুন্দরবনের এই প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ গেওয়া গাছ সম্পর্কে এই লেখাটি উপভোগ করে থাকেন, তাহলে এটি আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন। কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার এলাকার গেওয়া গাছের অভিজ্ঞতা বা তথ্য। আরও এমন তথ্যবহুল পরিবেশ সম্পর্কিত কনটেন্ট পড়তে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও ঘুরে দেখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *