কাঠ কালার রং – প্রকারভেদ, দাম এবং সঠিক ব্যবহার গাইড ২০২৪

কাঠ কালার রং

কাঠের ফার্নিচার বা কাঠের যে কোনো আইটেমে রং প্রয়োগ করা হলে সেটির সৌন্দর্য অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। কাঠের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখতে, নান্দনিকতা বাড়াতে এবং কাঠকে দীর্ঘস্থায়ী করতে কাঠ কালার রং এর প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঠ কালার রং কাঠকে আর্দ্রতা, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে সুরক্ষিত রাখে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের কাঠ কালার রং পাওয়া যায় যা রঙের ধরন, গুণগত মান এবং মূল্য অনুসারে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা কাঠ কালার রংয়ের প্রকারভেদ, প্রয়োগ পদ্ধতি, দাম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আর পড়ুন:  গাছের পাতা সবুজ হয় কেন

পোস্টে যা যা থাকছে...

কাঠ কালার রং এর প্রকারভেদ

কাঠ কালার রং মূলত তিনটি প্রধান প্রকারে বিভক্ত যা কাঠের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়:

অয়েল বেসড রং

অয়েল বেসড রং কাঠে দীর্ঘস্থায়ী এবং গভীর রং প্রদান করে যা সহজেই কাঠের শিরা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। এই রংটি সাধারণত রৌদ্রোজ্জ্বল স্থান বা বাইরে ব্যবহারের জন্য আদর্শ। বাংলাদেশে অয়েল বেসড রং এর দাম প্রতি লিটার ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ও কোয়ালিটি অনুযায়ী। উদাহরণস্বরূপ Berger Wood Coating এবং Asian Paints-এর অয়েল বেসড রং অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ওয়াটার বেসড রং

ওয়াটার বেসড রং পরিবেশবান্ধব এবং ঘরের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য ভালো, কারণ এতে গন্ধ কম এবং দ্রুত শুকিয়ে যায়। সাধারণত গৃহস্থালির আসবাবের জন্য এটি অধিক উপযোগী। বাংলাদেশে ওয়াটার বেসড রং এর দাম প্রতি লিটার ৪০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত হয় তবে প্রকারভেদে ভিন্ন হতে পারে। এই রংটি আসবাবকে পানি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং সহজে পরিষ্কারযোগ্য।

বার্নিশ এবং ল্যাকার

বার্নিশ এবং ল্যাকার কাঠের উপর একটি স্বচ্ছ কোটিং দেয় যা কাঠের প্রাকৃতিক রঙকে অক্ষুন্ন রাখে। বার্নিশ কাঠের উপর একটি মসৃণ এবং চকচকে ফিনিশ প্রদান করে যা কাঠের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশে বার্নিশ এবং ল্যাকার প্রতি লিটার ৫০০-৮০০ টাকায় পাওয়া যায়। Berger এবং Dulux ব্র্যান্ডের বার্নিশ পণ্যের চাহিদা বেশি।

কাঠালি কালার রং

এটি এক ধরনের বিশেষ রং যা মূলত কাঠের উপর আলাদা রঙের শেড প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক কাঠের শেড তৈরির জন্য এই রংটি ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে কাঠালি কালার রং ৪০০-৬৫০ টাকায় পাওয়া যায়।

কাঠ কালার রং এর প্রয়োগের ধরন

কাঠের রং প্রয়োগের পদ্ধতি তার সৌন্দর্য এবং স্থায়িত্বে বড় প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন প্রয়োগ পদ্ধতির মধ্যে নিচেরগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়:

  • সরাসরি ব্রাশিং মেথড: ব্রাশিং মেথডের মাধ্যমে কাঠের রং প্রয়োগ করা সহজ এবং সাশ্রয়ী। বিশেষত কাঠের ছোট বা সূক্ষ্ম জায়গায় ব্রাশ ব্যবহার করে রং প্রয়োগ করলে রং সহজে বসে এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি সাধারণত ঘরের ছোট কাঠের আসবাবে ব্যবহার হয়।
  • স্প্রে মেথড: স্প্রে মেথড দ্রুত এবং সমানভাবে রং প্রয়োগের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষত বড় কাঠের পৃষ্ঠে রং লাগানোর জন্য এটি উপযোগী। তবে এই পদ্ধতিতে রংয়ের কিছু অপচয় ঘটে। স্প্রে মেশিনের খরচের জন্য এটি কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • রোলার মেথড: রোলার ব্যবহার করে রং প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং সমানভাবে কাঠে রং বসানো সম্ভব। বড় পৃষ্ঠের কাঠের আসবাব যেমন দরজা বা টেবিলে এটি অধিক কার্যকর। তবে এটি কিছু সময়ে ছোট জায়গায় ব্যবহারে অসুবিধা হতে পারে।

কাঠ কালার রং কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশে কাঠ কালার রং বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় উৎস তুলে ধরা হলো:

  • স্থানীয় মার্কেট: বিভিন্ন স্থানীয় হার্ডওয়্যার দোকান বা পেইন্ট শপে কাঠের রং পাওয়া যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনা শহরের বাজারে প্রচুর ধরনের রংয়ের ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। স্থানীয় দোকানে প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাঠের রং কিনতে পারেন।
  • অনলাইন মার্কেটপ্লেস: বাংলাদেশে বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে যেমন Daraz, Pickaboo ইত্যাদিতে কাঠ কালার রং পাওয়া যায়। অনলাইন কেনাকাটার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ধরনের কাঠের রং সহজেই কিনতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে রংয়ের দাম প্রায় ৩০০-৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায় ব্র্যান্ড ও কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে।

কাঠ কালার রং এর দাম

বাংলাদেশে কাঠ কালার রংয়ের দাম ব্র্যান্ড এবং গুণমান অনুসারে বিভিন্ন রকম হতে পারে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের দাম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:

  • Berger: Berger ব্র্যান্ডের কাঠের রং প্রতি লিটার প্রায় ৫৫০-৮০০ টাকার মধ্যে।
  • Asian Paints: Asian Paints-এর কাঠের রং প্রতি লিটার ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
  • Dulux: Dulux ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম কাঠের রং প্রতি লিটার ৬০০-৯০০ টাকার মধ্যে।

দাম নির্ভর করে পেইন্টের গুণমান, প্রকার এবং বাজারের চাহিদার উপর।

আর পড়ুন: বাংলাদেশের ঔষধি গাছের তালিকা 

কাঠ কালার বার্নিশ ও এর প্রয়োগ

বার্নিশ হল এক ধরনের স্বচ্ছ কোটিং যা কাঠের রং এবং আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এটি কাঠের পৃষ্ঠে একটি মসৃণ এবং চকচকে আবরণ তৈরি করে যা কাঠকে আরও স্থায়িত্ব প্রদান করে। বার্নিশ সাধারণত গৃহস্থালী আসবাবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের বার্নিশ আছে যেমন ম্যাট বার্নিশ, গ্লসি বার্নিশ এবং সেমি-গ্লস বার্নিশ। বার্নিশের দাম সাধারণত ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এবং এটি প্রয়োগের জন্য ব্রাশ বা স্প্রে উভয়ই ব্যবহার করা যায়।

কাঠের রং তৈরির নিয়ম

কাঠের রং প্রয়োগের আগে সঠিক প্রস্তুতি এবং রং মিশ্রণের নিয়ম মেনে চললে কাঠের উপর রং দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সুন্দরভাবে বসে। নিচে কাঠের রং তৈরির প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

  • রং প্রয়োগের পূর্বে কাঠের প্রস্তুতি: প্রথমত কাঠের পৃষ্ঠটি মসৃণ করতে স্যান্ডপেপার ব্যবহার করা হয়। কাঠের পুরনো আসবাব বা কাঠের উপরে পূর্বের রং থাকলে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে তবেই নতুন রং প্রয়োগ করতে হবে। স্যান্ডিং এর মাধ্যমে কাঠের পৃষ্ঠ মসৃণ হয় এবং এতে রং ভালোভাবে বসে।
  • রং মিশ্রণের সঠিক পদ্ধতি: প্রথমে কাঠের জন্য নির্ধারিত রং ও থিনার সমান পরিমাণে মিশিয়ে নিতে হয়। পছন্দ অনুযায়ী রংয়ে প্রয়োজনমত বার্নিশ বা ল্যাকার যোগ করা যায়। রং মিশানোর সময় এক্ষেত্রে ভালো মানের ব্র্যান্ডের থিনার ব্যবহার করা উচিত যাতে রং দ্রুত শুকিয়ে কাঠের উপর লেগে থাকে।

সঠিকভাবে রং প্রয়োগের ধাপ

  • প্রাথমিক স্তরে ব্রাশ বা রোলারের মাধ্যমে একটি পাতলা কোট লাগিয়ে রং শুকাতে দিন।
  •  প্রথম স্তর শুকানোর পর আরেকটি কোট লাগাতে হবে যাতে কাঠের রং আরও উজ্জ্বল এবং স্থায়ী হয়।
  • প্রয়োজনে বার্নিশ কোটিং ব্যবহার করে রং-এর স্থায়িত্ব বাড়ানো যেতে পারে।

কাঠ কালার রং ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

কাঠ কালার রং ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা ও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিচে কাঠের রং প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা ও অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো:

সুবিধা

  • কাঠের আয়ু বৃদ্ধি: কাঠের রং প্রয়োগের মাধ্যমে কাঠের পৃষ্ঠে একটি সুরক্ষামূলক স্তর তৈরি হয় যা কাঠের আয়ু বৃদ্ধি করে।
  • আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা: কাঠের রং জলরোধী স্তর প্রদান করে যা কাঠকে আর্দ্রতা থেকে রক্ষা করে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কমায়।
  • দৃষ্টিনন্দনতা বৃদ্ধি: কাঠ কালার রং প্রয়োগের মাধ্যমে কাঠের সৌন্দর্য বাড়ে এবং সেটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

অসুবিধা

  • প্রয়োগে খরচ বেশি: রং এবং প্রয়োজনীয় উপাদান কেনার খরচ বেশি হতে পারে বিশেষত যদি ভালো মানের পণ্য ব্যবহার করা হয়।
  • নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন: কাঠের রং দীর্ঘস্থায়ী করতে নিয়মিতভাবে পরিষ্কার ও মেরামত করতে হয়।

কাঠ রং করার সময় সাধারণ ভুল এবং এগুলো থেকে বিরত থাকার উপায়

কাঠ রং করার সময় সাধারণত কিছু ভুল হয়ে থাকে যা কাঠের সৌন্দর্য এবং স্থায়িত্ব নষ্ট করে দিতে পারে। এই ভুলগুলো এড়াতে নিচের নির্দেশনাগুলো মেনে চলা উচিত:

  • অপরিষ্কার পৃষ্ঠে রং প্রয়োগ: কাঠের উপর ধুলো, ময়লা বা পুরনো রং থাকলে সেগুলো সরিয়ে সঠিকভাবে স্যান্ডিং না করলে রং সঠিকভাবে বসে না।
  • অতিরিক্ত রং প্রয়োগ: প্রথম কোটের পরে দ্বিতীয় কোট শুকানোর আগে রং প্রয়োগ করলে রং অসমভাবে বসে যায় এবং সুন্দর ফিনিশিং হয় না।
  • সঠিক পদ্ধতিতে রং না মেশানো: থিনারের সঠিক পরিমাণে না মেশালে রং দ্রুত শুকিয়ে কাঠের উপর সঠিকভাবে বসে না।

কাঠ কালার রং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও দীর্ঘস্থায়ী করার টিপস

কাঠের রং দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং রংকে নতুনের মত ধরে রাখতে কিছু রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কাঠের রং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার কিছু কার্যকরী টিপস দেয়া হলো:

  • নিয়মিত পরিষ্কার: কাঠের আসবাব বা পৃষ্ঠে ধুলো জমতে না দিয়ে নিয়মিত মাইল্ড ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • পানি ও সরাসরি রোদ থেকে রক্ষা: কাঠের রং দীর্ঘস্থায়ী রাখতে কাঠকে পানি এবং সরাসরি রোদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ: কাঠের রং বা বার্নিশের উপরের কোট বার্ষিকভাবে বা প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরায় লাগানো উচিত যাতে কাঠের রং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে।

আর পড়ুন: ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ 

কাঠ কালার রং এর জন্য উপযুক্ত ব্র্যান্ড নির্বাচন করার পদ্ধতি

কাঠের জন্য সঠিক ব্র্যান্ড নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের রং দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কাঠের পৃষ্ঠে সুন্দর ফিনিশিং প্রদান করে। বাংলাদেশে অনেক ধরনের ব্র্যান্ড পাওয়া যায় তবে সঠিক ব্র্যান্ড নির্বাচন করতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:

  • ব্র্যান্ডের খ্যাতি ও রিভিউ: Berger, Asian Paints, Dulux ইত্যাদি কাঠের রংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয়। পণ্য সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের রিভিউ এবং বাজারের খ্যাতি দেখে পছন্দ করা যেতে পারে।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী প্রকার নির্বাচন: কোন কাঠের জন্য অয়েল বেসড রং প্রয়োজন। কোথাও ওয়াটার বেসড রং বা বার্নিশ উপযোগী—এমনটা নির্ভর করে ব্যবহারের ধরন ও কাঠের অবস্থানের উপর।
  • দাম ও মান: সস্তা মানের পেইন্ট কাঠের গুণগত মান নষ্ট করতে পারে তাই বাজেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মধ্যম থেকে উচ্চ মানের ব্র্যান্ড বেছে নেয়া উচিত।

কাঠ কালার রং এর উপর আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব

আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব কাঠের রংয়ের স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশে গরম এবং বর্ষাকালের প্রভাব কাঠের রং-এর স্থায়িত্বে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। কাঠের রং দীর্ঘস্থায়ী রাখতে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি:

  • গরমের সময়ে রং প্রয়োগ: গরমকালে রং দ্রুত শুকিয়ে যায় তাই তাড়াতাড়ি প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে খুব বেশি গরমে সরাসরি রোদে রং করলে তা ফেটে যেতে পারে।
  • বর্ষাকালে রং প্রয়োগ এড়ানো: বর্ষাকালে রং প্রয়োগে কাঠের আর্দ্রতা বেড়ে যায় ফলে রং ঠিকভাবে বসে না এবং দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • আর্দ্রতা রোধী কোট ব্যবহার: জলবায়ুর পরিবর্তন থেকে কাঠকে রক্ষা করতে আর্দ্রতা প্রতিরোধক কোটিং ব্যবহার করতে পারেন যা কাঠের রংকে আরও স্থায়ী করবে।

কাঠের পৃষ্ঠের ধরন অনুযায়ী রং বাছাইয়ের টিপস

কাঠের পৃষ্ঠের ধরন অনুযায়ী রং বাছাই করলে কাঠের রং ভালোভাবে বসে এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। নিচে বিভিন্ন পৃষ্ঠের জন্য কাঠের রং বাছাইয়ের পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:

  • মসৃণ পৃষ্ঠ: মসৃণ পৃষ্ঠে ওয়াটার বেসড রং ভালোভাবে বসে এবং ফিনিশিং ভালো আসে।
  • কাঁচা বা অপ্রস্তুত কাঠ: কাঁচা বা অপ্রস্তুত কাঠের জন্য অয়েল বেসড রং বেশি কার্যকর কারণ এটি কাঠের শিরায় গভীরভাবে প্রবেশ করে।
  • দাগযুক্ত কাঠ: দাগযুক্ত কাঠের জন্য উচ্চ মানের বার্নিশ বা ল্যাকার ব্যবহার করলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন থাকে।

রং প্রয়োগে পরিবেশবান্ধব উপাদান ও পদ্ধতির ব্যবহার

বর্তমান যুগে পরিবেশ সচেতনতার কারণে কাঠের রং প্রয়োগে পরিবেশবান্ধব উপাদান ও পদ্ধতির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিচে কয়েকটি পরিবেশবান্ধব উপাদানের বিবরণ দেওয়া হলো:

  • ওয়াটার বেসড রং: এটি তেলভিত্তিক রং এর তুলনায় কম রাসায়নিক নির্গত করে এবং সহজে পরিবেশে মিশে যায়।
  • নন-টক্সিক থিনার: রং মিশ্রণে নন-টক্সিক থিনার ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।
  • একমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণ: অপ্রয়োজনীয় রং বা বার্নিশ প্রয়োগ না করা এবং সঠিক মাপে রং তৈরি করা যাতে রং অপচয় কম হয় এবং পরিবেশে দূষণের পরিমাণ কমে।

কাঠ কালার রং এর কিছু জনপ্রিয় ডিজাইন

কাঠের রংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিজাইন ও ট্রেন্ড দেখা যায় যা বাড়ির আসবাব এবং ফার্নিচারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নিচে কয়েকটি আধুনিক ট্রেন্ড এবং ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করা হলো:

  • ডার্ক স্টেইন: এই ধরনের স্টেইন বা গাঢ় রং কাঠের আসবাবে মোহনীয়তা নিয়ে আসে। বিশেষত ডাইনিং টেবিল এবং বেডরুম সেটের জন্য এটি জনপ্রিয়।
  • ন্যাচারাল উড ফিনিশ: কাঠের প্রাকৃতিক রং ধরে রেখে ফিনিশিং যোগ করার মাধ্যমে আসবাবে আভিজাত্য আসে। বার্নিশ বা স্বচ্ছ কোটিং এই ধাঁচে বেশি ব্যবহৃত হয়।
  • কালো ও ধূসর শেড: আধুনিক ঘর সাজানোর জন্য কালো বা ধূসর শেডের কাঠের রং প্রচলিত হয়ে উঠেছে।

কাঠ কালার রং এবং কাঠের ফার্নিচারের জন্য সঠিক পরিষ্কারের পদ্ধতি

কাঠের রং দীর্ঘস্থায়ী করতে এবং সেটির সৌন্দর্য ধরে রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ। কাঠের ফার্নিচার বা কাঠের পৃষ্ঠকে সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • নরম কাপড় ও মাইল্ড ডিটারজেন্ট: কাঠের পৃষ্ঠে ধুলাবালি জমলে নরম কাপড় এবং সামান্য ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে মৃদুভাবে মুছে ফেলতে হবে।
  • পোলিশ এবং কন্ডিশনার ব্যবহার: কাঠের পৃষ্ঠকে নতুন রাখার জন্য মাঝে মাঝে কাঠের জন্য নির্ধারিত পোলিশ ব্যবহার করতে পারেন।
  • সূর্যের আলো এড়ানো: কাঠের পৃষ্ঠের রং যাতে ফ্যাকাশে না হয়ে যায় সে জন্য সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে রাখা উচিত।

আর পড়ুন: বারোমাসি আম গাছের পরিচর্যা 

উপসংহার

কাঠ কালার রং কাঠের সৌন্দর্য,স্থায়িত্ব এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে কাঠের বিভিন্ন ধরনের রং পাওয়া যায় যা কাঠের প্রকার, কাঠের প্রয়োগ এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়। কাঠ কালার রং বিভিন্ন ব্র্যান্ড, প্রয়োগ পদ্ধতি এবং রক্ষণাবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কাঠ কালার রং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়েছে যা পাঠকদের কাঠের জন্য সঠিক রং বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। কাঠ কালার রং এর বিষয়ে আরও জানার জন্য স্থানীয় দোকানে বা অনলাইনে অনুসন্ধান করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *