কাঠের রং এর দাম, নাম এবং প্রয়োগের নিয়ম | বিস্তারিত গাইড

কাঠের রং এর দাম

কাঠের রঙ বাংলাদেশের গৃহসজ্জা এবং আসবাবপত্র তৈরির ক্ষেত্রে অপরিহার্য একটি উপাদান। দরজা, জানালা, ফার্নিচার বা মেঝের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কাঠের রঙের ভূমিকা অপরিসীম। এটি শুধু কাঠের চেহারা বদলেই দেয় না বরং কাঠকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি যেমন আর্দ্রতা, পোকামাকড় এবং আবহাওয়ার প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়। – কাঠের রং এর দাম

বাংলাদেশে কাঠের রঙের দাম বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে যেমন ব্র্যান্ড, প্রকারভেদ এবং প্রয়োগের পদ্ধতি। এই আর্টিকেলে আমরা কাঠের রঙের দাম এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিশদ আলোচনা করব যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

আর পড়ুন: বার্মাটিক সেগুন কাঠের দাম 

কাঠের রঙ কী এবং কেন এটি প্রয়োজনীয়

কাঠের রঙ এমন একটি প্রলেপ যা কাঠের ওপর দেয়া হয় কাঠকে সুরক্ষা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। এটি কেবল কাঠকে চকচকে বা রঙিন করে তোলে না বরং কাঠের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

কাঠের রঙ ব্যবহারের কারণ

  • সৌন্দর্য বৃদ্ধি: কাঠে রঙ দিলে এটি আরও আকর্ষণীয় এবং উন্নত মানের দেখায়।
  • ক্ষয় প্রতিরোধ: কাঠের রঙ পোকামাকড় এবং আর্দ্রতার কারণে সৃষ্ট ক্ষয় রোধ করে।
  • টেকসইতা বাড়ায়: কাঠে রঙ প্রয়োগ করলে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং পরিবেশগত চাপ সহ্য করতে পারে।

ব্যবহারক্ষেত্র:

দরজা, জানালা, আসবাবপত্র, সিলিং, মেঝে এবং বাড়ির বাহ্যিক কাঠামোতে কাঠের রঙ ব্যবহৃত হয়।

কাঠের রঙের বিভিন্ন ধরন – কাঠের রং এর দাম

কাঠের রঙের বাজারে বিভিন্ন ধরন পাওয়া যায়। প্রতিটি ধরনের রঙের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে কাঠের রঙের প্রধান ধরনগুলোর পরিচিতি দেওয়া হলো:

  • ল্যাকার (Lacquer): ল্যাকার রঙ দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং কাঠকে চকচকে ও মসৃণ ফিনিশ দেয়। এটি মূলত আধুনিক এবং মসৃণ কাঠের ফিনিশিংয়ে ব্যবহৃত হয় দাম: প্রতি লিটার ৩৫০-৫০০ টাকা (ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে)।
  • ভার্নিশ (Varnish): ভার্নিশ একটি স্বচ্ছ রঙ যা কাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে সুরক্ষা দেয়। দাম: প্রতি লিটার ৪৫০-৭০০ টাকা।
  • অয়েল বেজড রঙ (Oil-Based Paint): অয়েল বেজড রঙ কাঠের গভীরে প্রবেশ করে এবং এটি আর্দ্রতার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। দাম: প্রতি লিটার ৫০০-৯০০ টাকা।
  • ওয়াটার বেজড রঙ (Water-Based Paint): এটি পরিবেশবান্ধব এবং দ্রুত শুকানোর জন্য পরিচিত। এটি ফার্নিচারে ব্যবহৃত হয়। দাম: প্রতি লিটার ৪০০-৬৫০ টাকা।

কাঠের রঙের নাম ও পরিচিতি

বাংলাদেশের বাজারে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের কাঠের রঙ সহজেই পাওয়া যায়। এগুলো মান ও সেবার দিক থেকে সেরা বলে বিবেচিত হয়।

জনপ্রিয় ব্র্যান্ডসমূহ:

  • বার্জার (Berger): বার্জার পেইন্টস তাদের বিভিন্ন ধরনের কাঠের রঙের জন্য প্রসিদ্ধ।
  • ল্যাকার রঙ: প্রতি লিটার ৫৫০-৮০০ টাকা।
  • ভার্নিশ: প্রতি লিটার ৬৫০-৯৫০ টাকা।
  • এশিয়ান পেইন্টস (Asian Paints): এশিয়ান পেইন্টস পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই রঙের জন্য বিখ্যাত।
  • ওয়াটার বেজড রঙ: প্রতি লিটার ৫০০-৭৫০ টাকা।

কাঠাল পেইন্ট:

  • স্থানীয়ভাবে তৈরি এই ব্র্যান্ডটি সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের রঙ সরবরাহ করে।
  • ভার্নিশ: প্রতি লিটার ৪৫০-৬০০ টাকা।

আর পড়ুন: বারোমাসি ফুল গাছ 

কাঠের রঙ তৈরির নিয়ম

বাণিজ্যিকভাবে তৈরি কাঠের রঙ:

বাজারে পাওয়া কাঠের রঙগুলি বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। রঙে ব্যবহৃত প্রধান

উপাদানগুলো হলো:

  • পিগমেন্ট
  • সলভেন্ট
  • রেজিন
  • অ্যাডিটিভস

ঘরে তৈরি কাঠের রঙ:

যদি বাজেট কম থাকে এবং সৃজনশীলতার জায়গা থাকে তাহলে ঘরে বসে কাঠের রঙ তৈরি করা সম্ভব।

পদ্ধতি:

  • লিনসিড অয়েল এবং গাম লিকুইড মিশ্রিত করুন।
  • এতে কাঙ্ক্ষিত রঙের পিগমেন্ট মেশান।
  • রঙের ঘনত্ব নির্ধারণের জন্য সলভেন্ট যোগ করুন।

খরচ: ঘরে তৈরি রঙের আনুমানিক খরচ ২০০-৩০০ টাকা প্রতি লিটার।

কাঠের রঙ প্রয়োগের পদ্ধতি – কাঠের রং এর দাম

প্রাথমিক ধাপ:

  • কাঠের পৃষ্ঠ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করুন।
  • ময়লা পুরানো রঙ এবং ধুলো অপসারণের জন্য স্যান্ডপেপার ব্যবহার করুন।

রঙ প্রয়োগের ধাপসমূহ:

  • প্রথমে প্রাইমার প্রয়োগ করুন যাতে রঙ ভালোভাবে বসে।
  • ব্রাশ বা স্প্রে ব্যবহার করে প্রথম স্তর রঙ দিন।
  • ৪-৬ ঘণ্টা শুকানোর পর দ্বিতীয় স্তর দিন।
  • ফিনিশিং হিসেবে পলিশ বা সিলার ব্যবহার করুন।

দীর্ঘস্থায়ী করার কৌশল:

  • প্রতি বছর রঙ পুনঃপ্রয়োগ করুন।
  • রঙ শুকানোর সময় কাঠ সরাসরি সূর্যালোকে রাখবেন না।

কাঠের রঙের দাম কীভাবে নির্ধারণ হয়

কাঠের রঙের দাম নির্ধারণে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রথমত উপাদানের মান একটি বড় ভূমিকা পালন করে। উচ্চমানের রঙ যেমন বার্জার বা এশিয়ান পেইন্টসের ক্ষেত্রে দাম তুলনামূলক বেশি হয় কারণ সেগুলোতে ব্যবহৃত পিগমেন্ট, সলভেন্ট এবং রেজিন অত্যন্ত মানসম্পন্ন। দ্বিতীয়ত রঙের ধরনও দামের ওপর প্রভাব ফেলে। ল্যাকার বা ভার্নিশের দাম সাধারণত অয়েল বা ওয়াটার বেজড রঙের তুলনায় কম থাকে। তৃতীয়ত ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা একটি বড় বিষয়। যেমন- বার্জার বা এশিয়ান পেইন্টসের মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের রঙের দাম স্থানীয় ব্র্যান্ডের তুলনায় বেশি। চতুর্থত পরিমাণও দামের ওপর প্রভাব ফেলে। বড় প্যাকেজে রঙ কিনলে প্রতি লিটারের খরচ কম হয়। সবশেষ বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের অবস্থাও দামের ভিন্নতা তৈরি করে।

দরজার কাঠের রঙের দাম

দরজার কাঠে ব্যবহৃত রঙের ক্ষেত্রে বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত পণ্যের প্রয়োজন হয় কারণ দরজা বাইরের আবহাওয়ার সাথে সরাসরি সংস্পর্শে থাকে। দরজার কাঠের জন্য ভার্নিশ বা ল্যাকার বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এগুলো কাঠের প্রকৃতি বজায় রাখে এবং একই সাথে সুরক্ষা প্রদান করে।

বাংলাদেশে দরজার কাঠের রঙের দাম বিভিন্ন মানের ওপর নির্ভর করে। সাধারণ ল্যাকার বা ভার্নিশের দাম প্রতি লিটার ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে থাকে। উচ্চমানের ব্র্যান্ড যেমন বার্জার বা এশিয়ান পেইন্টসের দরজার রঙের দাম প্রতি লিটার ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে। দরজার কাঠে যদি জল-প্রতিরোধক রঙ ব্যবহার করতে চান তাহলে দাম আরও বাড়তে পারে।

আর পড়ুন: আরএফএল কাঠের দরজার দাম ২০২৪ 

বাংলাদেশে কাঠের রং এর দাম – বর্তমান বাজার মূল্য

বাংলাদেশের বাজারে কাঠের রঙের দাম স্থানীয় এবং আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নির্ভর করে। স্থানীয়ভাবে তৈরি কাঠাল পেইন্টের মতো ব্র্যান্ডের দাম সাধারণত কম যেখানে প্রতি লিটার রঙের দাম ৪৫০-৬৫০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম ৮০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ঢাকার বাজারে এই পণ্যের চাহিদা বেশি ফলে দাম কিছুটা বেশি হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর মতো জায়গায় দাম তুলনামূলকভাবে কম। বর্তমানে অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম যেমন দারাজ এবং স্থানীয় পেইন্ট স্টোরগুলোতেও রঙ সহজেই পাওয়া যায়। তবে অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ডেলিভারি চার্জসহ খরচ কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।

কাঠের রঙ কেনার সময় বিবেচ্য বিষয়

কাঠের রঙ কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত। প্রথমেই রঙের মান নিশ্চিত করতে হবে। ভালো মানের রঙ কাঠকে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয় এবং নান্দনিকতাও বজায় রাখে। দ্বিতীয়ত রঙের ধরন নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাড়ির অভ্যন্তরীণ কাঠের জন্য রঙ প্রয়োজন হয় তাহলে ল্যাকার বা ভার্নিশ নির্বাচন করা যেতে পারে।

তৃতীয়ত, সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের রঙ পেতে স্থানীয় দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মধ্যে তুলনা করুন। এছাড়া কেনার সময় রঙের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত যাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো যায়। সবশেষে প্রয়োজন হলে পেশাদারের পরামর্শ নিন কারণ সঠিক রঙ নির্বাচন এবং প্রয়োগ পদ্ধতি কাঠের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

কাঠের রঙের বিকল্প এবং সাশ্রয়ী উপায়

যারা কাঠের রঙে অতিরিক্ত খরচ করতে চান না তাদের জন্য কিছু সাশ্রয়ী বিকল্প রয়েছে। বাজারে স্থানীয় ব্র্যান্ডের রঙগুলো যেমন কাঠাল পেইন্ট বা স্থানীয় ভার্নিশ সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী। এছাড়া ঘরে তৈরি রঙ ব্যবহার করাও একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।

সাশ্রয়ী মূল্যে রঙ প্রয়োগের জন্য DIY পদ্ধতিগুলো খুবই জনপ্রিয়। উদাহরণস্বরূপ স্যান্ডপেপার ব্যবহার করে পুরানো রঙের আস্তরণ সরিয়ে তাতে নতুন রঙ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া পুরানো রঙ পুনর্ব্যবহার করাও একটি কার্যকর উপায়। তবে এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময় কাঠের মান বজায় রাখতে হবে।

আর পড়ুন: কাঠের বুক সেলফ দাম 

উপসংহার ও পরামর্শ – কাঠের রং এর দাম

কাঠের রঙের প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র কাঠকে রক্ষা করতেই নয় বরং এর চেহারা এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য। এই আর্টিকেলে কাঠের রঙের ধরন, দাম এবং প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।

আপনার কাঠের প্রকৃতি বাজেট এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী রঙ নির্বাচন করুন। স্থানীয় দোকান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের তুলনা করে সেরা পণ্যটি কেনার চেষ্টা করুন। সবশেষে কাঠের সুরক্ষায় মানসম্মত রঙ প্রয়োগ এবং রঙের স্তর বজায় রাখার জন্য পেশাদারের সাহায্য নিতে ভুলবেন না।

আপনার যদি এই বিষয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে তবে মন্তব্যে জানান বা এই পোস্টটি শেয়ার করুন। এটি আপনার বন্ধুদের জন্যও সহায়ক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *