কাঠগোলাপ গাছের দাম ২০২৪ | কাঠগোলাপের যত্ন ও বৈশিষ্ট্য

কাঠগোলাপ গাছের দাম

কাঠগোলাপ গাছ এক অনন্য ফুলগাছ যা তার নান্দনিক সৌন্দর্য ও বহুবিধ বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের বাগানপ্রেমীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি শুধু ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না বরং বাড়ির পরিবেশে প্রশান্তি যোগ করে। কাঠগোলাপ গাছের বিভিন্ন প্রকারভেদ, দাম এবং যত্ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। এই নিবন্ধে আমরা কাঠগোলাপ গাছের প্রতিটি দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কাঠগোলাপ গাছের প্রকারভেদ

কাঠগোলাপ গাছের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। প্রতিটি প্রজাতি ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও রঙের জন্য বিখ্যাত।

আর পড়ুন: ভেষজ উদ্ভিদ নাম ও উপকারিতা 

সাদা কাঠগোলাপ

সাদা কাঠগোলাপের ফুলগুলো খুবই সরল এবং শান্তিময়। সাদা রঙ সাধারণত পবিত্রতার প্রতীক। এটি বিশেষত মসজিদ ও মন্দিরের জন্য ব্যবহৃত হয়। গাছটির পাতা সবুজ এবং প্রায়ই ফুলের শোভা বাড়ায়। বাংলাদেশে এর দাম ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। ভারতে দাম তুলনামূলক কম প্রায় ১৫০-৩০০ রুপি।

গোলাপি কাঠগোলাপ

গোলাপি রঙের কাঠগোলাপ দেখতে খুবই সুন্দর এবং এটি দ্রুত ফুল ফোটে। গোলাপি কাঠগোলাপ বাগানের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে। এটির চারা কিনতে খরচ হয় ৩০০-৬০০ টাকা তবে বড় গাছের দাম ১০০০ টাকার বেশি হতে পারে।

হলুদ কাঠগোলাপ

হলুদ কাঠগোলাপ উজ্জ্বল রঙ এবং মিষ্টি ঘ্রাণের জন্য পরিচিত। এটি রোদে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং তাপমাত্রা সামলে নিতে পারে। এর দাম ৪০০-৭৫০ টাকা।

লাল কাঠগোলাপ

লাল কাঠগোলাপ একটি চমৎকার প্রজাতি যা বাগানের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। এর দাম ৫০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকায় পৌঁছায় বিশেষ করে বড় আকারের গাছের জন্য।

এছাড়া আরও কিছু বিরল প্রজাতি রয়েছে যেমন ডাবল লেয়ার কাঠগোলাপ এবং মিক্সড কালার কাঠগোলাপ যা বিশেষ নার্সারিতে পাওয়া যায়।

কাঠগোলাপ গাছের বৈশিষ্ট্য

কাঠগোলাপ গাছের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে অন্যান্য ফুলগাছের চেয়ে আলাদা করে তোলে।

  • ফুলের বৈশিষ্ট্য: কাঠগোলাপের ফুল বড় আকারের এবং অনেক সময় বৃত্তাকার হয়। ফুলের পাপড়ির রং সাদা, হলুদ, গোলাপি বা লাল হতে পারে। প্রতিটি ফুলের ঘ্রাণ অত্যন্ত মিষ্টি এবং দূর থেকে টানার মতো।
  • গাছের আকৃতি ও পাতা: কাঠগোলাপ গাছ সাধারণত মাঝারি আকারের হয়। এর পাতা চওড়া ও গাঢ় সবুজ যা ফুলের শোভা বাড়ায়। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ৫-৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: কাঠগোলাপ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী। সঠিক পরিচর্যা করলে এটি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফুল দিতে পারে।
  • পরিবেশগত উপকারিতা: কাঠগোলাপ গাছ বাগানের পরিবেশ শীতল রাখতে সাহায্য করে এবং বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়।

কাঠগোলাপ গাছের দাম কত

বাংলাদেশ এবং ভারতে কাঠগোলাপ গাছের দাম বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। যেমন: গাছের আকার, প্রজাতি এবং কিনবার স্থান।

বাংলাদেশের বাজারে দাম:

  • বাংলাদেশে কাঠগোলাপ গাছের দাম সাধারণত নার্সারি এবং স্থানীয় বাজারে ভিন্ন হয়।
  • ছোট চারা গাছ: ১৫০-৩০০ টাকা।
  • মাঝারি আকারের গাছ: ৫০০-১০০০ টাকা।
  • বড় এবং ফুল ফোটা গাছ: ১৫০০-৩০০০ টাকা।

ভারতের বাজারে দাম:

  • ভারতে কাঠগোলাপ গাছের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
  • ছোট গাছ: ২০০-৪০০ রুপি।
  • বড় গাছ: ১০০০-২০০০ রুপি।

অনলাইন মার্কেট: অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাঠগোলাপ গাছ কিনতে গেলে দাম একটু বেশি হতে পারে কারণ ডেলিভারি চার্জ যুক্ত হয়। তবে অনলাইন মার্কেটে বিশেষ ছাড় পাওয়া যায় যা অনেক সময় সাশ্রয়ী হতে পারে।

কাঠগোলাপ গাছ কেনার আগে যা জানা জরুরি

সঠিক কাঠগোলাপ গাছ কেনার জন্য কিছু বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

  • গাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা: গাছের পাতা ও শাখা দেখে নিশ্চিত করুন যে এটি কোনো রোগে আক্রান্ত নয়। সবুজ, সতেজ পাতা এবং মজবুত শিকড় থাকা একটি গাছ ভালো।
  • স্থান নির্ধারণ: গাছ কেনার আগে আপনার বাগানের স্থান ঠিক করুন। যদি বড় গাছের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তবে টবে লাগানোর উপযোগী প্রজাতি নির্বাচন করুন।
  • বিশ্বস্ত নার্সারি নির্বাচন: স্থানীয় নার্সারি থেকে সরাসরি গাছ কেনা উত্তম। এটি সাশ্রয়ী হয় এবং আপনি গাছটি পরীক্ষা করার সুযোগ পান। অনলাইনে কেনার সময় ভালো রিভিউ দেখুন এবং বিশ্বস্ত সাইট থেকে কিনুন।

আর পড়ুন: গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় 

কাঠগোলাপ গাছ কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশ ও ভারতে কাঠগোলাপ গাছের প্রাপ্যতা বেশ ভালো।

বাংলাদেশে পাওয়া যায়:

  • ঢাকার মিরপুর নার্সারি এবং গাবতলীর কাঁচাবাজার।
  • চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ নার্সারি।
  • খুলনা ও রাজশাহীর স্থানীয় নার্সারি।

ভারতে পাওয়া যায়:

  • কলকাতার শিয়ালদহ নার্সারি।
  • মুম্বাইয়ের দাদার ফুল মার্কেট।
  • দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর বিশেষ নার্সারি।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: Flipkart, Amazon India এবং Nurserylive-এর মতো ওয়েবসাইটে কাঠগোলাপ গাছ সহজলভ্য। বাংলাদেশে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে Chaldal এবং Rokomari-তে কিছু সময়ে বিশেষ অফারে কাঠগোলাপ গাছ পাওয়া যায়।

কাঠগোলাপ গাছের যত্ন

কাঠগোলাপ গাছকে সুস্থ ও সবুজ রাখতে সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।

  • মাটি নির্বাচন: গাছের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাটির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকা দরকার।
  • পানি দেওয়া: গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন পানি দিতে হয়। তবে বর্ষাকালে পানি জমতে দেওয়া ঠিক নয়।
  • সার প্রয়োগ: কাঠগোলাপ গাছের জন্য জৈব সার যেমন গোবর বা কম্পোস্ট সার ভালো। প্রতি মাসে একবার সার দিতে হবে।
  • রোদ ও আলো: গাছটি সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখতে হবে। এটি প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা আলো পেলে ভালো ফুল ফোটে।
  • রোগ প্রতিরোধ: কাঠগোলাপ গাছে মাঝে মাঝে মাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। এর জন্য নিয়মিত কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত।

কাঠগোলাপ ফুল কখন ফোটে

কাঠগোলাপ গাছ সারা বছর ফুল ফোটাতে সক্ষম হলেও গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল এটির ফুল ফোটার জন্য আদর্শ সময়। এসময় পরিবেশের আর্দ্রতা এবং উষ্ণতা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

  • গ্রীষ্মকাল: মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালে কাঠগোলাপ গাছ সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। এই সময় দিনের আলো বেশি পাওয়া যায় যা গাছের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • বর্ষাকাল: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার সময় কাঠগোলাপ গাছে আবারও ফুল দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত পানি জমে গেলে গাছের ক্ষতি হতে পারে তাই পানি নিষ্কাশনের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
  • শীতকাল: শীতকালে কাঠগোলাপ গাছে ফুল খুব কম দেখা যায়। এসময় গাছের বৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে যায়। কিন্তু যদি সঠিক যত্ন নেওয়া হয় যেমন মাটি ঢেকে রাখা এবং পর্যাপ্ত সার ব্যবহার করা হয় তবে কিছু ফুল পাওয়া সম্ভব।

আর পড়ুন: কাঠের হাট 

কাঠগোলাপ গাছের উপকারিতা

কাঠগোলাপ গাছ শুধু একটি শোভাময় উদ্ভিদ নয় এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসে।

  • পরিবেশগত উপকারিতা: কাঠগোলাপ গাছ বাতাসে অক্সিজেন বাড়ায় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। এটি পরিবেশকে শীতল রাখে এবং বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
  • ঔষধি গুণ: কাঠগোলাপের ফুল এবং পাতা থেকে নির্যাস তৈরি করে কিছু আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পাতা ও ছাল ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • মনোরঞ্জন: এই গাছ বাড়ির বা বাগানের শোভা বৃদ্ধি করে। ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

কাঠগোলাপ গাছের দাম

কাঠগোলাপ গাছের রোগ ও প্রতিকার

যত্নের অভাবে কাঠগোলাপ গাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সঠিক প্রতিকার নিলে গাছকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

  • পাতার পোকা: পাতার পোকা গাছের পাতা খেয়ে নষ্ট করে। এটির প্রতিকার করতে নিম তেল বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
  • শিকড় পচা রোগ: পানি জমে থাকলে শিকড় পচা রোগ হতে পারে। এর প্রতিকার করতে ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম রাখতে হবে এবং গাছের মাটি পরিবর্তন করতে হবে।
  • ফুল পড়ে যাওয়া: পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আলো না পেলে কাঠগোলাপের ফুল ঝরে পড়ে। প্রতি মাসে নিয়মিত জৈব সার এবং আলো দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কাঠগোলাপ গাছ টবে লাগানোর নিয়ম

বাড়িতে বা বারান্দায় সীমিত জায়গায় কাঠগোলাপ গাছ লাগানোর জন্য টব একটি ভালো সমাধান। তবে সঠিক নিয়ম মেনে চললে গাছ সুস্থ থাকবে।

  • টব নির্বাচন: মাঝারি থেকে বড় আকারের টব নির্বাচন করুন। মাটির বা সিরামিকের টব গাছের জন্য ভালো।
  • মাটি প্রস্তুতি: দো-আঁশ মাটির সঙ্গে কম্পোস্ট সার মিশিয়ে মাটি প্রস্তুত করুন। মাটির নিচে ছোট পাথর বা ইটের টুকরো দিয়ে ড্রেনেজ নিশ্চিত করুন।
  • পানি ও আলো: টবের গাছে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না। গাছটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে রোদ সরাসরি পৌঁছায়।
  • সার প্রয়োগ: প্রতি দুই মাস অন্তর টবে জৈব সার বা তরল সার প্রয়োগ করুন।

কাঠগোলাপ গাছের যত্নে সাধারণ ভুল

অনেক সময় কাঠগোলাপ গাছের যত্ন নিতে গিয়ে কিছু ভুল হয়ে যায় যা গাছের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

  • অতিরিক্ত পানি দেওয়া: গাছের মাটি বেশি ভিজে গেলে শিকড় পচে যেতে পারে। পানি দেওয়ার আগে মাটি পরীক্ষা করুন।
  • পর্যাপ্ত আলো না দেওয়া: কাঠগোলাপ গাছ সরাসরি সূর্যের আলো পছন্দ করে। ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখলে গাছ ফুল দেবে না।
  • সারের অভাব: যথেষ্ট সার না দিলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতি মাসে একবার জৈব সার ব্যবহার করুন।

কাঠগোলাপ গাছের ফুল সংরক্ষণ

ফুল সংগ্রহ করে সেগুলোকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। এটি ঘরের শোভা বাড়াতে বা ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়।

  • ফুল শুকানো: কাঠগোলাপ ফুল শুকিয়ে পটপুরি বা সুগন্ধি পাউচ তৈরি করা যায়।
  • সৌন্দর্য বর্ধন: তাজা ফুল গ্লাস বা ছোট ভাসে রেখে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।
  • ঔষধি ব্যবহার: শুকনো ফুলের নির্যাস থেকে ঘরোয়া ব্যথানাশক তেল তৈরি করা যায়।

আর পড়ুন: নিম গাছের উপকারিতা 

উপসংহার

কাঠগোলাপ গাছ তার সৌন্দর্য, বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। সঠিক যত্ন এবং নিয়ম মেনে চললে এটি দীর্ঘদিন ধরে ফুল ফোটাতে সক্ষম। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতে এই গাছের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। আশা করি এই নিবন্ধে কাঠগোলাপ গাছের দাম ও অন্যান্য তথ্যের মাধ্যমে পাঠকরা কাঠগোলাপ কেনা এবং যত্নের সঠিক ধারণা পেয়েছেন।

আপনারা যদি এই ধরনের আরও তথ্য চান তবে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য নিবন্ধ পড়ুন এবং আপনার মতামত শেয়ার করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *