অশ্বথ গাছ – উপকারিতা, বট গাছের সাথে তুলনা গাইড

অশ্বথ গাছ

অশ্বথ গাছকে ভারতে ও বাংলাদেশে পবিত্র গাছ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ গাছ নয় এটি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। হিন্দু পুরাণে অশ্বথ গাছকে জীবনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে এটি অনেক মন্দির ও ধর্মীয় স্থানে দেখা যায়। গাছটির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব যেমন রয়েছে তেমনি এর স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত উপকারিতাও রয়েছে। বর্তমান সময়ে যেখানে শহরের মানুষ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চায় অশ্বথ গাছ একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে।

অশ্বথ গাছের ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক মূল্য এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবই এটিকে একটি বিশেষ স্থান প্রদান করে। এই আর্টিকেলে আমরা অশ্বথ গাছের বিভিন্ন দিক যেমন—এর বৈজ্ঞানিক বর্ণনা, উপকারিতা, বট গাছের সাথে তুলনা এবং বাড়িতে এর উপস্থিতির প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন অশ্বথ গাছ কেবল একটি গাছ নয় এটি কীভাবে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।

অশ্বথ গাছ কি

অশ্বথ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus religiosa। এটি “পিপল” বা “বোধি বৃক্ষ” নামেও পরিচিত। গাছটি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্বাভাবিকভাবে জন্মে। এর উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় এবং এর ব্যাস ৩ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অশ্বথ গাছের পাতা দেখতে হৃদয়ের আকারের এবং শীর্ষের দিকে তীক্ষ্ণ। এই গাছের ছাল ধূসর বা বাদামি রঙের হয় যা বেশ মোটা এবং আঁশযুক্ত।

আর পড়ুন: অর্জুন গাছ – ঔষধি গুণ, ছাল ও ফলের উপকারিতা

অশ্বথ গাছের ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। এটি আদি যুগ থেকেই উপমহাদেশের বিভিন্ন ধর্মে পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ অশ্বথ গাছের নীচে বসে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বোধি বা জ্ঞান লাভ করেছিলেন যা ইতিহাসের একটি বিশেষ মুহূর্ত। এজন্য বৌদ্ধ ধর্মেও এই গাছটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়।

গাছটি তার বিশালতা, ছায়া এবং বিভিন্ন ঔষধি গুণের জন্য পরিচিত। এছাড়াও এটি পরিবেশের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে যেমন বাতাসের গুণমান উন্নত করা, জল ধরে রাখা এবং মাটির ক্ষয় রোধ করা।

অশ্বথ গাছের উপকারিতা

অশ্বথ গাছ শুধু আধ্যাত্মিক মূল্যেই সীমাবদ্ধ নয় এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুমুখী উপকারিতা প্রদান করে। এই গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, ছাল, শিকড় এবং ফল ঔষধি গুণাবলী ধারণ করে।

  • স্বাস্থ্য উপকারিতা: গাছটির পাতার রস নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। যেমন কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় এর রস অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও গাছটির ছাল বিভিন্ন প্রাচীন ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী রয়েছে যা বিভিন্ন সংক্রমণ ও প্রদাহের চিকিৎসায় সাহায্য করে।
  • পরিবেশগত উপকারিতা: অশ্বথ গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করে যা বায়ু শুদ্ধকরণে কার্যকর। গাছটির শিকড় ও ডালপালা মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং গাছটি খুবই দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী হয়। এ কারণে এটি জলবায়ুর পরিবর্তন ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতেও সহায়ক।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক উপকারিতা: গ্রামবাংলার মানুষ অশ্বথ গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে এমনকি অনেক মেলা বা হাটও বসে। অর্থনৈতিকভাবে গাছটির কাঠ ব্যবহারের উপযোগী না হলেও এটি বিভিন্ন ঔষধি পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যা অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অশ্বথ গাছ আর বট গাছের পার্থক্য

অশ্বথ গাছ এবং বট গাছ উভয়েই Ficus প্রজাতির অন্তর্গত তবে এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো তাদের গঠন, বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য এবং ধর্মীয় গুরুত্বের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়।

  • বৈজ্ঞানিক ভিন্নতা: অশ্বথ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus religiosa এবং বট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus benghalensis। অশ্বথ গাছের পাতা হৃদয়াকৃতি এবং শীর্ষে সূঁচালো থাকে কিন্তু বট গাছের পাতা তুলনামূলক বড় ও প্রশস্ত হয়। অশ্বথ গাছের ফল ছোট এবং খাওয়ার উপযোগী নয় যেখানে বট গাছের ফল অপেক্ষাকৃত বড় এবং কিছুটা খাওয়ার উপযোগী।
  • গঠন ও আকৃতি: বট গাছ সাধারণত তার শিকড় দ্বারা নতুন নতুন গাছের জন্ম দেয় এবং বিশালাকার ছায়া সৃষ্টি করে। অশ্বথ গাছের শিকড় বট গাছের মতো মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে না। অশ্বথ গাছের শীর্ষ দিকে ছড়ানো ডালপালা দেখা যায় যা দেখতে সুন্দর এবং ভারসাম্যপূর্ণ।
  • আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব: ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় গাছই পবিত্র তবে অশ্বথ গাছের বৌদ্ধ ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ বোধি বা জ্ঞান লাভ করেছিলেন অশ্বথ গাছের নীচে বসে ধ্যান করে যা এটিকে আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। অন্যদিকে বট গাছকে হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং অনেক পুজা-পার্বণে এই গাছের ভূমিকা আছে।

আর পড়ুন: সাকুলেন্ট গাছের দাম

অশ্বথ গাছের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

অশ্বথ গাছকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে দেখা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে অশ্বথ গাছের নিচে দেবতা বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মী অবস্থান করেন। প্রতি শনিবার অশ্বথ গাছের পূজা করা হয় যা অত্যন্ত পুণ্যময় বলে মনে করা হয়। মহাভারত এবং বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রে এই গাছের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন অশ্বথ গাছের পাতা বা ডালে জল অর্পণ করলে তাদের জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।

বৌদ্ধ ধর্মে অশ্বথ গাছ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গৌতম বুদ্ধ এই গাছের নিচে বসেই বোধি বা জ্ঞান লাভ করেছিলেন। এজন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই গাছকে ‘বোধি বৃক্ষ’ হিসেবে পূজা করে থাকে। ভারতের বোধগয়া শহরে একটি বিখ্যাত অশ্বথ গাছ রয়েছে যা বুদ্ধের বোধি লাভের স্মৃতি রক্ষার্থে পূজিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে অশ্বথ গাছের চারা রোপণ করা হয় এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে এই গাছের ব্যবহার প্রচলিত।

অশ্বথ গাছ বাড়িতে থাকলে কি হয়

অনেকেই বিশ্বাস করেন অশ্বথ গাছ বাড়িতে রোপণ করলে সৌভাগ্য বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশ স্বাস্থ্যকর হয়। তবে এই গাছের শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে যা বাড়ির আশপাশের নির্মাণকাজে ক্ষতি করতে পারে। এজন্য সাধারণত বাড়ির উঠানে বা আশপাশে এই গাছ লাগানোর আগে যথেষ্ট স্থান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাড়িতে অশ্বথ গাছ থাকা ভালো বলে বিবেচনা করা হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন অশ্বথ গাছ বাড়িতে থাকার কারণে নেগেটিভ এনার্জি দূর হয় এবং পজিটিভ এনার্জি বাড়ে। এছাড়াও অশ্বথ গাছ বাড়িতে থাকলে তা বায়ু শুদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা পরিবেশকে স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলে।

অশ্বথ গাছ

অশ্বথ গাছের পাতা, ছাল ও শিকড়ের ঔষধি ব্যবহার

অশ্বথ গাছের বিভিন্ন অংশ ঔষধি গুণাবলী ধারণ করে এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা, ছাল, শিকড় ও ফল বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

  • পাতার ব্যবহার: অশ্বথ গাছের পাতার রস কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় খুবই উপকারী। এছাড়াও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে এর পাতার রস ব্যবহৃত হয়। ত্বকের বিভিন্ন রোগ যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি এবং প্রদাহের জন্য অশ্বথ গাছের পাতার পেস্ট প্রয়োগ করা হয়।
  •  ছালের ব্যবহার: অশ্বথ গাছের ছাল দিয়ে তৈরি ঔষধ সংক্রমণ ও প্রদাহজনিত রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এবং ক্ষত স্থান সুস্থ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি প্রস্রাবজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • শিকড়ের ব্যবহার: অশ্বথ গাছের শিকড় ডায়াবেটিস রোগের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অশ্বথ গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ওষুধ প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। এছাড়া গাছটির শিকড়ের গুঁড়া দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী।

অশ্বথ গাছের পরিবেশগত প্রভাব

অশ্বথ গাছ পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এটি শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • অক্সিজেন উৎপাদন: অশ্বথ গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপাদন করে যা বায়ু শুদ্ধকরণে সহায়ক। এটি বিশেষ করে শহুরে এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেখানে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে। একে ‘অক্সিজেন কারখানা’ বলা হয় কারণ এটি দিনরাত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম।
  • ছায়া প্রদান: অশ্বথ গাছের বিস্তৃত ডালপালা ও ঘন পাতা অনেক ছায়া প্রদান করে। শহরের রাস্তায় বা গ্রামাঞ্চলের খোলা জায়গায় এই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেয়া যায়। গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপ থেকে রক্ষা পেতে এটি একটি আদর্শ গাছ।
  • জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: অশ্বথ গাছ জলবায়ুর ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখে যা ভূমিক্ষয় রোধ করে।

আর পড়ুন: কাঠের রং এর দাম, নাম এবং প্রয়োগের নিয়ম 

অশ্বথ গাছ রোপণের নিয়ম ও যত্ন

অশ্বথ গাছ রোপণ ও পরিচর্যার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন যাতে গাছটি দ্রুত এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। সাধারণত এই গাছ বড় জায়গায় রোপণ করা হয় কারণ এটি অত্যন্ত দ্রুত বাড়ে এবং অনেক জায়গা প্রয়োজন।

  • মাটি নির্বাচন: অশ্বথ গাছ মাটির প্রতি বেশি নির্দিষ্ট নয় তবে ভাল জল নিস্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন দোআঁশ মাটি এই গাছের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এর শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রবেশ করে তাই মাটির গভীরতা বেশি থাকা উচিত।
  • জলসেচ: প্রথম কয়েক বছর অশ্বথ গাছের চারা নিয়মিতভাবে পানি দিতে হবে। তবে গাছটি একবার ভালোভাবে স্থাপন হলে এটি পানি ছাড়া বেশ ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে। গ্রীষ্মকালে কিছুটা বেশি পানি দেওয়া যেতে পারে তবে বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি দেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
  • সার প্রয়োগ: গাছটিকে শক্তিশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল করতে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করা উচিত। সাধারণত প্রতি তিন মাসে একবার গোবর বা জৈব সার প্রয়োগ করা যায়। অশ্বথ গাছ মাটি থেকে প্রচুর পুষ্টি গ্রহণ করে তাই সময়মতো সার প্রয়োগ করা দরকার।

অশ্বথ গাছের চারা সংগ্রহ ও রোপণ পদ্ধতি

অশ্বথ গাছের চারা সংগ্রহ ও রোপণ করা খুবই সহজ। এই গাছের বংশবিস্তার মূলত বীজ এবং কাটিংয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। বীজ থেকে অশ্বথ গাছ জন্মানোর সময় বেশ কয়েক বছর লাগতে পারে তবে কাটিং পদ্ধতিতে দ্রুত গাছ পাওয়া যায়।

  • বীজ থেকে চারা তৈরি: অশ্বথ গাছের বীজ ছোট এবং বীজের ভেতর থেকে চারাগাছ উৎপন্ন হয়। প্রথমে বীজগুলোকে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে ছিটিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো থেকে চারা গজাতে শুরু করবে। এরপর সেগুলোকে বড় পাত্রে বা খোলা মাটিতে প্রতিস্থাপন করা যায়।
  • কাটিং পদ্ধতি: কাটিং পদ্ধতি সবচেয়ে দ্রুত ও সহজ উপায়। একটি পাকা ডাল বা শাখা কেটে পাত্রে রেখে দিলে শিকড় গজাতে শুরু করবে। শিকড়সহ এই চারাকে মাটিতে রোপণ করলে অল্প দিনের মধ্যেই বড় গাছ হয়ে উঠবে।

অশ্বথ গাছের মিথ ও কিংবদন্তি

অশ্বথ গাছ সম্পর্কে অনেক মিথ ও কিংবদন্তি প্রচলিত আছে যা এর আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যেমন হিন্দু ধর্মের লোককথায় বলা হয় যে অশ্বথ গাছের নিচে বসে ধ্যান করলে মানুষ আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ মনে করে বুদ্ধের মতো এই গাছের নিচে বসে ধ্যান করলে মুক্তি লাভ সম্ভব।

অশ্বথ গাছকে নিয়ে প্রচলিত আরেকটি বিশ্বাস হলো এই গাছকে পূজা করলে পরিবারের মঙ্গল হয় এবং আর্থিক সমৃদ্ধি আসে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে প্রতি শনিবার অশ্বথ গাছকে জল দিলে দেবতা বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর কৃপা লাভ হয়।

আর পড়ুন: অ্যালোভেরা গাছ দ্রুত বড় করার উপায় 

উপসংহার

অশ্বথ গাছ কেবল একটি গাছ নয় এটি প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং পরিবেশগত সুরক্ষার একটি প্রতীক। এই গাছটি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে যেমন যুক্ত তেমনি এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। ঘরের আশপাশে বা খোলা জায়গায় এই গাছ লাগানো হলে তা শুধু পরিবেশের উন্নতি করে না পাশাপাশি এর আধ্যাত্মিক প্রভাবও বয়ে আনে।

অশ্বথ গাছ রোপণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবেশকে আরও সবুজ ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারি। এ গাছের ছায়া যেমন শান্তি ও বিশ্রাম দেয় তেমনি এর ঔষধি গুণাবলী আমাদের শারীরিক সমস্যাগুলোও নিরাময় করতে সাহায্য করে। অতএব পরিবেশ রক্ষা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সমন্বয়ে অশ্বথ গাছের গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *