মানিপ্লান্ট গাছ – মানি প্লান্ট গাছের যত্ন, বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা

মানিপ্লান্ট গাছ

মানিপ্লান্ট গাছ এক ধরনের বহুল পরিচিত ঘরোয়া উদ্ভিদ যা সৌন্দর্য এবং ধন-সম্পদের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এটি শুধুমাত্র ঘরের শোভা বাড়ায় না বরং বাস্তুবিদ্যা এবং ফেং শুই অনুযায়ী পরিবারের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতেও সহায়ক বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশে বিশেষ করে শহুরে জীবনে মানিপ্লান্টের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে কারণ এটি সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং সীমিত স্থানে টব বা পানির বোতলে সহজে লাগানো যায়।

এই আর্টিকেলে আমরা মানিপ্লান্ট গাছের পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, প্রতীকী গুরুত্ব এবং উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক!

আর পড়ুন: সুপারি গাছ লাগানোর নিয়ম 

মানিপ্লান্ট গাছের পরিচিতি ও ইতিহাস

মানিপ্লান্ট গাছ (Epipremnum aureum) আরেক নাম “পথোস”। এটি একটি লতানো গাছ যা মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানীয়। প্রাথমিকভাবে এটি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বেশি দেখা যেত তবে বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এর নামের পেছনে একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস রয়েছে। ফেং শুই অনুসারে এই গাছটি ধন-সম্পদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

মানিপ্লান্ট গাছের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই গাছের পাতাগুলি সাধারণত সবুজ ও হলুদাভ শেডযুক্ত হয়। এটি গৃহসজ্জার জন্য দারুণ পছন্দের কারণ এটি কম আলোতে সহজেই বেঁচে থাকতে পারে।

বাংলাদেশে এই গাছের জনপ্রিয়তা মূলত শহুরে অ্যাপার্টমেন্ট এবং অফিসে সহজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। বর্তমানে বিভিন্ন নার্সারিতে এটি ১০০-৫০০ টাকা দামে পাওয়া যায় যার মূল্য নির্ভর করে গাছের আকার এবং পাত্রের উপর।

মানিপ্লান্ট গাছের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য

মানিপ্লান্ট গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর লতানো প্রকৃতি এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা। এটি আর্দ্র এবং উষ্ণ পরিবেশে সবচেয়ে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। গাছটি সাধারণত ৬-১০ ফুট লম্বা হতে পারে তবে আদর্শ পরিবেশে এর দৈর্ঘ্য আরও বেশি হতে পারে।

পাতার বৈশিষ্ট্য:

  • পাতাগুলি সাধারণত হার্ট আকৃতির এবং চকচকে।
  • পাতার রঙ সবুজ এবং মাঝে মাঝে হলুদ বা সাদা দাগ দেখা যায়।
  • এটি স্নিগ্ধ পরিবেশ তৈরি করে এবং ঘরের শোভা বৃদ্ধি করে।

জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়ানো:

  • এটি এমনকি কম আলোতেও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
  • অতিরিক্ত রোদ বা ঠাণ্ডা পরিবেশ গাছটির বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।
  • গাছটি সাধারণত ১৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সঠিকভাবে বাঁচতে পারে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে এটি অফিস, বেডরুম এবং বারান্দার জন্য আদর্শ উদ্ভিদ।

মানিপ্লান্ট গাছের প্রতীকী গুরুত্ব

ফেং শুই এবং বাস্তুবিদ্যা অনুযায়ী মানিপ্লান্ট গাছের রয়েছে বিশেষ প্রতীকী গুরুত্ব। এটি ধন-সম্পদ এবং ইতিবাচক শক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

ফেং শুই দৃষ্টিকোণ: ফেং শুই অনুসারে মানিপ্লান্ট গাছ দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় রাখা উচিত। এটি বাড়িতে ধন-সম্পদ এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। অফিসে বা দোকানে এটি রাখা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব: এই গাছটি মানুষের মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। এটি স্ট্রেস কমায় এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে।

সাংস্কৃতিক বিশ্বাস:

  • বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিশ্বাস করা হয় যে মানিপ্লান্ট গাছ বাড়িতে রাখা সৌভাগ্যের প্রতীক।
  • এটি পারিবারিক বন্ধন মজবুত করে এবং সম্পর্ক উন্নত করে।
  • এই প্রতীকী গুরুত্বের কারণে এটি বিশেষত নবদম্পতি এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়।

আর পড়ুন: ক্যাকটাস গাছের পরিচর্যা 

মানিপ্লান্ট গাছের উপকারিতা

মানিপ্লান্ট গাছ শুধুমাত্র শোভাময় নয়, এটি আমাদের পরিবেশ এবং জীবনযাত্রায় বহুমুখী উপকারিতা নিয়ে আসে।

  • বাতাস শুদ্ধিকরণ: NASA-এর গবেষণা অনুযায়ী মানিপ্লান্ট গাছ বাতাস থেকে ক্ষতিকর টক্সিন যেমন ফর্মালডিহাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করে। এটি বদ্ধ ঘরে তাজা বাতাস সরবরাহ করে যা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করে।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: এটি কাজের পরিবেশে মনোযোগ এবং সৃজনশীলতা বাড়ায়। গাছটির সবুজ রঙ মনকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমায়।
  • ইতিবাচক শক্তি: বাস্তুবিদ্যা অনুসারে মানিপ্লান্ট নেতিবাচক শক্তি দূর করে এবং ইতিবাচক শক্তির বিকাশ ঘটায়। এটি সম্পর্কের মাঝে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
  • সৌন্দর্য বৃদ্ধি: এর মনোমুগ্ধকর লতানো প্রকৃতি যেকোনো স্থানকে আকর্ষণীয় করে তোলে। এটি ঘরের শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে।

দাম:

  • সাধারণ টবের মানিপ্লান্ট ২০০-৪০০ টাকায় পাওয়া যায়।
  • বড় বা বিশেষ ডিজাইনের টবের মানিপ্লান্ট ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেতে পারে।

মানিপ্লান্ট গাছ কোথায় রাখা উচিত

মানিপ্লান্ট গাছ কোথায় রাখা উচিত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ সঠিক স্থানে গাছ রাখলে এর বৃদ্ধি ভালো হয় এবং এটি বাস্তুবিদ্যা ও ফেং শুই অনুযায়ী সৌভাগ্য বয়ে আনে। ফেং শুই অনুসারে মানিপ্লান্ট গাছ রাখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হলো বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণ। এটি ধন-সম্পদ এবং ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

অফিসে এই গাছ রাখার ক্ষেত্রে ডেস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে বা প্রবেশপথের কাছাকাছি রাখা ভালো। এতে ব্যবসায়িক সফলতা এবং কর্মক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আসে। ঘরের বেডরুমে মানিপ্লান্ট রাখলে এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে বেডরুমে রাখার সময় এটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো পৌঁছায়।

যদি গাছটি বারান্দায় রাখা হয় তাহলে সেটি এমন স্থানে রাখুন যেখানে সকালে সূর্যের আলো পৌঁছায় কারণ অতিরিক্ত রোদ মানিপ্লান্টের পাতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। রান্নাঘরেও মানিপ্লান্ট রাখা যেতে পারে তবে এটি রান্নার চুলা বা অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হওয়া স্থান থেকে দূরে রাখতে হবে।

এছাড়া মানিপ্লান্টকে টবে বা পানিতে রেখে দেয়ার সুবিধা হলো এটি যেকোনো স্থানেই সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। গাছ রাখার সময় এটিও নিশ্চিত করতে হবে যে এর চারপাশে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করছে।

মানিপ্লান্ট গাছ লাগানোর নিয়ম

মানিপ্লান্ট গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং ঘরোয়া পরিবেশেও এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি দুইভাবে লাগানো যায়—মাটিতে এবং পানিতে। যারা শুরু করতে চান তারা নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

  • পানিতে মানিপ্লান্ট লাগানো: মানিপ্লান্টের একটি লতাকে কেটে নিন যাতে কমপক্ষে দুটি বা তিনটি গাঁট থাকে। গাঁট থেকে নতুন শিকড় বের হওয়ার জন্য এটি একটি কাচের বোতল বা গ্লাস পাত্রে পানিতে রাখুন। পানির মধ্যে একটু তরল সার যোগ করলে এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে প্রতি সপ্তাহে পানিটি পরিবর্তন করতে হবে যাতে পানি পরিষ্কার থাকে এবং শিকড় পচে না যায়।
  • মাটিতে মানিপ্লান্ট লাগানো: মাটি এবং সার মিশ্রিত করে একটি পাত্রে রাখুন। লতাটি মাটিতে এমনভাবে বসান যাতে শিকড় মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মাটি সামান্য ভেজা রাখতে হবে তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এটি শিকড় পচিয়ে দিতে পারে।

মানিপ্লান্ট লাগানোর সময় এটি নিশ্চিত করতে হবে যে পাত্রটি এমন জায়গায় রাখা হয়েছে যেখানে পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস পৌঁছায়। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হওয়ায় মাঝে মাঝে ডাল ছাঁটাই করতে হয় যাতে এটি সুশৃঙ্খল থাকে।

আর পড়ুন: পুদিনা পাতার বীজ 

মানিপ্লান্ট গাছের যত্নের নিয়মাবলী

যত্ন ছাড়া মানিপ্লান্ট গাছ ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় না। সঠিক যত্নের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি।

  • পানি প্রদান: মানিপ্লান্টের জন্য সঠিক পরিমাণে পানি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পচে যেতে পারে আর কম পানি দিলে গাছ শুকিয়ে যেতে পারে। গরমের দিনে প্রতি দুই-তিন দিন অন্তর পানি দেওয়া উচিত আর শীতের সময় সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট।
  • আলো এবং তাপমাত্রা: এই গাছটি সরাসরি সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। তবে এটি পরোক্ষ আলোতে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। ঘরের জানালার পাশে বা বারান্দার ছায়াযুক্ত স্থানে এটি রাখতে হবে। তাপমাত্রা ১৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মানিপ্লান্ট সঠিকভাবে বেড়ে ওঠে।
  • সার প্রয়োগ: মাটিতে মানিপ্লান্ট লাগানো হলে প্রতি মাসে একবার জৈব সার দেওয়া উচিত। যারা পানিতে গাছ রাখেন তারা তরল সার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সার দেওয়ার পর পানি বা মাটি পরিষ্কার রাখা জরুরি যাতে এটি শিকড়ের ক্ষতি না করে।
  • ডাল ছাঁটাই: ডাল ছাঁটাই মানিপ্লান্ট গাছের একটি প্রয়োজনীয় যত্ন। এটি গাছের সৌন্দর্য বজায় রাখে এবং নতুন ডাল গজাতে সাহায্য করে।

মানিপ্লান্ট গাছের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

যত্ন নেওয়া সত্ত্বেও মানিপ্লান্ট গাছে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো দ্রুত শনাক্ত করে প্রতিকার নিলে গাছটি সুস্থ হয়ে ওঠে।

  • পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া: পাতা হলুদ হয়ে যাওয়া মানে গাছটি হয় অতিরিক্ত পানি পাচ্ছে অথবা আলো কম পাচ্ছে। এর সমাধান হিসেবে পানি দেওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং গাছটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো পৌঁছায়।
  • শিকড় পচে যাওয়া: শিকড় পচে যাওয়ার প্রধান কারণ অতিরিক্ত পানি। এই সমস্যা দেখা দিলে মাটি পরিবর্তন করতে হবে এবং পানি দেওয়া কমাতে হবে।
  • কীটপতঙ্গ আক্রমণ: কখনো কখনো মানিপ্লান্টে কীটপতঙ্গ যেমন স্পাইডার মাইট এবং মিলিবাগ দেখা যায়। এর সমাধানে গাছে নিম তেল বা কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • গাছের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া: গাছের বৃদ্ধি থেমে যাওয়া মানে এটি যথেষ্ট পুষ্টি পাচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে জৈব সার ব্যবহার করে গাছের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হবে।

এই সমস্যাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে গাছের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।

মানিপ্লান্ট গাছ

মানিপ্লান্ট গাছের বাস্তুবিদ্যা ও ফেং শুই অনুযায়ী গুরুত্ব

মানিপ্লান্ট গাছের বাস্তুবিদ্যা ও ফেং শুই-তে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ফেং শুই অনুসারে এই গাছ ধন-সম্পদ, ইতিবাচক শক্তি এবং শান্তির প্রতীক। ঘরের সঠিক স্থানে এই গাছ রাখলে এটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে এবং জীবনে সাফল্য আনে।

ফেং শুই নির্দেশনা অনুযায়ী:

  • মানিপ্লান্ট গাছ দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাখলে এটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
  • অফিস বা দোকানের প্রবেশদ্বারের কাছে রাখলে এটি সাফল্য এবং ব্যবসায়িক উন্নতি ঘটায়।
  • বেডরুমে রাখলে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় এবং সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাস্তুবিদ্যা অনুযায়ী:

  • বাড়ির ভেতরে গাছটি নেতিবাচক শক্তি শোষণ করে এবং পরিবেশকে ইতিবাচক রাখে।
  • গাছটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে এটি পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস পায় কারণ এটি পরিবেশে ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • মানিপ্লান্ট গাছের এই প্রতীকী গুরুত্বের কারণে এটি ঘরে এবং অফিসে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

মানিপ্লান্ট গাছের উপকারিতা – মানসিক ও শারীরিক প্রভাব

মানিপ্লান্ট গাছ কেবল পরিবেশ নয় মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মানসিক স্বাস্থ্য:

  • এই গাছটি দেখতে সুন্দর এবং প্রশান্তিকর। এর সবুজ রঙ স্ট্রেস কমায় এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে।
  • যারা ঘরে বা অফিসে মানিপ্লান্ট রাখেন তারা বেশি মনোযোগী এবং সৃজনশীল হতে পারেন।

শারীরিক স্বাস্থ্য:

  • NASA-এর গবেষণা অনুযায়ী মানিপ্লান্ট বাতাস থেকে বিষাক্ত টক্সিন শোষণ করে এবং ঘরে তাজা বাতাস সরবরাহ করে।
  • এটি ঘরের আর্দ্রতা বাড়িয়ে সর্দি-কাশি এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
  • মানিপ্লান্টের এই উপকারিতা এটিকে কেবল একটি শোভাময় উদ্ভিদ নয় বরং একটি স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত করেছে।

মানিপ্লান্ট গাছ কেনার সময় করণীয়

মানিপ্লান্ট গাছ কেনার সময় কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি যাতে গাছটি সুস্থ এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

গাছের অবস্থা পরীক্ষা করুন:

  • পাতাগুলি সতেজ এবং সবুজ কিনা তা যাচাই করুন। হলুদ বা মলিন পাতা থাকলে সেই গাছটি না কেনাই ভালো।
  • শিকড়ের অবস্থা পরীক্ষা করুন। যদি শিকড় পচা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে সেই গাছটি পরিত্যাগ করুন।

নার্সারি বা দোকান নির্বাচন:

  • বিশ্বাসযোগ্য নার্সারি থেকে গাছ কিনুন যেখানে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হয়।
  • নার্সারিতে গাছের দাম তুলনা করে কেনা উচিত। সাধারণত মানিপ্লান্টের দাম ২০০-৫০০ টাকার মধ্যে থাকে।

গাছের আকার ও ধরন:

  • আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট টবের মানিপ্লান্ট কিনতে পারেন। বড় গাছের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
  • পানিতে মানিপ্লান্ট লাগানোর পরিকল্পনা থাকলে লতাগুলি দীর্ঘ এবং সুস্থ কিনা তা নিশ্চিত করুন।
  • মানিপ্লান্ট কেনার সময় এই বিষয়গুলো মনে রাখলে ভালো মানের এবং স্বাস্থ্যকর গাছ কেনা সম্ভব।

মানিপ্লান্ট গাছের পরিবেশগত ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মানিপ্লান্ট গাছ কেবল ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এমন উদ্ভিদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান।

  • বায়ু শুদ্ধকরণ: মানিপ্লান্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং বাতাসে অক্সিজেন যোগ করে। এটি একটি প্রাকৃতিক এয়ার পিউরিফায়ার হিসেবে কাজ করে।
  • পরিবেশের উন্নতি: এটি ঘরের ভেতরে পরিবেশকে আর্দ্র রাখে যা ত্বক এবং শ্বাসযন্ত্রের জন্য ভালো। এটি বাড়ি বা অফিসে একটি আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।
  • ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: মানিপ্লান্টের সহজ রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবেশগত উপকারিতার কারণে এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এটি শহুরে জীবনে সবুজায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে।

আর পড়ুন: টবে চারা গাছ লাগানোর সঠিক পদ্ধতি 

উপসংহার – মানিপ্লান্ট গাছ

মানিপ্লান্ট গাছ শুধু একটি গৃহসজ্জার উপাদান নয় এটি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পরিবেশকে শুদ্ধ করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। ফেং শুই ও বাস্তুবিদ্যা অনুসারে মানিপ্লান্ট ধন-সম্পদ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক। সঠিক স্থানে এবং যত্নের মাধ্যমে এটি আপনার ঘর বা অফিসে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

আপনি যদি একটি সহজ রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং বহুমুখী উপকারী গাছ খুঁজে থাকেন তবে মানিপ্লান্ট হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। সঠিকভাবে গাছটি লালন-পালন করুন এবং এর সৌন্দর্য ও উপকারিতা উপভোগ করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *