চিয়া সিড গাছ একটি সুপরিচিত এবং স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Salvia hispanica যা মিন্ট পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি মূলত মেক্সিকো এবং গ্যুয়াতেমালার আদিবাসী উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত ছিল এবং ঐ অঞ্চলের মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান ছিল। বর্তমানে এটি সারা বিশ্বে বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এই উদ্ভিদটি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে ভালোভাবে জন্মে এবং এর বীজ, অর্থাৎ চিয়া সিড, একটি উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে চিয়া সিড গাছ নতুন হলেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন শহরবাসীর মধ্যে এর বীজের চাহিদা অনেক বেশি।
আর পড়ুন: কেওড়া গাছ
চিয়া সিড গাছ সহজে চাষযোগ্য হওয়ায় বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে এটি একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। এ গাছ চাষের মাধ্যমে কৃষকরা লাভজনক ফসল পেতে পারেন এবং দেশের পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
চিয়া সিড গাছের ভৌত বৈশিষ্ট্য
চিয়া সিড গাছ দেখতে অনেকটা তুলসী গাছের মতো হলেও এটি তুলনামূলকভাবে লম্বা এবং পাতলা আকৃতির হয়। এই গাছ সাধারণত ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা পর্যন্ত বাড়ে। এর পাতা ডিম্বাকৃতি এবং হালকা সবুজ রঙের হয়। পাতাগুলো নরম ও কিছুটা লোমযুক্ত। গাছটির কান্ড শক্ত এবং ছড়ানো ডালপালা বিশিষ্ট।
চিয়া সিড গাছের ফুল সাধারণত বেগুনি বা হালকা নীল রঙের হয় এবং এগুলো ক্লাস্টারে জন্মে থাকে। ফুল ফোটার পর ধীরে ধীরে বীজের জন্ম হয় যা ছোট, ডিম্বাকৃতি এবং সাধারণত ধূসর, কালো অথবা সাদা রঙের হয়ে থাকে।
প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করা যায়। তবে ভালো যত্ন নিলে উৎপাদন আরও বেশি হতে পারে। এই গাছ সাধারণত ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে এবং বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
চিয়া সিড গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি তাপ সহনশীল এবং অনেকটা খরাপ্রবণ এলাকাতেও ভালোভাবে জন্মাতে পারে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর সফল চাষ সম্ভব।
চিয়া সিড গাছের পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড বর্তমানে “সুপার ফুড” হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন। ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় ৪৮৬ ক্যালোরি, ৩৪ গ্রাম ফাইবার এবং ১৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাট রাখে বলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল অপসারণে সাহায্য করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
চিয়া সিড ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় মজবুত করে। ফলে চিয়া সিড প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পুষ্টিগুণসম্পন্ন উপাদান হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশে চিয়া সিড গাছের চাষাবাদ
বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া চিয়া সিড গাছের চাষের জন্য উপযুক্ত। যদিও এই গাছ মূলত দক্ষিণ আমেরিকার, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে এর চাষ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী এবং ঝিনাইদহ অঞ্চলে কৃষকেরা এর চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন।
বাংলাদেশে এখনও বাণিজ্যিকভাবে এই গাছের চাষ ব্যাপকভাবে শুরু হয়নি, তবে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ এই গাছের ওপর গবেষণা চালাচ্ছে এবং ফলাফল আশাজনক। চিয়া সিড গাছ খরা সহিষ্ণু হওয়ায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো এলাকাগুলোতে এর চাষ ভালো ফল দিতে পারে।
দেশে চিয়া সিডের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে থাকায় এটি কৃষকের জন্য লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাজারে চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাষ লাভজনক হয়ে উঠছে।
চিয়া সিড গাছ চাষের পদ্ধতি
চিয়া সিড চাষে প্রথমেই জমি প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জমি আগাছামুক্ত করতে হবে এবং ভালোভাবে চাষ দিতে হবে। এ গাছ দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। pH ৬ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হলে চাষের জন্য উপযুক্ত।
চাষের উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে নভেম্বর। এই সময়ে জমি প্রস্তুত করে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫ থেকে ৮ কেজি বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের সময় ৩০ সেন্টিমিটার পরপর সারি তৈরি করা উচিত এবং সারিতে ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বপন করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা চিয়া সিড চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বপনের পরে হালকা সেচ প্রয়োজন হয় এবং পরে প্রতি ১৫ দিনে একবার করে সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চিয়া সিড গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না, তাই জমিতে পানি জমে থাকলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
চাষের সময় সাধারণত অতিরিক্ত সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না তবে প্রয়োজনে কিছু জৈব সার যেমন গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। পোকামাকড় ও রোগবালাই সাধারণত কম হলেও প্রয়োজনে প্রাকৃতিক কীটনাশক বা বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল ব্যবহার করা যেতে পারে।
চিয়া সিড গাছ সাধারণত ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়। ফুল আসার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। বীজ সংগ্রহের সময় গাছ সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে সেটিকে কেটে শুকিয়ে বীজ আলাদা করতে হয়।
চিয়া সিড সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
চিয়া সিড গাছ ফুল ফোটার প্রায় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। যখন গাছের পাতা ও ডালপালা হলদে হয়ে যায় এবং ফুলের অংশ শুকিয়ে যায় তখন বীজ সংগ্রহের সময় হয়। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে গাছ কাটার জন্য উপযোগী হয়।
গাছ কাটার পর তা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। শুকানোর পর গাছ ঘষে ঘষে অথবা মেশিনের সাহায্যে বীজ আলাদা করা হয়। তারপর চালুনির মাধ্যমে অবশিষ্ট অংশ আলাদা করে শুধু বীজ আলাদা করে সংগ্রহ করা যায়।
বীজ সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই শুকনো ও ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হবে। এয়ারটাইট পাত্রে সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে। বীজ সংরক্ষণের সময় আশেপাশে কোনো আর্দ্রতা যেন না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সিলিকা জেল ব্যবহার করা যায়।
চিয়া সিডের ব্যবহার ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
চিয়া সিড বহুবিধ খাদ্য ও স্বাস্থ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হলো পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে দিলে এটি জেলি ধরনের আকার ধারণ করে এবং সহজে হজমযোগ্য হয়। এটি স্মুদি, স্যালাড, ওটস, দই, জুস এমনকি রুটিতেও ব্যবহার করা যায়।
চিয়া সিড থেকে তৈলও নিষ্কাশন করা যায় যা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এই তেল ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়। অনেক কসমেটিক কোম্পানি চিয়া সিড অয়েল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার পণ্য তৈরি করে থাকে।
বিশ্বব্যাপী হেলথ বার, হাই ফাইবার বিস্কুট, পুষ্টিকর পানীয়, এবং গ্র্যানোলা পণ্যে চিয়া সিড ব্যবহার করা হয়। দেশের বিভিন্ন হেলথ কেয়ার ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে চিয়া সিড থেকে তৈরি পণ্য বাজারজাত করা শুরু করেছে।
আর পড়ুন: পাতাবাহার গাছ
চিয়া সিড চাষের অর্থনৈতিক দিক
চিয়া সিড চাষ বাংলাদেশের কৃষকের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। এক হেক্টর জমিতে চিয়া সিড চাষে গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি চিয়া সিডের দাম ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে, যা তুলনামূলকভাবে অনেক লাভজনক।
ফলনের ওপর ভিত্তি করে এক হেক্টরে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার মতো বিক্রয়মূল্য অর্জন করা যায়। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় লাভের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে যারা সীমিত জমিতে উচ্চমূল্যের ফসল চাষ করতে চান তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ।
স্থানীয় চাহিদা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারেও চিয়া সিডের চাহিদা খুব বেশি। ভারত, চীন, আমেরিকা, এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে চিয়া সিড একটি চাহিদাসম্পন্ন পণ্য। ফলে এটি রপ্তানি করার সুযোগও রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষক সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় রপ্তানি খাত হয়ে উঠতে পারে।
চিয়া সিড চাষে চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
বাংলাদেশে চিয়া সিড চাষ এখনও নতুন, তাই কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। প্রথমত, বীজ সহজলভ্য নয় এবং বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দ্বিতীয়ত, কৃষকদের অভিজ্ঞতার অভাব এবং চাষপদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
আরও একটি সমস্যা হলো আবহাওয়া। অতিরিক্ত বৃষ্টি বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বীজ পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া গাছের রোগবালাই ও পোকামাকড় সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবও চাষে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত দেশের মাটি ও আবহাওয়ার উপযোগী জাত উদ্ভাবন করা। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারি বীজ বিতরণ কর্মসূচি, এবং চাষের জন্য সহজ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করলে এর সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।
চিয়া সিড চাষে সফলতার গল্প
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সীমিত পর্যায়ে হলেও কিছু কৃষক সফলভাবে চিয়া সিড চাষ করেছেন। চুয়াডাঙ্গার এক কৃষক প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ শতক জমিতে চাষ করে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মুনাফা করেছেন। তাঁর মতে, খুব বেশি যত্ন না নিয়েও চিয়া সিড গাছ ভালো ফলন দেয়।
রাজশাহীর আরেক কৃষক বলেন, তিনি ইউটিউব দেখে চাষ পদ্ধতি শিখেছেন এবং চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি আশেপাশের কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করছেন এবং এই চাষে আগ্রহী করে তুলছেন।
এছাড়া ভারতের রাজস্থান ও গুজরাটে চিয়া সিড চাষ অনেক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে চলছে। সেখানে কৃষকেরা প্রতি হেক্টরে ৪০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করছেন। বাংলাদেশের কৃষকরাও চাইলে এই সাফল্য পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
সরকারের ভূমিকা ও সহায়তা
চিয়া সিড চাষের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সরকারি সহযোগিতা অপরিহার্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে তবে এখনো বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হয়নি।
সরকারি নীতিমালার আওতায় চিয়া সিডকে বিশেষ ফসল হিসেবে স্বীকৃতি দিলে কৃষকরা অনুপ্রাণিত হবেন। চাষের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন, এবং বাজার সংযোগে সহায়তা দেওয়া হলে এটি একটি লাভজনক কৃষি খাতে রূপ নিতে পারে।
এছাড়া কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে চাষিদের কাছে পরামর্শ ও প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া দরকার। এ খাতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
চিয়া সিড চাষে পরিবেশগত প্রভাব
চিয়া সিড গাছ একটি পরিবেশবান্ধব ফসল হিসেবে পরিচিত। এটি তুলনামূলকভাবে কম পানি ও সার ব্যবহার করে ফলে পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব কম পড়ে। এছাড়া এটি মাটির গঠন ও উর্বরতা রক্ষা করে এবং অন্য ফসলের চাষের জন্য জমিকে প্রস্তুত রাখতে সাহায্য করে।
এই গাছ ক্ষয়প্রবণ জমিতে চাষ করা যায় বলে ভূমিক্ষয় রোধে সহায়ক। গাছের ডালপালা ও পাতা জমিতে পচে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে মাটির জৈবগুণ উন্নত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে কৃষিজমির স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
চিয়া সিড গাছের ফুল মৌমাছিদের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় এটি পরাগায়নে সহায়তা করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে। এই দিকগুলো বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
ভবিষ্যতে চাষের সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চিয়া সিডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কৃষকের জন্য এটি একটি রপ্তানিযোগ্য অর্থকরী ফসলে পরিণত হতে পারে।
বর্তমানে চিয়া সিড মূলত আমদানি নির্ভর হলেও স্থানীয় উৎপাদন শুরু হলে তা দেশের বাজারে দাম কমাতে সহায়তা করবে এবং কৃষকদের নতুন আয়ের উৎস তৈরি করবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা যদি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করে তবে তা আরও লাভজনক হবে।
নতুন প্রযুক্তি যেমন ড্রিপ ইরিগেশন, জৈব সার ব্যবহার, এবং আধুনিক রূপান্তর পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ জন্য সরকারি পরিকল্পনা, কৃষি উদ্যোগ ও বাজার সম্প্রসারণ একসাথে কাজ করলে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য হয়ে উঠতে পারে।
আর পড়ুন: সূর্যমুখী বীজ
উপসংহার
বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনতে এবং কৃষকদের আয়ের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে চিয়া সিড গাছ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বীজ শুধু দেশে নয়, বিশ্বজুড়েই অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন। সঠিক চাষ পদ্ধতি ও সরকারি সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের কৃষকরা অল্প জমিতে চিয়া সিড চাষ করে উল্লেখযোগ্য মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
চিয়া সিড গাছ দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি এর উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাও ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফল চাষিদের গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং প্রমাণ করে, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এই ফসলের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এখনই সময় চিয়া সিড চাষের ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া, গবেষণা সম্প্রসারণ করা এবং কৃষকদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে এ খাতকে জাতীয় অর্থনীতির সহায়ক খাতে রূপান্তর করা।
আপনি যদি নতুন ও লাভজনক কৃষি উদ্যোগ খুঁজে থাকেন, তাহলে আজই চিয়া সিড গাছ চাষের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন। প্রতিবেশী কৃষকদের সঙ্গে শেয়ার করুন এই তথ্য, কমেন্টে জানান আপনার মতামত, আর আরও এমন কৃষি বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে চোখ রাখুন আমাদের ব্লগে।